"হিজাব" ফ্রিডম অফ চয়েস নাকি ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন

১.সবার ব্যক্তিগত ফ্রিডম অফ চয়েস আছে।

হিজাব পরাও ফ্রিডম অফ চয়েস।
সুতরাং সবার হিজাব পরার অধিকার আছে।
একই ধারায় বলা যায়, সবার ব্যক্তিগত ফ্রিডম অফ চয়েস আছে।
মদ খাওয়া ফ্রিডম অফ চয়েস।
সুতরাং সবার মদ খাবার অধিকার আছে।
দেখুন, হিজাব পরার জন্য আপনাকে মদের বৈধতা দিতে হচ্ছে।
আপনি বলতে পারেন, মদে সামাজিক ক্ষতি, হিজাব ক্ষতিহীন।
বাস্তবতা হচ্ছে, পশ্চিমা সমাজের অনেকে মনে করে, মদ নয়, হিজাব বরং পুরুষতন্ত্রের ধারাবাহিকতা।
এই প্রক্রিয়াকে সেকুলারাইজেশন প্রসেস বলে আখ্যা দেওয়া হয়। সমস্যাটা কোথায় ও কীভাবে ঘটলো, এটা বুঝতে হবে।
যদি বলি, আপনি যে আমার মোবাইল চুরি করেছেন, সেটা আজকে না দিলে আপনাকে মাইর দেওয়া হবে। মোবাইল আজকে দিবেন নাকি কালকে?
খেয়াল করুন, এখানে আজকে-কালকের অপশন দিয়ে আপনাকে অলরেডি বিপদে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আপনাকে মাইর থেকে বাঁচতে চুরির অপবাদ মেনে নিতে হচ্ছে।
ঠিক একইভাবে হিজাব পরার সুযোগ পেতে আপনাকে মদ খাবার অনুমোদন দিতে হচ্ছে। আপনি তাদের দেওয়া অপশনেই ঘুরপাক খাচ্ছেন।
আদতে তাদের এই প্রশ্ন-পরীক্ষাটাই ভুল।
আপনাকে বলতে হবে, আপনি চুরি করেননি। আপনাকে বলতে হবে, আপনি ফ্রিডম অফ চয়েসে বিশ্বাস করেন না।


আপনি ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন ও সোসাইটিতে বিশ্বাস করেন। অর্থাৎ মুসলমানরা হিজাব পরার অধিকার পাবে, পরিবার ও সমাজ হিজাব পরতে বাধ্যও করতে পারবে, অন্তত চাপ দিতে পারবে।
এতে একইভাবে আপনি দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলেন। একদিকে আপনি হিজাব পরার অধিকার পেলেন, কোন মুসলিম নারী হিজাব না পরলে পরতে বলতে পারবেন, তার পরিবার-প্রতিষ্ঠান তাকে বাঁধ্য করতে পারবে।
এতকিছুর পরে হিজাব না পরলে সেটা 'গুনাহ', চয়েস না।
পার্সোনাল ফ্রিডম ও সোশ্যাল ফ্রিডমে পার্থক্য করতে হবে।
ব্যক্তিগত অধিকারের ধারণাটা আধুনিক। আধুনিক কালের আগে সবাই সমাজবদ্ধ হয়ে থাকতো।
পরিবারচ্যুতি-সমাজচ্যুতির ঘটনাগুলো আমরা জানি, এভাবে প্রতিটা পরিবার ও সমাজ পোশাক-পানীয়ের বৈধতা নির্ধারণ করে দিত।
এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারতো না। মুসলিম নারী অবশ্যই হিজাব পরবে, পরতে না দিলে এলাকাবাসী ও সমাজ প্রতিবাদ করবে, অধিকার নিশ্চিত করবে। 'ব্যক্তি অধিকারের' কোন প্রয়োজন নেই।
হিন্দুরা কী পরবে, সেটা নিয়ে মুসলমানরা মাথা ঘামাবে না। মুসলমানদেরটাও হিন্দুদের এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয়।
এখন রাষ্ট্র পরিবার-সমাজের জায়গাটা দখল করতে চাচ্ছে। আপনার জন্য বরাদ্দ করছে 'ফ্রিডম অফ চয়েস'। আপনি হিজাব পরার জন্য সেই অপশন চুজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাষ্ট্র আসলে আপনাকে 'সেকুলারাইজাইশেনের' দাসখত লেখে নিচ্ছে, কেড়ে নিচ্ছে 'সামাজিক ও ধর্মীয় ফ্রিডম'।
ব্যক্তিগত ও সামাজিক অধিকারের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
ব্যক্তিগত অধিকারের কথা বললে আপনার বোন হিজাব ছেড়েও দিতে পারে।
আপনি আর তাকে হিজাব পরতে বলতে পারবেন না। আপনার ভাই মদ খেতে চাইলে তাকে বাঁধা দিতে পারবেন না। কেননা এসবই ফ্রিডম অফ চয়েসের অংশ।
এর পরিণতি হতে পারে অত্যন্ত ভয়াবহ।
পশ্চিমা কিছু দেশে সন্তানকে ধর্মের কথা বলা যায় না, ধর্ম মানতে বললে পুলিশ ডেকে আনা যায়।
বাবা যে ফ্রিডমের কথা বলে নামাজ পড়ার অধিকার পায়, সন্তান সেই একই অধিকারের বলে বেপর্দা থাকার অধিকার লাভ করে। ডেকে আনতে পারে পুলিশ।
আপনাকে ফ্রিডম-ফ্যাসিবাদের বাইনারি গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অধিকার নাকি ফ্যাসিবাদ? মোদির থেকে বাঁচতে চাইলে আপনাকে শশি থারুরকে মেনে নিতে হবে। নামাজ পড়তে চাইলে সমর্থন করতে হবে এলজিবিটিকেও।
আগেই বললাম, এই বাইনারিটা তারাই গছিয়ে দিয়েছে। এবং এতে তাদেরই লাভ। মোদি, শশি থরুর কারো সাথেই পশ্চিমাদের সমস্যা নাই। তারা বিশ্বকে এমন কিছু ইকুয়েশন-সমীকরণের মধ্যে নিয়ে এসেছে, যাতে সবকিছুতেই তারা লাভটা বের করে নিতে পারে।
পশ্চিমা জুলুমতন্ত্র ভাঙার জন্য সবার আগে আপনাকে প্রচলিত বাইনারি-ইকুয়েশন ভাঙতে হবে।
কীভাবে ভাঙবেন?
সবার ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন আছে। হিজাবটাও ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন, আপনি হিজাব পরার অধিকার পাবেন, সন্তানকে হিজাব পরতে বলতে পারবেন, হিজাব না পরলে সেটা গুনাহের বিষয় হবে।
সবার ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন আছে। মদ খাওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ, মুসলমানরা মদ খেতে পারবে না।
------------------------------------
( ইফতিখার জামিল ভাই থেকে ঈষৎ সম্পাদিত)
- Shorif Abu Hayat


২. স্বাধীনতা ও অধিকার এবং ছাড় ও সুযোগ। এই শব্দগুলো আমাদেরকে একটু গভীর থেকে বুঝতে হবে।
স্বাধীনতা এমন জিনিসকে বলা হয়, যা করার ক্ষমতার পাশাপাশি অনুমোদন দেওয়া হয় এবং তার পেছনে কোন পানিশমেন্ট থাকে না। আর অধিকারও এমন বিষয়কে বলা হয়, যা করার পেছনে কোন পানিশমেন্ট ও ধমকি থাকবে না। কিন্তু ছাড় কিংবা সুযোগ এর বিপরীত। ছাড়ের পেছনে ধমকি ও পানিশমেন্ট থাকবে। আবার এর পেছনে নিঃশর্ত অনুমোদন বা অনুমতিও থাকবে না।
এবার শরীয়তের যেকোনো বিধান এবং দ্বীনি স্বাধীনতার ব্যাপারটাকে উপরোক্ত ধারণা দিয়ে বিচার করুন। তখন আমরা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে এই বিষয়গুলোর অবস্থান বুঝতে পারব। আল্লাহ কাউকে ইসলাম ভিন্ন অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণের অধিকার কিংবা স্বাধীনতা দেননি। আবার কোন মুসলিমকেও শরীয়তের কোন বিধান অতিক্রম করার অধিকার, অনুমতি ও স্বাধীনতা কোনোটাই দেননি। দিয়েছেন পার্থিব ক্ষমতা ও ছাড়। সুতরাং নৈতিকভাবে ও আখিরাতের দৃষ্টিতে কেউ দ্বীনে ইসলামকে কিংবা ইসলামী শরীয়তের কোন বিধানকে ছাড়ার অধিকার ও স্বাধীনতা রাখে না। আর পশ্চিমা অথরিটি যখন কোন কিছুকে স্বাধীনতা ও অধিকার হিসেবে দাবি করে, তারা এই দৃষ্টিকোণ থেকেই করে।
তবে ইসলামী রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এসে পার্থিব আচরণের বিচারে এখানে কিছু তারতম্য ঘটে। ইসলামী শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতাকে (সীমাবদ্ধতা সহ, মুসলিমদের সম অনুপাতে নয়) স্বীকৃতি দেয়। যে কেউ তার ধর্ম কিছু শর্তাবলীর সাথে পালন করতে পারবে। এর পেছনে পার্থিব কোন পানিশমেন্ট থাকবে না।
কিন্তু মুসলিমদের জন্য ইসলামী শরীয়াহর নির্দেশিত কোনো বিষয় গ্রহণ কিংবা নিষিদ্ধ কোন বিষয়কে বর্জনের স্বাধীনতা নেই। সেটা নৈতিক ও প্রশাসনিক, কোনো জায়গা থেকেই নেই। ফলে কোনো মুসলিমের অধিকার ও স্বাধীনতা নেই শরীয়তে ইসলামকে বর্জন করার। তার যেটা আছে, সেটা হল ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও আল্লাহপ্রদত্ত ছাড়। এবং মুসলিমের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা প্রশাসনিক ও নৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ ইসলামী শরীয়াহকে বর্জনের ক্ষেত্রে তার জন্য যেমন পরকালীন পানিশমেন্ট ও ধমকির ঘোষণা আছে, তেমনি প্রশাসনিক ধমকি ও পানিশমেন্টও থাকে। একইভাবে শরীয়াহ বর্জনের পক্ষে তার যেমন পরকালীন অনুমোদন নেই, তেমনি নেই প্রশাসনিক অনুমতিও।
এবার আপনি ভাল করে লক্ষ্য করে দেখুন, আমরা যদি লিবারেল ফ্রিডম অফ চয়েজের দৃষ্টিতে ইসলামী বিধানকে বিচার করতে যাই, তা হলে আমরা ইসলামী বিধানের প্রকৃতিকেই নষ্ট করে দেব। হিজাবের কথাই ধরুন, এটাকে যখন আমরা কেবল ফ্রিডম অফ চয়েজ হিসেবে মুসলিমদের মাঝে প্রচার করব, তখন এই বিধান তার মূলভাবটাই হারিয়ে ফেলবে। কারণ মুসলিম নারীর জন্য হিজাবের বিধান স্বাধীনতা নয়, বরং আল্লাহর দাসত্ব। এই বিধান পরিত্যাগ করলে সে প্রশাসনিক এবং পরকালীন উভয় দৃষ্টিতেই শাস্তি ও ধমকিযোগ্য হবে।
সুতরাং হিজাবকে ফ্রিডম অফ চয়েজের ভিত্তিতে প্রটেস্ট করার দরকার হয় না। এটি আল্লাহর নির্দেশ ও দ্বীনি ইবাদাত। সেকুলার রাষ্ট্র হিসেবেও আমার দ্বীন পালনের ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষিত থাকার কথা। এসব পরিস্থিতিতে মুসলিমদের ভেতরও ফ্রিডম অফ চয়েজের দর্শনকে ব্যাপক ও জনপ্রিয় করা কোনভাবেই কল্যানকর নয়। বরং এটা সমাজে একদিকে মুসলিমদের ভেতর আল্লাহর দাসত্বের অনুভূতিকে দুর্বল করবে এবং আল্লাহর দাসত্ব পরিত্যাগের ব্যাপারে শিথিলতা তৈরি করবে। অন্যদিকে ফ্রিডম অফ চয়েজের মতো দ্বীনবিরোধী দর্শনকে বৈধ ও পরম করে তুলবে এবং এই দর্শনের যুক্তিতে সমাজে মদ, যিনা, অশ্লীলতাসহ সব কিছুর প্রচলনকে বৈধ ও সমর্থনযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। বাস্তবে এটাই হচ্ছে। ফ্রিডম অফ চয়েজের বেড়াজালে নৈতিকতার কাঠামোই পালটে যাচ্ছে। মানুষকে এই দর্শন করে তুলছে চরম অবাধ্য ও বিশৃঙ্খল।
ফ্রিডম অফ চয়েজ আল্লাহর দাসত্বের সাথে সাংঘর্ষিক, যেই উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা পুরো মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তাই যে দর্শন আল্লাহর দাসত্বকেই প্রত্যাখ্যান করে, সে দর্শন নিশ্চিতভাবেই কুফুর এবং জুলুম।
- Iftekhar Sifat
Next Post Previous Post