বাংলা ইসলামিক ছোট গল্প অনলাইনেই পড়তে পারবেন। সাথে বই এর পিডিএফ ডাউনলোড
বাংলা ইসলামিক ছোট গল্প বুশরাঃ এক সাহসী নারীর গল্প
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন এ মাস্টার্স শেষ করার পর ২০১২ সালে পাড়ি জমালাম কেমব্রিজ, ইংল্যান্ডে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরলাম ২০১৭ সালে। বাবার কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নিয়ে দেশে প্রতিষ্ঠা করলাম কেমিস্টা রিসার্চ সেন্টার। কেমিস্টা রিসার্চ সেন্টার থেকে দুটি গবেষণা সফলভাবে শেষ করেছি।
কেমিস্টা রিসার্চ সেন্টার থেকে লোহা (Fe) এবং অ্যালুমিনিয়াম (Al) এর গুণগত মান উন্নয়ন করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি। আবিষ্কারের পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রফেসর উইলিয়াম ফ্রেডরিক এর মাধ্যমে পেটেন্টও রেজিস্টার করিয়েছি এবং আলবাটো কোম্পানির কাছে লোহার গুনগত মান উন্নয়নের আবিষ্কার বিক্রি করে ১৬ লক্ষ পাউন্ড পেয়েছি। এর ফলে রিসার্চ সেন্টারে বাবার দেওয়া ২ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। দুনিয়াবি সফলতা পাওয়ার পর বাবা মায়ের নজরে পড়লো তাদের মেয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে। তাই বাবা মার ইচ্ছায় বিয়ে করতে সম্মতি দিলাম।
২০১৮ সালের মার্চ মাসে পাত্রপক্ষ দেখতে আসলো। পাত্রের নাম ফয়সাল। তুরস্কের মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর। পাত্রকে দেখে এবং পাত্রের যোগ্যতা সম্পর্কে জেনে মনে মনে বললাম বাবা একদম পারফেক্ট পাত্র এনেছে। লজ্জা ভেঙ্গে সবার সামনে জিজ্ঞেস করে বসলাম তা আপনার পেশা? ফয়সাল বললেন- আমি একজন ব্যবসায়ী। ইনভাটো নামক কম্পিউটার, ইউএসবি পোর্ট, ইউএসবি ক্যাবল ও মোডেম তৈরির প্রতিষ্ঠান আছে আমার। আমি বললাম ধন্যবাদ। তারপর আরও কিছু জিজ্ঞেস করার পর বুঝলাম যে, ফয়সাল একজন আদর্শ মুসলিম। আমি বিয়েতে সম্মতি দিলাম।
২০১৮ সালে ২০ শে মার্চ আমার আর ফয়সালের বিবাহ সম্পন্ন হলো। ফয়সালের সাথে প্রথম বছর বেশ ভালোভাবেই কেটে গেল। ফয়সালের ব্যবসা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। ইনভাটো কোম্পানির প্রযুক্তি পণ্য বাংলাদেশী কর্পারেট হাউসগুলোর সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত পণ্য। আমার রিসার্চ সেন্টারের ব্যস্ততাও বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। ফলে বিয়ের পর কোথাও ঘুরতে যাওয়া সম্ভব হয় নি। ২০১৯ সালের ২৫ শে এপ্রিল ফয়সাল বললো চলো বুশরা হানিমুনে যাওয়া যাক। আমি বললাম কোথায় যাবে হানিমুনে? ফয়সাল বললো সুইজারল্যান্ডে। আমি বললাম বেশ। ফয়সাল বললো ৩০ শে এপ্রিল ফ্লাইট। প্রস্তুতি শুরু করো।
২০১৯ সালের ১ লা মে সুইজারল্যান্ড পৌঁছালাম। সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালা, রাজধানী বের্ন, মেটারহর্ন ঘুরলাম। ৫ ই মে আমি জানতে পারলাম আমি মা হতে চলেছি। ফয়সাল খবরটা শুনে বললো সকল প্রশংসা আল্লাহর। ফয়সাল বললো আল্লাহ যেন, আমাদের একজন মুত্তাকী সন্তান দান করেন। আমি বললাম আমিন। সুইজারল্যান্ডে আরও কয়েকদিন ঘুরলাম। ১০ ই মে আমরা হোটেল থেকে বের হলাম ইন্টারলোকেন যাওয়ার উদ্দেশ্যে হঠাৎই আমাদের কয়েকজন লোক ঘিরে ফেললো।
তারা এক অপরিচিতো ভাষায় একে অপরের সাথে কথা বললো। তারপর আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই ফয়সালকে গুলি করলো। আমার চোখের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আমি হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর ঐ লোকদের একজন বললো - Sir Mission Complete.। কিছুক্ষণ পর তারা আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার গায়ে ইনজেকশন পুশ করে দিলো। আর আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
আমার জ্ঞান ফিরতেই আমি দেখলাম আমি একটি চেয়ারে বসা। আমার হাত পা বাঁধা। আর আমার সামনে বসে আছে কয়েকজন নারী, পুরুষ। তারা আমাকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলো তোমার স্বামীর কোম্পানির পণ্য গোপনভাবে কারা নিতো জানো? আমি বললাম আমি কিছু জানি না। তারা বললো তুমি মিথ্যে বলছো। আমি বললাম আমি মুসলিম। আর কোনো মুসলিম কখনো মিথ্যে বলে না। তারা আমার উত্তর শুনে বেশ অবাক হয়ে গেলো। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম আমি কোথায় এখন? আর আপনারা কারা? তারা বললো আমরা কে সে তোমার না জানলেও চলবে। তাদের মধ্য থেকে এক নারী বললো যেহেতু এই নারী কিছুই জানে না, তাহলে ওর প্রতি দয়া করে আমরা ওকে সীমান্তে ছেড়ে আসতে পারি। তাদের প্রধান বললেন বেশ তাই হোক। তারপর তারা আমাকে সীমান্তে ছেড়ে আসলো। তারা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার সময় আমি তাদের গাড়ির পেছনে দেখতে পেলাম একটি লোগো আর লোগোর নিচে লেখা ছিলো দ্যা ইন্সটিটিউশন অফ ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস (মোসাদ)। তারপর সীমান্তের ওপর পাশে দেখতে পেলাম একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে "Welcome to Jordan"। তারপর -
বুশরা [এক সাহসী নারীর গল্প] পর্ব-০১ লেখাঃ নুসরাত জাহান
বুশরা [এক সাহসী নারীর গল্প] পর্ব-০২ লেখাঃ নুসরাত জাহান
তাদের গাড়ির পিছনে মোসাদ লেখা ছিলো। তার মানে তারা মোসাদের গোয়েন্দা। কিন্তু তারা আমার ফয়সালকে কেন হত্যা করলো? ফয়সাল কাদেরই বা গোপনভাবে প্রযুক্তি পণ্য দিতো? এসব ভাবতে ভাবতে জর্দান সীমান্তে জর্দানের চেকপোস্টের সামনে এসে দাঁড়ালাম। জর্দানের সৈনিকরা আমাকে আরবী কিছু জিজ্ঞেস করলো। আমি কিছু না বুঝায় তারা আমাকে ইংরেজিতে বললো - Show your passport. আমি বললাম - I have no Israeli passport. I am helpless. তারপর জর্দানের সৈনিকরা বললো তারা কিছু ঘুষের বিনিময়ে আমাকে জর্দানে প্রবেশ করতে দেবে। আমি আমার কাফতানের ভিতরের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখলাম কত ডলার আছে আমার কাছে। আমি কাফতানের পকেটে ৬ টা ১০০ ডলারের নোট পেলাম। জর্দানের সৈনিকরা বললো তাদের ২৫০ ডলার দিতে হবে। আমি তাদের ৩০০ ডলার দিয়ে দিলাম। আর বাকী ৫০ ডলার ফেরত না নিয়ে প্রবেশ করলাম জর্দানে। জর্দানে এখন রমজান মাস চলছে। স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকেই ফিলিস্তিনি যারা উদ্বাস্তু হিসেবে এখানে আছে। জর্দান সীমান্ত থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের শহর ইরবিতে পৌঁছালাম। ইরবিতে পৌঁছে ভাবলাম ইফতারের সময় অত্যন্ত নিকটে। তাই রোযার নিয়ত করলাম। যদিও এভাবে সূর্যাস্তের আগে নিয়ত করলে রোযা হবে কী না জানি না। তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোযার নিয়ত করলাম।
ইরবিত বাজারে এক মুসলিম দম্পতি ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছিলো। আমি তাদের কাছে ইংরেজিতে পানি এবং খাবার কিনতে চাইলাম। তারা আমাকে খাবার ও পানি দিলো। আমি তাদের মূল্য হিসেবে ১০০ ডলারের নোট দিলাম। ১০০ ডলারের নোট দেখে তারা কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল। তারপর দোকানদার ছুটে এক জায়গায় গেলেন, তারপর নিয়ে আসলেন ৬৫ জর্দানিয়ান দিনার। তিনি আমাকে বললেন - ডলার এখানে ভাঙ্গানো যায় না, তাই দাম হিসেব করে আমাকে জর্দানিয়ান দিনার দিয়েছেন। আমি বললাম জাযাকাল্লাহ খাইরান, ভাই। তারপর ইফতারের সময় হওয়ার কিছু আগে ঐ দম্পতি তাদের সাথে ইফতার করার দাওয়াত দিলেন। আমি কোন উপায় না দেখে তাদের দাওয়াত কবুল করলাম। ইফতারের সময় ঐ দম্পতি বললো তারা জন্মগতভাবে ফিলিস্তিনি। প্রায় ১০ বছর আগে জর্দানে এসেছিলেন উদ্বাস্তু হিসেবে। তবে এখন তাদের অবস্থা কিছুটা ভালো।
ইরবিত বাজারে তাদের ছোট একটা দোকান আছে। কথায় কথায় আমি তাদের আমার জর্দানে আসার কথা বললাম। তারা শুনে বেশ চমকে গেল। তারপর দোকানদার ভদ্রলোক বললেন আম্মানে তার এক আত্নীয় থাকেন। আমি চাইলে তিনি আমাকে তার আত্মীয়ের সাহায্যে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। দোকানদার আমাকে রাতে তাদের বাড়িতে থাকার অনুমতি দেন। রাতে এশার সালাত আদায় করার সময় ফয়সালের জন্য কান্না করে দোয়া করলাম। পরদিন সকালে দোকানদার ভদ্রলোক ও তার স্ত্রী আম্মান যাবেন। আর দেশে ফিরতে হলে আমাকেও আম্মান যেতে হবে তাই ওদের সাথে গাড়িতে করে জর্দানের রাজধানী আম্মানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।
২ ঘন্টা পর জর্দানের রাজধানী আম্মানে পৌঁছালাম। আম্মানে পৌঁছেই বাবা মাকে ফোন করলাম ফোন বুথ থেকে। বাবা মা শুনে বললো আমি যেন, তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসি। বাবা বললেন আমি একাউন্ট খুলে যেন বাবাকে জানাই। বাবা টাকা পাঠাবে। আমি বললাম ঠিক আছে। শশুর, শাশুড়িকে ফোন করলাম না। তাদের সাথে আমার কথার বলার সাহস ছিলো না। তারপর গেলাম আম্মানের বাংলাদেশ দূতাবাসে। দূতাবাসে গিয়ে সব বললাম। তারা বললো ৫ দিন সময় লাগবে নতুন পাসপোর্ট আসতে। তবে ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা তারা বিকাল নাগাদ করে দিতে পারবে। বিকাল নাগাদ ব্যাংক অফ আম্মানে একাউন্ট খুললাম। তারপর ইফতারের পর কেমিস্টা রিসার্চ সেন্টারের ম্যানেজারকে ফোন করে বললাম আমার নতুন একাউন্টে ৬০০০ ডলার পাঠানোর জন্য। বাবা এবং ম্যানেজার দুজনেই টাকা পাঠালো। বাবা পাঠালো ১০০০০ ডলার এবং ম্যানেজার পাঠালো ৬০০০ ডলার। তারপর আমি পাসপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
৫ দিন পর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নতুন পাসপোর্ট পেলাম। ১৪ ই মে জর্দানের সময় রাত ৮ঃ০০ টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। যথারীতি ১৪ ই মে বিকালে আমি আম্মান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রানী আলিয়া আন্তজার্তিক বিমানবিন্দর (Queen Alia International Airport) এ। এই কয়েকদিন আমি সেই দোকানদারের আত্নীয়ের বাড়িতেই ছিলাম। তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। এমিরেটস এর ফ্লাইট আম্মান থেকে দুবাই তারপর দুবাই হয়ে ঢাকা যাবে। এয়ারপোর্ট এ বসে আমি ভাবছিলাম আমার ও সন্তানের ভবিষৎ কী হবে? তারপর এয়ারপোর্টে ঘোষণা করা হলো এমিরেটস এর যাত্রীরা তাদের বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করুন। আমি বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করার জন্য পা বাড়ালাম। তখন পিছন থেকে কেউ আমাকে ইংরেজিতে বললো - Mrs. Bushra, I have a Ietter of your husband Faisal. তারপর আমি সাথে সাথে ঘুরে দাঁড়ালাম।
[গল্পটি কেমন লাগছে কমেন্টে জানান]
বুশরা [এক সাহসী নারীর গল্প] পর্ব-০৩
লেখাঃ নুসরাত জাহান
তারপর আমি সাথে সাথে ঘুরে তাকালাম। আমি ঘুরে তাকাতেই ভদ্রলোক দ্রুততার সাথে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। তারপর বললেন- Mrs. Bushra, here your husband's letter. আমি ভদ্রলোককে কোন কিছু না বলেই চিঠিটা নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। চিঠিটি বাংলায় লেখা।
চিঠিতে ফয়সাল লিখেছে- প্রিয় বুশরা, আশা করে আল্লাহর রহমতে ভালোই আছো। এই চিঠিটা হয়তো তোমার কাছে পৌঁছাতেও পারে আবার নাও পৌঁছাতে পারে। যদি এই চিঠিটা তোমার হাতে পৌঁছায় তাহলে হয়তো আমি আর পৃথিবীতে জীবিত নেই। আমিও ভাবি নি এরকম কিছু হবে। তবে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন। আমি জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে। আর এই সব প্রশ্নের উত্তর তোমার খয়েরি রংয়ের কাফতানের লুকানো পকেটে থাকা পেনড্রাইভে আছে। যদি কাফতানটি তোমার কাছে না থাকে তাহলে, যে তোমার কাছে আমার চিঠি পৌঁছে দিয়েছে, সে তোমাকে তোমার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর অন্তত দিতে পারবে। সর্বোপরি আল্লাহর ওপর ভরসা করে সাবধানে থেকো। কারণ এখন তোমার জীবনও বিপদের মুখে। আমাদের অনাগত সন্তানের জন্য ভালোবাসা। আমাদের সন্তানকে তুমি অবশ্যই বলবে যে, তার বাবা আল্লাহর মেহমান হয়ে গেছে।
ইতি - তোমার ফয়সাল।
ফয়সালের চিঠিটা পড়ে আমার চোখ ভিজে উঠলো। অনেক অজানাকে জানার কৌতুহল চেপে বসলো আমার ভিতর। আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করলাম, ফয়সালের ব্যাপারে। তিনি বললেন এখানে এ ব্যাপারে উত্তর দেওয়া ঠিক নয়। তিনি বললেন, আপনি আগে আপনার স্বামীর আদেশ পালন করুন। তারপর কিছু জানার থাকলে আমাকে বলবেন। ভদ্রলোক আমাকে তার কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে মুহূর্তেই গায়েব হয়ে গেলেন। আমি আমার যাত্রা বাতিল করে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আসলাম। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে এয়ারপোর্ট এর নিকটবর্তী একটি হোটেলের রুম ভাড়া নিলাম। রুমে প্রবেশ করেই আমার সুটকেসে আমার খয়েরি কাফতান যা পরে আমি জর্দানে প্রবেশ করেছিলাম তা খুঁজতে লাগলাম। অবশেষে পেয়েও গেলাম সেই কাফতান। কাফতানের সব গুলো গোপন পকেটে খোঁজার পর কাঙ্খিত সেই পেনড্রাইভ পেলাম। কিন্তু পেনড্রাইভ ব্যবহার করবো কীভাবে? আমার কাছে তো ল্যাপটপ নেই। অগত্যা ইফতারের পর ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য মুখোশ বেঁধে রওনা হলাম। প্রায় দু ঘন্টা পর ল্যাপটপ কিনে হোটেলে ফিরে আসলাম। আমি ল্যাপটপ ওপেন করে পেনড্রাইভ পোর্টে পেনড্রাইভ ঢুকালাম।
পেনড্রাইভে একটাই ফাইল। সেই ফাইলে ঢুকলাম। সেই ফাইলে একটি ভিডিও ও কয়েকটি পিডিএফ ফাইল আছে। আমি ভিডিও টা ক্লিক করলাম। ভিডিওতে ফয়সাল বলছে- বুশরা, আজ তোমাকে এক অজানা জিনিস সম্পর্কে বলবো। শুরুটা হয়েছিলো মিডেল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণা করার সময়। আমার লক্ষ্য ছিলো এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করা যা বিভিন্ন গোপন ওয়েভসাইট ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি করতে সক্ষম হবে। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান কৃর্তপক্ষ যেন কিছু না জানতে পারে। প্রায় ১ মাস কাজ করার পর নতুন কোডিং এর একটি সফটওয়্যার বানাতে সক্ষম হলাম। সফটওয়্যার পরীক্ষা করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েভসাইটের প্রয়োজন ছিলো। আমি আমার তৈরি করা সফটওয়্যার দিয়ে একটি অদ্ভুত ওয়েভসাইট এর খোঁজ পেলাম। যা একটি অ্যাপের। আর এই অ্যাপের ভাষা ছিলো আরবী। চিন্তা করলাম এই ওয়েভসাইট এর তথ্যচুরির। যেই চিন্তা সেই কাজ। দু ঘন্টার ভিতর ঐ ওয়েভসাইট এর সমস্ত আমি আমার ল্যাপটপে নিয়ে আসতে সক্ষম হই। ঐ ওয়েভসাইটের সমস্ত তথ্য পরীক্ষা করলাম। সমস্ত তথ্য পরীক্ষা করার পর আমার মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়। কারণ ঐ অ্যাপটি নির্মাণ করেছে মোসাদ। আর এই অ্যাপের মাধ্যমে মোসাদের গোয়েন্দারা তুরস্কের মিসাইল টেকনোলজি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুরি করা তথ্য শেয়ার করছে। পরদিন সকালে আমি মিডেল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিভাগের প্রধানকে পুরো ঘটনা বললাম। উনি সাথে সাথে তুর্কী শিক্ষামন্ত্রীকে ফোন করলেন। তুর্কী শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কথা বলা শেষে বললেন, তোমার সংগ্রহ করা তথ্য দিয়ে যাও, ব্যাপারটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় দেখবে। আমি উনার কথা মতো পেনড্রাইভ দিয়ে আসলাম।
এই ঘটনার ১৫ দিন পর তুর্কী গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি এর একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা মিডেল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে আসেন। তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বলেন তোমার অসামান্য আবিষ্কারের জন্য আমরা আল্লাহর সাহায্যে অনেক বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান করুক। আমি বললাম আমিন। এটুকু বলে ভিডিওতে ফয়সাল একটু থামলো। তারপর ফয়সাল আবার বলা শুরু করলো। এমআইটির কর্মকর্তা আমার এই সফটওয়্যারের উন্নয়নে সাহায্য ও যাবতীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেবেন বলেন। এরপর থেকে তুর্কী গোয়েন্দা সংস্থার সাথে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হয়। আমার কোম্পানি ইনভাটোর তৈরি করা বিশেষ কম্পিউটারেই শুধু ঐ সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতো এবং আমার কোম্পানির অধিকাংশ জিনিস তুর্কী গোয়েন্দা সংস্থাই (এমআইটি) কিনতো। ঐ সফটওয়্যার এর মাধ্যমে এমআইটি মোসাদের অনেক ভয়ানক চক্রান্ত ভেস্তে দিতে সক্ষম হয়েছিলো। তারপর তোমার সাথে বিয়ে। বুশরা যদিও আমি অনেকবার তোমাকে এসব বলতে চেয়ে ছিলাম, কিন্তু শুধু তোমাকে চিন্তায় ফেলতে চাই নি। তাই আর বলা হয়ে উঠে নি। তবে আমরা হানিমুনে আসার পর তুর্কী গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ বার্তায় জানায় মোসাদ তথ্যচুরির ব্যপারটি জেনে গেছে এবং মোসাদ একটি কিলিং স্কোয়াডের মাধ্যমে আমাকে হত্যা করবে। যদিও আল্লাহর সিদ্বান্ত ভিন্ন কিছুও হতে পারে।আমি আল্লাহর দেওয়া এই সামর্থ্যের ভিত্তিতে করা প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেছি। জানি না এর পর আল্লাহ আমাকে জীবিত রাখবেন কি না। এই বার্তা পাওয়ার পর আর দেরি না করে এই ভিডিওর মাধ্যমে তোমাকে সব জানিয়ে দিলাম। কারণ আমি চাই না এই পুরো ঘটনা যা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল তা তোমার অজানা থাকুক। কারণ আমি চিনি সেই বুশরাকে যে, আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে অসংখ্য কাজ করবে। ফয়সাল তার ভিডিও শেষ করলো।
ভিডিওটা দেখার পর আমার মাথায় আরও অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। আমি তারপর ফাইলে থাকা পিডিএফ ওপেন করে দেখলাম। পিডিএফ খুলে দেখার পর আমি আমার সকল প্রশ্নের উত্তর পেলাম। পিডিএফ ও ভিডিও দেখার পর আমি ঠিক করলাম আমিও আমার স্বামীর মতো মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে কাজ করবো। কিন্তু তার আগে স্বামী হত্যার প্রতিশোধ নেবো। তাঁরা জানে না তাঁরা কার স্বামীকে হত্যা করেছে। কিন্তু এটা কী করে সম্ভব? আমি এটা কী করে করবো? আমি প্রচন্ড চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি তারপর গোসল করতে গেলাম। গোসল করার সময় আমি ভাবতে লাগলাম ফয়সালের সাথে কাটানো সুন্দর মূহুর্তগুলোর কথা। তারপর ফয়সালের ভিডিও ও পিডিএফ এর কথা ভাবলাম। সব কেমন জানি গুলিয়ে যাচ্ছিলো। গোসল শেষ করে ওযু করে সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ালাম। এশারের সালাত ও তারাবীহ এর সালাত আদায় করার পর নফল সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়ালাম। আল্লাহর কাছে সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাইবো।কারণ আল্লাহ তা'লা বলেছেন - "তোমরা আল্লাহর কাছে সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন "। (সূরা আল বাকারা, আয়াত - ১৫৩) আর আল্লাহর সাহায্য আসলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। তখনি আমার মনে পড়ে গেল আমার অতীতের কিছু স্মৃতি।
কেমব্রিজে পড়ার সময় অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছিলো। পর্দা করার জন্য অনেক কষ্টে কেমেস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের হেডের অনুমতি নিয়ে ছিলাম। মনে পড়ে গেল কীভাবে কেমব্রিজে পড়ার সময় বুদ্ধি খাটিয়ে দুই লম্পটকে শায়েস্তা করেছিলাম। কীভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম এর গুনগত মান উন্নয়ন করেছিলাম। এসব এসব ভাবতে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়লাম। সেহেরি খেয়ে ফজরের সালাত আদায় করে ভাবতে লাগলাম কী করে আমি এই কঠিন কাজটি সম্পাদন করবো? কয়েক ঘন্টা ভাবার পরও কোন পরিকল্পনা তৈরি করতে পারলাম না। সকাল ৭ঃ০০ টা নাগাদ বাবাকে ফোন করে বললাম আমার দেশে ফিরতে কিছু দিন দেরি হবে। বাবা কারণ জিজ্ঞেস করায় বললাম আমার কিছু কাজ আছে। তারপর আমি যাত্রা করলাম বৈরুতের উদ্দেশ্যে। কারণ ফয়সালের পিডিএফ অনুযায়ী বৈরুতে অনেক রহস্যের সমাধান হবে। আর আমার কাছে সবচেয়ে বড় রহস্য এটাই যে, কেন ফয়সাল আমাকে বৈরুত যেতে বলেছে।
১৬ ই মে ২০১৯ বিকাল ৫ঃ০০ টা। লেবানের রাজধানী বৈরুতের সমুদ্র উপকুলের একটি পাথরের ওপর বসে আমি ভাবছি, কী সেই কারণ যার জন্য ফয়সাল আমাকে বৈরুত আসতে বলেছে? এমন সময় কেউ আমার কাঁধে হাত রাখলো। তারপর -
বুশরা [এক সাহসী নারীর গল্প]
পর্ব-০৪
লেখাঃ নুসরাত জাহান
[গল্পটি কাল্পনিক]
হঠাৎ কেউ আমার কাঁধে হাত রাখলো। আমি ঘুরে তাকালাম। ঘুরে তাকানোর সাথে সাথেই আমি চমকে উঠলাম। কারণ এই তো সেই নারী যে মোসাদের এজেন্ট এবং আমাকে জর্দান সীমান্তে ছেড়ে দিয়ে আসার জন্য মোসাদকে পরামর্শ দিয়েছে। আমি চুপ দেখে ঐ নারী ইংরেজিতে বললেন, ভয় পেয়ে গেছো? ভয় পেও না। আমি তোমার বন্ধু শত্রু নই। আমি বললাম কীভাবে? ঐ নারী বললো সেটা না হয় যেতে যেতেই জেনে যাবে। আমি বললাম আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না। ঐ নারী বললো যেতে তো তোমাকে হবেই। তারপর তিনি আমাকে জোর করে হাত ধরে টেনে রাস্তার ধারে নিয়ে আসলেন। তারপর বললেন আমি তোমার স্বামীর পরিচিতো, আর বাকী পরিচয় এখানে দেওয়া ঠিক হবে না। তাই আশা করি আমার পরিচয় জানার জন্য হলেও আমার সাথে যেতে তোমার আর কোন আপত্তি নেই। আমি বললাম ঠিক আছে চলুন।
তারপর ঐ নারী আমাকে তার গাড়িতে উঠতে বলেন। আমি তার গাড়িতে উঠলাম। ৩ মিনিট পর গাড়ি এসে হোটেলের সামনে থামলো। ঐ নারী বললো যাও হোটেল থেকে তোমার সব জিনিসপত্র নিয়ে এসো। আজ তুমি আমার বাড়িতে থাকবে। আমি হোটেল থেকে আমার জিনিসপত্র নিয়ে আসলাম। তারপর গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। ১০ মিনিট পর গাড়ি একটি একতলা বাড়ির সামনে থামলো। ঐ নারী গাড়ি থেকে নামলেন। আমিও নামলাম। আমরা একতলা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলাম। বাড়ির ভিতর প্রবেশ করার সাথে সাথে উনি দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারপর আমাকে বললেন- বুশরা, আমি একজন এমআইটি এজেন্ট। আমি বললাম মানে? ঐ নারী বললেন- তুমি হয়তো ভাবছো যে, এই নারী মোসাদের এজেন্ট হয়ে কী করে এমআইটির এজেন্ট হবে তাই তো?
আমি বললাম হ্যাঁ। আপনি দয়া করে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলুন। তিনি বললেন অবশ্যই বলবো। তার আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নেই। আমাকে বললেন তুমিও ফ্রেশ হয়ে নাও। ওদিকে একটা ওয়াশ রুম আছে। তিনি ওয়াশ রুমে যাওয়ার আগে বললেন ওহ, তোমাকে তো আমার নাম বলাই হয় নি, আমার নাম হামিদা গুল। তারপর হামিদা ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আমি ওয়াশ রুম থেকে ফিরে ড্রয়িং রুমে হামিদার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর হামিদা গুল আসলেন। তারপর বললেন বুশরা ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে, তাই ইফতারের পর সব খুলে বললে আশা করি তোমার সমস্যা নেই। আমি বললাম ঠিক আছে তাই হোক।
তারপর হামিদা বললেন আমার সাথে রান্না ঘরে আসবে? আমি বললাম হ্যাঁ চলুন। রান্না ঘরে গিয়ে হামিদা বললেন আজ তোমাকে দুটি দেশের মজাদার দুটি খাবার খাওয়াবো, আশা করি তোমার খুব ভালো লাগবে। আমি বললাম খাবারে আবার উল্টা পাল্টা কিছু মিশিয়ে দেবেন না তো? হামিদা বললেন কিছু উল্টা পাল্টা মেশালে তা তুমি নিশ্চয়ই দেখতে পাবে। তারপর হামিদা লেবাননের বিখ্যাত খাবার কিবে এবং তুর্কী খাবার হানকান বেগেন্ডি তৈরি করলেন। ইফতারের পানীয় হিসেবে তৈরি করলেন কেসরের শরবত। হামিদার ভাষ্য মতে, কিবে হলো লেবাননের অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। যা এক ধরনের মাংসের বল। যার ওপরে থাকে আটার আস্তরণ। আটার আস্তরণের নিচে থাকে ভেড়ার মাংসের কিমা। আর হানকান বেগেন্ডি হলো গরুর মাংসের বিশেষ ধরনের রান্না। যেখানে পোড়া বেগুন ও পনির ব্যবহার করা হয়। ইফতারের সময় হওয়ার পর আমরা ইফতার করলাম। তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করলাম।
মাগরিবের সালাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম যাতে সব কিছু আগের মতো হয়ে যায়। মাগরিবের সালাতের সময় খেয়াল করলাম হামিদা খুব ধীর স্থিরভাবে সালাত আদায় করছে। যা দেখে আমার মনে হলো হামিদা একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো মোসাদের গোয়েন্দারা নাকী খুব ভালো মুসলিম হওয়ার অভিনয় করতে পারে। মাগরিবের সালাত শেষ করে হামিদা বললেন বুশরা তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় হয়েছে। এসো আমার সাথে। হামিদার পিছু পিছু আমি চললাম। হামিদা একটি রুমের দরজা খুললেন। তারপর বললেন এসো। আমি তার পিছু পিছু রুমে প্রবেশ করলাম। রুমের মাঝ বরাবর একটি সিঁড়ি। হামিদা সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নামছেন। হামিদার দেখা দেখি আমিও সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলাম। কয়েকটি লম্বা সিঁড়ি পার হওয়ার পর হামিদা একটি বড় লোহার দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন। চাবি দিয়ে দরজা খুললেন। তারপর একটি বড় রুমে প্রবেশ করলেন।
হামিদা বললেন বুশরা এসো। আমি হামিদার কথা মতো রুমে প্রবেশ করলাম। রুমটার দেওয়ালে এক জায়গায় বড় করে লেখা আছে (MIT)। রুমটা বিশাল বড়ো চারিদিকে অনেকগুলো কম্পিউটার। আর সবগুলো কম্পিউটারই ইনভাটো কোম্পানির। হামিদা বললেন এটা এমআইটির একটা ছোট অফিস। হামিদা একটি চেয়ারে বসলেন। আমাকেও বললেন বসো বুশরা। আমি উনার টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসলাম। এবার হামিদা গুল বলা শুরু করলেন। হামিদা গুল বললেন তিনি মূলত এমআইটির এজেন্ট। ১০ বছর ধরে লেবাননে কাজ করছেন। কয়েক বছর আগে এক বোমা বিস্ফোরণে মোসাদের সেরিনা নামক ৪০ বছর বয়স্ক নারী এজেন্ট মারা যায়। আর মোসাদের ঐ নারী এজেন্ট ছিলেন হামিদা গুল এর বন্ধু। মোসাদ সেরিনার মৃত্যু সংবাদ জানার আগেই হামিদা গুল কৌশলে সেরিনার মতো সেজে মোসাদের সাথে যোগাযোগ করেন। আমি হামিদাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে এই চেহরাটা আপনার নয়? হামিদা বললেন একদম ঠিক ধরেছো। এটা আমার চেহারা নয়। হামিদা বললেন, শুধু এই চেহারা কেন এই শরীরটাও আমার নয়। আমি বললাম মানে? হামিদা উঠে দাঁড়িয়ে একটি বিশেষ লোহার স্টিক বের করলেন। তারপর কয়েক মিনিটে নিজের চামড়া ছিঁড়ে ফেললেন। আমি যেটাকে হামিদার চামড়া ভেবেছি ওটা আসলে একটা চামড়ার নকল আবরণ। তারপর আবরণ থেকে বের হয়ে আসলো আসল হামিদা গুল। হামিদা গুলকে এরকম করতে দেখে আমি রীতিমতো অবাক। হামিদা গুল বললেন প্রতিদিন কাজ শেষ করার পর আমি এভাবেই আসল চেহারায় ফিরি।
হামিদা বললেন এ পদ্বতির নাম কসমিক টেরাফর্মিং। হামিদা বললেন এই চেহারার দুটো সুবিধা। এক এই চেহারা দিয়ে আমি গুপ্তচর বৃত্তি করতে পারি, দুই এই চেহারা থাকার ফলে কোন পুরুষ আমার চেহারা বা শারীরিক কাঠামো কী রকম তা জানতে পারে না। ফলে পর্দারও খেলাপ হয় না। আমি বললাম এতো ভয়ংকর ব্যাপার। হামিদা বললেন তা একটু ভয়ংকর বটে। হামিদা বললেন ফয়সাল মানে তোমার স্বামীর ব্যাপারটা মোসাদের কাছে ফাঁস করেছে এক বিশ্বাসঘাতক এজেন্ট। আর অতর্কিতে তোমার স্বামীকে হত্যা করেছে মোসাদের এক জুনিয়র এজেন্ট। আমি তোমাকে মোসাদের জেরা করার সময় উপস্থিত ছিলাম, তাই তোমাকে যাতে তারা ছেড়ে দেয় সেই ব্যবস্থা করতে পেরেছি। মোসাদের নাম লেখা গাড়িতে করে তোমাকে জর্দান সীমান্তে ছেড়ে আসা হয়েছে যাতে তোমার কাছে ঘটনাটা কিছুটা পরিষ্কার হয়। তোমাকে যেই ফিলিস্তিনি দম্পতি সাহায্য করেছে তারাও কিন্তু এমআইটির এজেন্ট। তুমি জর্দান সীমান্তে পৌঁছানোর পর তুমি যাতে পুরো ব্যাপারটা জেনে বৈরুত আসো সে জন্য আমরা পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমি হামিদাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি বৈরুত আসলে আপনাদের লাভ কী? হামিদা বললো আসলে কয়েকটা ব্যাপারে বুশরা আমরা তোমার সাহায্য চাই। আর আমরা জানি তুমি ছাড়া আল্লাহ এই কাজ করার অন্য কোন যোগ্য মানুষ আমাদের সামনে এই মুহূর্তে রাখে নি। আমি বললাম সবই বুঝলাম কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে। হামিদা জিজ্ঞেস করলেন কী প্রশ্ন? আমি বললাম আমি যে, আমার স্বামীকে হারালাম আর আমার সন্তান যে, তার বাবাকে হারালো তার কী হবে?
হামিদা বললেন আমাদের গোপন মিশন চলাকালে আমরা অবশ্যই তোমার স্বামীর হত্যার প্রতিশোধ নেবো। আর তোমার স্বামী তো শহীদ হয়েছে, আর নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা অনেক। হামিদা বললেন, সবার আগে এই বিশেষ গোপন মিশনে তোমার সাহায্য আমাদের দরকার। কারণ তোমার স্বামী বলেছিলো রসায়ন বিজ্ঞানে তোমার মতো জ্ঞান বর্তমানে হয়তো কোন মানুষের নেই। তাই তোমার স্বামীর কথা ভেবে হলেও তুমি আমাদের সাহায্য করো। আমি বললাম বেশ আমি সাহায্য করতে রাজি। কিন্তু কী ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে? হামিদা বললেন আমাদের কাছে থাকা তথ্যমতে, মোসাদের একটি গোপন জায়গায় অনেকগুলো পরমাণু অস্ত্রের সেন্ট্রিফিউজ আছে, সেগুলোকে একেবারে ধংস করতে হবে। আমি বললাম এটা কীভাবে সম্ভব? আর তাছাড়া নিউক্লিয়ার সেন্ট্রিফিউজ ধংস করা বিপদজ্জনক। হামিদা বললেন শান্ত হও আর শোনো মোসাদ সাইপ্রাস দ্বীপে হামলা করার জন্য নতুন ধরনের মিডিয়াম রেঞ্জ মিসাইলের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে, এই মিসাইল গুলোকেও ধংস করতে হবে। আমি বললাম সবই বুঝলাম কিন্তু এসব কী করে হবে? হামিদা বললেন তোমাকে এ ব্যাপারে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে গবেষণা করতে হবে। আর সর্বোপরি সালাত ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। কারণ আল্লাহর সাহায্য আসলেই সব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হামিদা বললেন পুরো ব্যাপারটা এটুকু হলেও এখানে একটা সমস্যা আছে। সমস্যাটা কী আমি জিজ্ঞেস করলাম। হামিদা বললেন এই গোপন জায়গাটা কোথায় তা আমরা জানি না। আমি বললাম আমি তা জানি। হামিদা বললেন কীভাবে? আমি বললাম ফয়সাল একটি পিডিএফে একটি প্রোগ্রাম লিখে রেখেছে। যা কোন সার্ভার থেকে লোকেশন বের করার কাজে ব্যবহার করা যাবে। হামিদা বললেন তাহলে সেই প্রোগ্রাম অনুযায়ী খুঁজে বের করো। আমি ইনভাটো কম্পিউটার এর ইনভাটো প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার এ প্রোগ্রাম লিখলাম। পিডিএফ এ থাকা সার্ভার থেকে সঠিক লোকেশন এর তথ্য চুরি করলাম। লোকেশনগুলো আমরা জানতে সক্ষম হলাম। নিউক্লিয়ার সেন্ট্রিফিউজ এর লোকেশন হলো নাজারাথ এবং মিসাইলের লোকেশন হলো ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী হাইফা। তারপর হামিদা বললেন যাক আল্লাহর রহমতে কাজটা কিছুটা সহজ হলো। আমি বললাম - Now we can draw a mission plan. হামিদা বললেন - Let's Start. আমরা আমাদের মিশনের প্ল্যান করলাম। হামিদাকে বললাম আমার ল্যাবরেটরি লাগবে কিছু সলিউশন তৈরি করতে ও গবেষণা করতে। হামিদা বললেন চলো ল্যাবরেটরিতে যাই। আমার সাথে সাথে এসো। হামিদা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলেন। আমিও তার সাথে নিচে নামলাম। হামিদা একটি দরজার সামনে উপস্থিত হলেন। দরজা খুললেন। আর বললেন এটাই ল্যাবরেটরি। আমি দেখলাম এটা অত্যাধুনিক এক ল্যাবরেটরি। হামিদা বললেন তার এমআইটির অফিস থেকে ল্যাবরেটরি ৩০ ফুট নিচে। তাই এটা অনেক নিরাপদ।
আমি ল্যাবরেটরিতে টানা তিনদিন কাজ করে প্রস্তুত করলাম প্রয়োজনীয় সলিউশন। ২০ ই মে ২০১৯। আমরা আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী লেবাননের সীমন্তাবর্তী শহর শিমোনা থেকে সুরঙ্গ পথে ইসরাইলে প্রবেশ করলাম। তারপর -
বাকি গল্পের লিঙ্কঃ বাংলা ফেসবুক গল্প বুশরা