বিয়ের জন্য ও উত্তম সঙ্গী সন্তান এর জন্য ইসলামিক দোয়া ও আমল

 

বিয়ের দোয়া বিয়ের জন্য আমলঃ বিয়ের জন্য ও উত্তম সঙ্গী সন্তান এর জন্য ইসলামিক দোয়া 

বিয়ে নিয়ে কম বেশি সব যুবক যুবতীই করে। কেউ একটু আগে কেউ একটু পরেআজকে আশুন জানি বিয়ের জন্য দোয়া ও আমল।


 

 বিয়ের জন্য দুআ

বিয়ের জন্য কেমন দুআ করা উচিত এই প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমার সাথের জন বললেন, ‘আমাদের উচিত নেককার সঙ্গী পাওয়ার দুআ করা।’ আমি বললাম, ‘শুধু এতটুকু দিয়ে সংসার জীবনে সুখী হওয়া যায় না। দাম্পত্য জীবন সুখী হওয়ার জন্য উভয়ের শুধু নেককার হওয়া যথেষ্ট না। বরং এর সাথে আরো অতিরিক্ত কিছু বিষয় থাকা লাগে।’

আমরা বাস্তব জীবনে দেখি, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে নেককার হওয়া সত্ত্বেও সংসারে ভাঙ্গন ধরে। কারণ ব্যক্তি জীবনে উভয়ে নেককার হলেও মনের মিল ভিন্ন জিনিস। মনের মিলের জন্য উভয়ে নেককার হওয়ার পাশাপাশি চিন্তা-চেতনা, রুচি-স্বভাব-প্রকৃতি ইত্যাকার নানান বিষয়ে মিল থাকার প্রয়োজন পড়ে। একে অপরকে সঠিকভাবে বুঝতে পারা, ছাড় দিয়ে চলার মানসিকতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ইত্যাদি খুবই জরুরি। তাই দুআ করা উচিত এভাবে—‘হে আল্লাহ, আমার জন্য কল্যাণকর সঙ্গীর ব্যবস্থা করুন।’ এই দুআর মধ্যে সবকিছু একসাথে চলে আসে।

বারীরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘটনা বেশ প্রসিদ্ধ। তিনি ছিলেন একজন নামকরা মহিলা সাহাবী। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহহার আযাদকৃত দাসী। তিনি ও তাঁর স্বামী মুগীস অত্যন্ত নেককার ছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই। আযাদ হওয়ার পর বারীরা রাদিয়াল্লাহু আননহা তার স্বামীর সাথে সংসার করেননি। স্বামীর মধ্যে কোন দোষ-ত্রুটি ছিল এমন নয়; বরং স্বামীকে তার ভাল লাগত না। তাই তিনি বিচ্ছিন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই ভাল লাগা বা না-লাগার সাথে নেককার হওয়ার সম্পর্ক থাকা জরুরি নয়। নেককার হওয়া সত্ত্বেও ভাল না লাগার এটি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

কুরআনুল কারীমের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখব, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এভাবে দুআ করতে শিখিয়ে দিয়েছেন,
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
“হে আল্লাহ, দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদেরকে কল্যাণকর বস্তু দান করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।” (বাকারা :২০১)

অনেক মুফাসসির বলেছেন, এখানে হাসানাহ মানে কল্যাণকর স্ত্রী। সরাসরি নেককার স্ত্রী না বলে হাসানাহ শব্দ আনার পেছনে এই হেকমতও থাকতে পারে যে, দাম্পত্যজীবন সুখময় হওয়ার জন্য শুধু নেককার হওয়া যথেষ্ট না। বরং রুচি-স্বভাব-প্রকৃতি সবদিক থেকেই সুন্দর হতে হয়।

সুন্দর বিষয়টা আপেক্ষিক। এক জনের কাছে যে বিষয় সুন্দর অন্যজনের কাছে সেটাই আবার অসুন্দর ও অপছন্দনীয়। তাই প্রত্যেকের দুআর ক্ষেত্রে তার জন্য যেটা সুন্দর হবে সেটাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এভাবে ভাবলে বিয়ের জন্য এটি হতে পারে একটি সুন্দর ও কার্যকরী দুআ।

আরেকটি দুআও এক্ষেত্রে অত্যন্ত চমৎকার। দুআটি করেছেন সাইয়িদিনা মূসা আলাইহিসসালাম। তিনি ফিরআউনের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে মিশর থেকে বের হয়ে দূর দেশে রওনা হলেন। অচেনা পথ, অজানা দেশ। কারো সাথে কোন পরিচয় নেই। খাবারের মত কোন ভাল ব্যবস্থা নেই। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দেহ। তখন ভরসা কেবল একমাত্র আল্লাহ তাআলা। সময় তিনি দুআ করেছিলেন,
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
“হে আমার রব, আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করেন আমি তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষী।” (ক্বাসাস : ২৪)

পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য উত্তম ব্যবস্থা করেন। হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম-এর কন্যার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেন। তাঁর মাথা গোজার মত একটি জায়গা হয়। দূর দেশে অপরিচিত পরিবেশে আপন কিছু মানুষ পান।

এই দুআর মধ্যে সবকিছু আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করার বিষয় আছে। যেহেতু আমরা জানি না, কে আমাদের সুখময় দাম্পত্যজীবনের জন্য কল্যাণকর হবে। কিন্তু আল্লাহ হলেন আলিমুল গায়ব। ভূত-ভবিষ্যতের সবকিছু সম্পর্কে তিনি অবগত। তাই কার জন্য কোন বিষয়টি কল্যাণকর হবে, এটি তাঁরচে ভালভাবে আর কেউ জানে না। তাই নিজে কোন কিছু সিলেক্ট না করে বরং পুরো ব্যাপারটাই আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়া। তিনি যা কল্যাণকর বলে মনে করেন সেটাই যাতে করেন।

আমরা অনেক সময় এভাবে দুআ করি ‘আল্লাহ, অমুককে পাইয়ে দাও, অমুকের সাথে যাতে আমার বিবাহ হয়।’—এভাবে দুআ করা অনুচিত। কারণ আমাদের কারোরই জানা নেই, যার সাথে বিয়ের জন্য দুআ করছি সে আমার জন্য কতটুকু কল্যাণকর হবে। তাই দুআর ভাষা হওয়া উচিত এমন—‘হে আল্লাহ, কল্যাণকর হয়ে থাকলে তুমি অমুকের সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। আর কল্যাণকর না হয়ে থাকলে সুন্দরভাবে এর একটা বিহিত করে কল্যাণকর কাউকে এনে দাও।’

বিবাহ মানবজীবনের সবচে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি। একজন ব্যক্তির বাকী জীবন কেমন কাটবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে এর ওপর। তাই সবসময় দুআর মধ্যে এই বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা কর্তব্য। বিশেষত দুআ কবুলের মুহূর্তগুলোতে উত্তম সঙ্গীর জন্য দুআ করার কথা বিস্মৃত হতে নেই। কারণ শত রকমের খোঁজ-খবর নিয়ে বিয়ে করার পরেও সংসারে অশান্তি হতে পারে। এমন অনেক বিষয়ই পরবর্তীতে বের হয়ে আসতে পারে, যা আগে কেউ-ই জানত না; ফলে সবাই সঙ্গীর পক্ষে সাক্ষী দিয়েছিল। আর চিন্তা-চেতনা ও রুচি-স্বভাবের মিলের বিষয়টি তো আছেই, যা সাধারণত আশপাশের মানুষজন থেকে খোঁজ নিয়ে বোঝা যায় না। বেশ কিছুদিন একসাথে বসবাস করার পর ব্যাপারটি উপলব্ধ হয়।

বিয়ে ও উত্তম সঙ্গী লাভের জন্য তাই বেশি বেশি দুআ করার কোন বিকল্প নেই। মনের কথা রবের কাছে তুলে ধরুন। তিনিই আপনার সর্বোত্তম অভিভাবক। তিনিই আপনার জন্য যথেষ্ট।

- Abdullah Al Masud 


সামনে ওয়াজের মৌসুম। 
অনেকেই আয়োজক হবেন, বক্তা হবেন। যারা আয়োজক, তাদের সামনে ভিন্ন বাস্তবতা থাকতে পারে। ওয়াজ মাহফিলটাকে নিছক প্রতিবছর করি, এবারও করব। বা শীতকালীন বিনোদন হিসেবে না নিয়ে একটু ভিন্ন চিন্তা করতে পারে কি না আয়োজকরা এবার।

বছর দুয়েক আগে আমি গিয়েছিলাম ওয়াজ করতে। হাইসেন না। সত্যিই ওয়াজ করতে গেছলাম৷ আমার নিজের গ্রামে, আমার পাড়ার বাৎসরিক ওয়াজ-মাহফিলে। প্রধান বক্তা একজন, আমি ৩য় বক্তা। কথা ছিল একঘণ্টা কথা বলবো, প্রতিঘণ্টা একশো নাইত্রিশ টাকা করে দেবে। ১৫ মিনিটের মাথায় ২য় বক্তা চলে আসায় আমার কথা আর কেউ শুনার মুডে ছিল না, ২০ মিনিট বলেছিলাম সাকুল্যে। আমি বলছিলাম ইসলামের সামগ্রিকতা নিয়ে, ইবাদাত-ঈমানিয়াত-মুআমালাত-মুআশারাত-আখলাকের সমন্বয়ে টোটাল ইসলাম নিয়ে। দুনিয়া ও আখিরাতে ইসলামের উপযোগিতা ও আবশ্যকতা নিয়ে, সহজতা নিয়ে। ইসলাম ছাড়া আমাদের উপায় নাই। এই যেগুলা নিয়ে আমি সচরাচর বলি। দৈনন্দিক কাজের মধ্য দিয়েও আল্লাহকে খুশি করা যায় ইত্যাদি। মানুষ কায়দা করেই শুনছিল বেশ দেখলাম।

দ্বিতীয় বক্তা খুব চমৎকার বললেন ৩০/৪০ মিনিট। পরিবার-সন্তান-অর্থনৈতিকভাবে ইসলামকে কানেক্ট করে কী কী করার, বেশ টু-দ্য-পয়েন্ট বললেন। হালকা সুর দিয়ে কাজের কথা, কিছু মজারু মেশানো, গপসপ না, প্রচুর মাসায়েল জানালেন। প্রধান বক্তা এসে প্রায় দেড় ঘণ্টা বয়ান করলেন, প্রথাগত জোরে, চিৎকার করে, চিৎকার করিয়ে, তথ্যের অভাব, যাপিত জীবনের সাথে সম্পর্কহীন।

আচ্ছা এমন হলে কেমন হয়। বেশি টাকা দিয়ে দূরের বক্তা আনা হবে না। নিকটস্থ মাদরাসার বক্তা আলিমগণ আসবেন। কমবেশি সব শিক্ষক আলিম আসলে বক্তাই। দরস, ক্লাস, লেকচার সবাইকেই দিতে হয়। কিছুটা সিনিয়র আলিম মানেই বুঝবেন বক্তা হিসেবেও খারাপ হবেন না। ওনারাই আসবেন। ২ দিন ব্যাপী মাহফিল হবে, ৩+৩= ৬ ঘণ্টা। ৬ ঘণ্টার কোর্স। ৬ টা বিষয়:
১. আকীদা 
২. পরিবার জীবন (পর্দা ইত্যাদি আসবে)
৩. লেনদেন
৪. আখলাক
৫. মৃত্যু ও আখিরাত (নামাযের কঠোর তারগীব হবে) 
৬. নবীজীর সীরাহ, সাহাবাগণ, ইসলামের যুদ্ধ, বীরত্ব গাঁথা।

দরকার হলে ৬ নং দিয়ে শুরু হবে. ৪,৩,২ এর বয়ান গল্প দিয়েই করা যায়। নবীজী-সাহাবীদের গল্প। যতটা সম্ভব নানান মাসআলা, দীনের সিদ্ধান্ত জানানো হল। একটা গল্প, তা থেকে পাওয়া মাসআলা, শিক্ষা। আবার একটা গল্প, মাসআলা, শিক্ষা। আরও সুন্দর সুন্দর স্ট্রাকচার আলিমগণ চাইলেই বের করতে পারেন। আমি আমার মত বললাম।

একটা মৌসুম যদি সেন্ট্রাল একটা স্ট্রাকচারে করা যেত, কী পরিমাণ ফায়দা হতো! মিম্বর, ওয়াজ এগুলো আমাদের মিডিয়া। আমাদের টিভি নাই, পেপার নাই। এগুলোও একদিন হাতে নাও থাকতে পারে। হয়ত আরাকানে কাশগড়ের গ্রামে গ্রামে একটা সময় ওয়াজ হত, মিম্বরে বয়ান হত। এখন আর হয় না, হবে না। হয়ত আমাদেরও এসব হাতছাড়া হয়ে যাবে। সেদিন আসার আগেই সচেতনভাবে হক আদায় করে একটু ব্যবহার করেই দেখি কট্টুক হয়। পরিকল্পিতভাবে, স্ট্রাকচার বানিয়ে।

- Shamsul Arefin Shakti 

Next Post Previous Post