রমাদানে মেয়েদের বা নারীদের আমল এর রুটিন | সারাদিনের রুটিন

রমাদানে মেয়েদের বা নারীদের আমল এর রুটিন ২০২৪


আহলান ওয়া সাহলান, ইয়া রমাদ্বান।

আলহামদুলিল্লাহ আমরা আরো এককটি রমাদ্বান পেলাম। আহ! কেমন শান্তির সুবাসে ভরা এক মাস। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'লার অশেষ রহমত যে আমরা এই রমাদান পেয়েছি। আমাদের উচিত বিশেষ ফজিলতের এই মাসকে আল্লাহর কাছে ইবাদতের মাধ্যমে নিজেদেরকে তাঁর ক্ষমার আলোয় আলোকিত করা। এরজন্য তৈরি করে নিতে পারি কিছু চেকলিস্ট। এবং অবশ্যই সময়ের ব্যপারে সচেতন হতে হবে।

আমরা অকারনেই অনেক সময় নষ্ট করি। বিশেষ নিয়ামাহ - এই রমাদ্বান মাসে আমাদের এসব খারাপ অভ্যেস দূর করতে হবে যা আমাদের ইবাদতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। অনলাইনে অধিক সময় ব্যয় করাটা ঈমান, আমল ও শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা সবকিছুর জন্যই ক্ষতিকর। সেটা হোক দ্বীনের দাওয়াহ-মোটিভেশনের পারপাসে বা অন্য কোন ভালো কাজে। এই রমাদ্বানে আমাদের উচিত অনলাইন থেকে দূরে থেকে ইবাদতে মনোযোগ দেয়া।

রমাদ্বান কুরআন নাযিলের মাস। আমাদের অনান্য মোটিভেশনাল লেকচার, বই বাদ দিয়ে কুরআন পাঠে অধিক সময় ব্যয় করা উচিত। কুরআনের কোন একটি তাফসীর নির্দিষ্ট করে পড়ার টার্গেট করতে পারি এই রমাদানে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে তাফসীর পড়তে পারি একটি টাইম নির্দিষ্ট করে। যেন কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি অর্থ বুঝে তার প্রয়োগও আমাদের জীবনে ঘটাতে পারি।

যাদের তাজওইদ ক্লিয়ার, হিফয করার ইচ্ছে রাখেন এই রমাদানেই তারা হিফয শুরু করতে পারেন ইনশাআল্লাহ । এই মাসে শুধু রহমত আর বরকত থাকবে। যত বেশি নেক আমল করা যায়, ইবাদত করা যায় করতে হবে কারন এই মাসে সাওয়াব বহুগুন বাড়িয়ে দেয়া হবে সব ইবাদতের। কিয়ামুল লাইলে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ইস্তিগফার করতে হবে আল্লাহ যেন আমাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করেন, ক্ষমা করে দেন। পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করানোর এক অমূল্য সুযোগ এই রমাদ্বান।

ইয়া আল্লাহ্‌, আমাদের যেন একটি মুহূর্তও নষ্ট না হয়, আপনার স্মরণ থেকে বিমুখ না থাকি আপনি তাওফিক দান করুন। এই রমাদ্বানকে আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ রমাদ্বান বানানোর তাওফিক দিন, আমাদেরকে আপনার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন ইয়া রব্ব।

- সুকূন


রমাদানে নারীদের ২৪ ঘণ্টার রুটিন:.
২:০০—৩:০০ ঘুম থেকে ওঠা, রান্নাবান্না, ফাঁকে ফাঁকে খাবার ও টেবিল/দস্তরখান প্রস্তুত করা এবং অযু-ইস্তিঞ্জা সম্পন্ন করা
.
৩:০০—৩:৩৫ তাহিয়্যাতুল উযু, তাহাজ্জুদের নামাজ ও দু‘আ-ইস্তিগফার। যদি সম্ভব হয়, এখানে সময় আরেকটু বাড়ানো প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে কুকারে খাবার বসিয়ে দিয়ে নামাজ পড়া যায়। তাহলে সময় বাড়বে এখানে।
.
৩:৩৫—৪:০০ সাহরি খাওয়া। (সব খাবার সামনে এনে রাখবেন, যাতে শান্তিমত সাহরি করতে পারেন—খাবার পরিবেশন করার জন্য বারবার ওঠতে না হয়। সবাই নিয়ে নিয়ে খাবে।)
.
৪:০০—৫:১০ থালা-বাসন গুছানো, অযু-ইস্তিঞ্জা, ফজরের সলাত ও মাসনূন যিকর।
.
এরপর সম্ভব হলে সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করে, ইশরাকের নামাজ পড়ে ঘুমানো। আর এই সময়টা তিলাওয়াত, যিকর বা অন্যান্য কোনো আমলে কাটানো। এরপর ঘুমাতে যাওয়া। সম্ভব না হলে ফজরের মাসনূন যিকরের পরই ঘুমিয়ে যাবেন। 
.
৬:০০—৯:০০ ঘুম। 
.
৯:০০—১১:৩০ এই আড়াই ঘণ্টার মধ্যে এক ঘণ্টা বাচ্চাকে খাওয়ানো ও অযু-ইস্তিঞ্জার জন্য আর দেড় ঘণ্টা তিলাওয়াত বা হিফজ করার জন্য।
.
১১:৩০—১২:৩০ রান্নাবান্না ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা, কেউ অরোযাদার (শিশু বা রোযায় অক্ষম মুরুব্বি) থাকলে তার খাবার প্রস্তুত করা ও বাচ্চাকে সময় দেওয়া।
.
১২:৩০—১:০০ গোসল সম্পন্ন করা।
.
১:০০—১:৪০ যোহরের নামাজ এবং মাসনুন যিকরগুলো আদায় করা।

১:৪০—২:০০ তিলাওয়াত করা।
.
২:০০—৩:০০/৩:৩০ ঘুম (যেহেতু রাতে কম ঘুম হবে, তাই দিনে একটু বেশি ঘুমানো লাগতে পারে।) 
.
৩:৩০—৪:৪৫ রাতের খাবার প্রস্তুতে তরকারি-মাছ কুটা, মাংস ছাড়ানো বা এ জাতীয় কাজগুলো সম্পন্ন করা। 
.
৪:৪৫—৬:০০ আসরের সলাত আদায় করা ও ইফতার প্রস্তুত করা (পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ইফতারের কাজে সম্পৃক্ত করাতে পারলে ভালো হয়। শরবত বানানোসহ যতটুকু তারা পারেন—তাহলে গৃহিণীর কাজ সহজ হবে) ইফতারের সময়টাতে রাতের রান্নাও বসিয়ে দেওয়া যায়, যদি সুযোগ আসে বা ইফতার যদি হালকা হয়।
.
৬:০০—৬:২৫ (ইফতার পর্যন্ত) দু‘আ, দরুদ ও ইস্তিগফারে লেগে থাকা। 
.
৬:২৫—৭:২০ ইফতার, মাগরিবের নামাজ, বিকালের/সন্ধ্যার মাসনুন যিকরগুলো আদায় করা।
.
৭:২০—৮:১৫ ইফতার-পরবর্তী টেবিল/দস্তরখান পরিষ্কার করে বাকি সময়টা বিশ্রাম নেওয়া। এ সময়টা অনলাইনেও কাটানো যায়। 
.
৮:১৫—১০:১৫ অযু-ইস্তিঞ্জা সম্পন্ন করে ইশা ও তারাবির নামাজ আদায় করা। ফাঁকে কুকারে/ডেগচিতে ভাত বসিয়ে দেওয়া। সাধারণত ভাত সবাই গরম খেতে পছন্দ করেন। তরকারি আগেই রান্না করা থাকলেও অসুবিধা হয় না।
.
১০:১৫—১০:৪৫ রাতের খাবার খাবার সম্পন্ন করা, টেবিল/দস্তরখান গুছানো। এবং এগারোটার মধ্যে অবশ্যই ঘুমাতে যাওয়া।
.
১১:০০—২:০০ ঘুম। এখানে তিন ঘণ্টা ঘুম আর দিনে দুই পর্বে সাড়ে চার ঘণ্টা ঘুম। সর্বমোট সাড়ে সাত ঘণ্টা ঘুম। যেহেতু গৃহিণীর পরিশ্রম বেশি, তাই তাঁর এতটুকু ঘুম দরকার হবে। তবে, যদি আধা ঘণ্টা কমানো যায়, তবে ভালো।
.
[আসলে রমাদানে নারীদের এত ব্যস্ততা থাকে যে, এসব রুটিন অনুসরণ করা অনেকাংশেই কঠিন হয়ে যায়। তবুও একটি নমুনা আমরা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। বাকি, নিজেরাই নিজেদের মত করে এদিক সেদিক করে নিবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের নারীদের উপর সন্তুষ্ট হোন, সময়ের স্বল্পতায় তাঁদের আমলের ঘাটতিকে উপযুক্ত প্রতিদান দিয়ে পূর্ণ করুন। আমীন।]
.
[আমরা পূর্বের দুই পোস্টে রমাদানকে অর্থবহ করার তেরোটি উপায় ও রামাদানে পুরুষদের একটি ভারসাম্যপূর্ণ রুটিন পোস্ট করেছি। কমেন্টে লিংক পাবেন।]
.
#Tasbeeh



রমাদানের ২৪ ঘণ্টার রুটিন:


ইনশাআল্লাহ্ এই রুটিনটি আমাদের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ হবে এবং মানতে সহজ হবে।
.
২:৪৫—৩:০০ ঘুম থেকে জাগা ও অযু-ইস্তিঞ্জা সম্পন্ন করে নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
.
৩:০০—৩:২৫ তাহিয়্যাতুল উযু ও তাহাজ্জুদের নামাজ (২৫ মিনিট) তাহাজ্জুদের নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়াই উত্তম। তবে, এর বেশি পড়াও জায়েয।
.
৩:২৫—৩:৩৫ আন্তরিকভাবে ইস্তিগফার ও দু‘আ করা (১০ মিনিট)। শেষ রাতের ইস্তিগফার ও দু‘আ আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। যাদের খাবার খেতে সময় কম লাগে, তারা দু‘আয় আরো কিছু সময় যোগ করতে পারেন।
.
৩:৩৫—৪:০০ সাহরি খাওয়া (২৫ মিনিট)
.
৪:০০—৪:৩০ অযু-ইস্তিঞ্জা সম্পন্ন করা ও ফজরের সলাত আদায় করা।
.
খুব ভালো হয়—যদি ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সজাগ থেকে, যিকির ও তিলাওয়াত করে, শেষে ইশরাকের নামাজ পড়ে ঘুমানো যায়। সেই হিসেবে—
.
৪:৩০—৫:৫০ সকালের মাসনুন যিকর, তিলাওয়াত ও ইশরাকের নামাজ।
.
[আর যারা ঘুমিয়ে যাবেন, তারা সকালের মাসনুন যিকরগুলো করে পাঁচটার মধ্যে ঘুমিয়ে যেতে পারেন এবং ৮:০০/৮:৩০-এ জাগবেন এরপর চাশতের নামাজ পড়বেন।]
.
৬:০০—৯:০০ ঘুম (তিন ঘণ্টা)
.
যারা জব করেন, তারা কাজে যাবেন। যারা সম্পূর্ণ ফ্রি থাকবেন, তাদের জন্য—
.
৯:০০—১১:০০ কুরআন তিলাওয়াত (ইস্তিঞ্জা সেরে অযু করে প্রস্তুতি নিতে নিতেই চলে যাবে আধা ঘণ্টা।)
.
১১:০০—১২:৩০ বাসার যাবতীয় কাজ করা, বাচ্চাকে সময় দেওয়া, নিজের কোনো অ্যাকাডেমিক/চাকরির পড়ালেখা থাকলে করা।
.
১২:৩০—১২:৫০ গোসল সম্পন্ন করা। (যারা ৯-টায় ঘুম থেকে জেগেই গোসল করতে চান, তারা সেভাবেই সময় সেট করে নিন।)
.
১২:৫০—১:৩০ যোহরের সলাত ও মাসনূন দু‘আ ও যিকরগুলো সম্পন্ন করা।
.
১:৩০—৩:৩০ অর্থসহ কুরআন পাঠ, তাফসির, হাদিস অথবা দ্বীনি কোনো কিতাবাদি অধ্যয়ন করা। যারা এখনো সহিহভাবে কুরআন পড়তে পারেন না, তারা অবশ্যই শিখে নিবেন। তাছাড়া এসব আমল করতে করতে ক্লান্তি আসলে, মোবাইলে তিলাওয়াত অথবা দ্বীনি কোনো লেকচার/বয়ান শুনা যেতে পারে।
.
৩:৩০—৪:৩০ ঘুম (দুপুরের হালকা ঘুম সুন্নাহ, একে হাদিসে বলা হয়েছে কাইলুলাহ)
.
৪:৩০—৫:১০ অযু-ইস্তিঞ্জা সম্পন্ন করা, আসরের সলাত ও মাসনূন যিকরগুলো করা।
.
৫:১০—ইফতার পর্যন্ত
আসরের পরের সময়টাতে শরবত বানানো ও ইফতার তৈরিতে সাহায্য করা। ইফতারের আগ মুহূর্তে দু‘আ করা। (ইফতারের আয়োজন কম ও সহজ হলে আসরের পর ৩০ মিনিট কুরআন-হাদিসের তালিম হতে পারে—পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে। অথবা সম্মিলিত কোনো দ্বীনি আলোচনা। এরপর ইফতারের প্রস্তুতি ও সর্বশেষ ইফতারের পূর্বে দু‘আ।)
.
[বিকাল বা সন্ধ্যার যিকরগুলো আসরের পর অথবা মাগরিবের পর পড়তে পারেন। দুটোর পক্ষেই সহিহ দলিল আছে এবং আলেমগণের মতামত রয়েছে।]
.
৭:০০—৮:০০ সম্পূর্ণ বিশ্রামের সময়। এসময় আত্মীয়দের খোঁজ নেওয়া বা অনলাইনে কিছু সময় দেওয়া যেতে পারে। এরপর ইস্তিঞ্জা ও অযু সেরে প্রস্তুত হওয়া।
.
৮:০০—১০:০০ ইশা ও তারাবির সলাত আদায় করা (সলাতে যত বেশি সময় দেওয়া যায়, তত ভালো। আমরা অ্যাভারেজ একটি হিসাব ধরেছি, যা খুব বেশি নয় আবার খুব কমও নয়।)
.
১০:০০—১০:৩০ রাতের হালকা খাবার (যদি প্রয়োজন হয়) অথবা বিশ্রাম/অনলাইন; অতঃপর ঘুমের প্রস্তুতি। নামাজের আগে খেয়ে নিলে তারাবি পড়তে কষ্ট হয়। তবে, যার যেভাবে সুবিধা হয়, সেভাবেই করবেন।
.
১০:৩০—২:৪৫ রাতের ঘুম (৪ ঘণ্টা)
.
[হোম কোয়ারেন্টিনে অবসরে থাকা ব্যক্তিদের জন্য এই রুটিন অনুসরণ করা সহজ হলেও আমাদের মা-বোনদের জন্য এই রুটিন মেনে চলা অসম্ভব। কারণ রান্নাঘরেই তাঁদের রামাদান চলে যায়। আল্লাহ্ তাঁদের মাফ করুন এবং তাঁদের উপর সন্তুষ্ট থাকুন। আমরা কেবল তাঁদের উপযোগী করে আরেকটি রুটিন দিব ইনশাআল্লাহ্।]
.
আরেকটি কথা: ঘড়ি ধরে রুটিন অনুসরণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাছাড়া সবার রুটিন সমান হবে, এমন আশা করাও উচিত নয়। সবাই নিজেদের ফেভার থেকে এই রুটিন এদিক-সেদিক করে নিবেন। রামাদানের ইবাদত করুন স্বচ্ছন্দে; আগ্রহ নিয়ে; ভালোবাসার সাথে। নিজের উপর প্রেশার নিয়ে ইবাদত-বন্দেগীকে বিরক্তির পর্যায়ে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে শেষমেষ কিছুই হবে না। আল্লাহ্ আমাদের তাওফিক দান করুন। সাহায্যকারী ও তাওফিকদাতা একমাত্র তিনিই।
#Tasbeeh


Next Post Previous Post