রোজার মাসের আমল দোয়া এবং রুটিন - Ramzan Maser Amol ২০২৪

রোজার মাসের আমল দোয়া এবং রুটিন ২০২৪ -  রমাদানের দিনলিপি 


আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এই রমযান মাস যা তোমাদের কাছে আগমন করেছে। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।
(সুনানে আন-নাসায়ী, ২১০৩)

এ বছর টা আমাদের জন্য এক আযাবময় বছর এ আযাবের সময় যদি এ রমজান মাসটাকে কাজে লাগাতে না পারি গুনাহ মাফ করাতে না পারি, আল্লাহর রহমত অর্জন করতে না পারি এর থেকে দু:খ জনক বিষয় আর কিছু হতে পারে না।

তাই আসুন সব কিছু ভুলে সব কিছু বর্জন করে এই ৩০ টা দিন আল্লাহর জন্য কুরবান করে দেই,
আল্লাহ আমাদের সবাই কে এ মাসে আল্লাহর রহমত,মাগফিরত ও নাজাত লাভের তৌফিক দান করুক।
Md Eyasin Arafat Rafi

রোজার মাসের দোয়া রুটিন

রমাদানের দিনলিপি - নায়লা নুযহাত  

রামাদানের রুটিনের বিষয়টা বরাবরই, ব্যক্তিগত। সবার কাজের চাপ একরকম না। বাড়তি সময়ও একজনেরটা আরেকজনের মত না। একরকম না বাসার পরিবেশ। তাই, একটি রুটিন দিয়ে সকলের জীবন খাপ খাওয়ানো সম্ভব নয়। তারপরও, নীচে একটি আন্দাজ দেয়া হলো, রামাদানে কিভাবে একটি রুটিন করা যায়, তার।

প্রথমত, যেই কাজগুলো ফিক্সড, যেমন ঘুম, খাওয়া, রান্না, অফিস ইত্যাদি, সেসবের সময়টা ফিক্সড থাকতে হবে। কারুর নাইট ডিউটি থাকলে সে দিনে ঘুমাবে, তার ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, তাহলে তার এটাই ফিক্সড রাখতে হবে। একেকদিন একেক রকম চললে রুটিন মানা যায় না। যার রাতে ঘুমানোর অভ্যাস, সে সেটা বজায় রাখবে। যার কখনও ঘুম হয় আর কখনো হয় না, সে রাখবে বিকল্প আরেকটি প্লান। ঘুম হলে কোন সময়ে ইবাদত করবে, সেই প্ল্যান। আর, ঘুম না হলে সেই সময়টা কিভাবে ভালো কাজে লাগবে, সেটাও। এগুলো কেবল মাত্র উদাহরণ। মোটকথা, রামাদানের রুটিন করার আগে, নিজের জীবনের সাধারণ একটা রুটিন থাকতে হবে। এলোমেলো জীবনযাপন কারুর জন্যই না, একজন মুসলিমের জন্য তো নয়ই!

এবার আমরা দেখি সাধারণ একটি রুটিন দেখতে কেমন হতে পারে। এখানে একজন বোনের একটা দিন কিভাবে যেতে পারে, সেটা দেখবো।

● সকাল ৯টা: দিন শুরু করার জন্য এটা অনেক লেট। কিন্তু, রামাদানে সকলে একটু ধীরে সুস্থেই দিন শুরু করেন। কোনোকিছু মুখস্থ করার থাকলে এটা হচ্ছে আদর্শ সময়। হতে পারে সূরা, অথবা দোয়া। 

● সকাল ১০টা:
বাসার টুকটাক দৈনন্দিন কাজ। (আমরা আগের পোস্ট, লিংক কমেন্টে আছে, আলোচনা করেছি যে, কাজ কিভাবে মিনিমাম রাখবো।)

● সকাল ১১টা: 
রান্না। এটাও আমরা আগেই আলোচনা করেছি। সব গোছানো থাকবে। খুব অল্প সময়ে রান্নার কাজ শেষ।

● দুপুর ১২:৩০টা: 
যোহরের সালাত। সুন্দর করে, ধীরে সুস্থে, সুন্নাহ এবং ফরজ সালাত আদায় করা। এই টার্গেট রাখা যে, তাড়াহুড়া না। ভাবা যে, এটা আমার একান্ত সময় আমার রবের সাথে। তাড়া কিসের? সালাতের পরে যিকির গুলো করা। এই সময়টা, সুন্দর সময় কিছু পড়ার জন্য। দিনে যতটুকু তিলাওয়াত করার কথা, সেটা প্রতি সালাতের পর ভাগ করে নেয়া যায়। ছোট ছোট হাদিস পড়া যায়। সন্তানদের নিয়ে বসা যায়, কিছু আলোচনা করার জন্য। 

● দুপুর ১:৩০টা: ছোট বা বৃদ্ধ কেউ বাসায় থাকলে তাদের খাওয়ানো, আর তারপর সব গুছিয়ে রাখা। 

● দুপুর ২:৩০টা:
বিশ্রাম। এই সময় ইসলামের ইতিহাসের উপর কোনো বই পড়া যেতে পারে। শোনা যেতে পারে কোনো আলেমের লেকচার।

● বিকাল ৪টা:
আসরের সালাত, এবারও, সুন্দর করে, ধীরে সুস্থে। তারপর আবার, সালাতের পরের দোয়া, বিকালের যিকির, কিছু তিলাওয়াত, আলোচনা, ব্যক্তিগত দোয়া।

● বিকাল ৬টা:
এমন ইফতার প্ল্যান করা যেটায় সবার পেট ভরবে, কিন্তু প্রস্তুত করতে এই এক ঘন্টা সময়ের বেশী লাগবে না। হ্যাঁ, এই এক জায়গায়, প্ল্যানিংটা ভালো হতে হবে। যেন সত্যিই, ওই একটা ঘন্টার বেশী ব্যয় না হয়। বাসার মানুষকে আগে থেকেই এই বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। হতে পারে এক মাস আগে থেকে, এক বছর আগে থেকে, অথবা ক্ষেত্র বিশেষে কয়েক বছর ধরেই। বুঝাতে হবে যে, আমরা ইবাদতের জন্য সব আনন্দ ছেড়ে দিচ্ছি না। কিন্তু, আনন্দেরও একটা সীমা রাখতে হবে। 

● সন্ধ্যা ৭:৩০টা:
মাগরিবের সালাত। যিকির। অনেকের এই সময়ে বিশ্রাম প্রয়োজন। অনেকের চা না হলে কষ্ট হয়। তাই এখানে আমরা আর বেশী সময় দিচ্ছি না। পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্যেও এটা উত্তম সময়।

● রাত ৯টা:
এর মাঝে রাতের খাওয়া, বাসার কাজ গুছানো হয়ে যাওয়া উচিত। সবার খাওয়া না হলেও, খাবার গুছিয়ে রেখে দেয়া যেতে পারে। পরিবারের যারা নিজেরা নিয়ে খেতে পারেন, তাদের জন্য বসে থাকার ব্যাপার থাকে না তাহলে।

এবার হলো রামাদানের সবচেয়ে আনন্দময় সময়। রামাদানের আগেই ঠিক করে নিন, এই সময়টা কিভাবে কাটবে? মুখস্থ যাদের আছে কুরআনের সূরা, তারা সালাতে রিভিশন দিতে পারেন। যাদের মুখস্থ নেই, তারা দেখে দেখে তিলাওয়াত করতে পারেন। সেটা না করতে চাইলে, সেজদায় বেশী বেশী করে দোয়া করতে পারেন। সালাত কিছু রাকাত পড়ার পর বাকি সময়টা তিলাওয়াত, তাফসীর পড়ায় ব্যয় করতে পারেন। বিতরের সালাত বাকি রেখে দেয়া যায়।

● রাত ১০:৩০টা: 
এখন থেকে নিয়ে এক ঘন্টার মাঝে ঘুমের প্রস্তুতি নিতে হবে। এই এক ঘন্টা সময় বাসার টুকটাক কাজ, পরিবারের মানুষদের সাথে গল্প, মেসেজের উত্তর দেয়া ইত্যাদিতে চলে যাবে। যদিও, যথাসাধ্য আগে ঘুমানো ভালো। আর হ্যাঁ, ওই মেসেজের ব্যাপারটা: দিনে একবার হলেই ভালো। 

● রাত ১১:৩০টা:
ঘুমের আগের যিকিরগুলো পড়া। তারপর এলার্ম দেয়া। রাত দুইটার। অথবা আড়াইটা। ফজরের দুই ঘন্টা আগে। 

● রাত ২টা:
এই সময়টা, তাহাজ্জুদের সময়। ভাত বসিয়ে সালাতে দাঁড়ানো যায়। রাইস কুকার থাকলে সেই নিয়ামত ব্যবহার করার এটাই সর্বত্তম সময়! আবার তারাবীর মতোই, নিজের প্ল্যান অনুযায়ী সময়টা ব্যয় করতে হবে। তবে, দোয়ার পরিমাণ এখানে আরো বেশী হবে। আর বিতরের সালাতও এসময় আদায় করা লাগবে।

● রাত ৩:১৫টা:
সেহরী।

● ফজর:
সালাত ধীরে ধীরে, সুন্দর করে আদায় করা। 
যিকির গুলো পড়া। 

এখানে সম্ভব হলে, সূর্য ওঠা পর্যন্ত তিলাওয়াত করা। তারপর, সূর্য ওঠার দশ পনেরো মিনিট পর, দুই দুই করে চার রাকাত নফল সালাত আদায় করে, ঘুমাতে যাওয়া। 

----------------------

এই হলো অতি সাধারণ রুটিন। অনেকের এখানে কিছু কমাতে হবে নিজের অবস্থার উপর নিৰ্ভর করে। ওই যে বললাম, কারুর সাথে কারুর মেলে না। কিন্তু নিজের মত করে এমন প্ল্যান করে নেয়ার সুযোগ সবারই আছে।

কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখা খুব দরকার। 

নিজের সালাতের সময়ে সন্তানেরা কী করবে? ট্যাব ধরিয়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। উঠতি বয়সের সন্তান থাকলে তাদের কিছু নিয়ে ব্যস্ত না করে নিজেরা ব্যস্ত হওয়া যাবে না। তাদের আল মাসজিদ আল হারামের তারাবী দেখতে দেয়া যায়। এটার অনেক উপকার আছে। আর কোনো উপায় না থাকলে, সালাত কম আদায় করে তাদের নিয়েই উপকারী কিছু করা। একত্রে বই পড়া, অথবা লেকচার শুনা। ইত্যাদি। 

আরেকটি বিষয় হলো, হুলুস্থুল রুটিনের দরকার নেই। বাস্তবসম্মত রুটিন দরকার। আর, এই রুটিনের একটা ফোকাস থাকতে হবে দৈনন্দিন ইবাদতগুলো সুন্দর করা, সেগুলোর অভ্যাস করা। যেন, রামাদানের পরও সেগুলো থাকে। তাহলেই না পরের রামাদানে আরো উপকারী কিছু টার্গেট করা সম্ভব!

তিলাওয়াতে যেমন সময় দেয়া যায়, তেমনি সেই সময়টা দ্বীন শিক্ষায় ও দেয়া যায়। আর, হারাম কিছু নিয়ে সময় ব্যয় করার তো প্রশ্নই আসে না। বরং, হালাল কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কাজও কমিয়ে ফেলতে হবে। এই সময়টা যথাসম্ভব মোবাইল ফোন নামের ফিতনা থেকে দূরে থাকতে হবে।

আল্লাহ যেন তৌফিক দেন, সুন্দর ভাবে, তাঁর ইবাদতে পরিপূর্ণ একটি রামাদান পার করার। যার প্রতিটা মুহূর্ত, আমাদের পক্ষ্যে সাক্ষ্য দিবে।
Next Post Previous Post