নারীবাদ ও ইসলাম : ফেমিনিজম কিভাবে ধাপে ধাপে মুসলিমকে রিদ্দার দিকে নিয়ে যায়?

 এ লেখায় আমার উদ্দেশ্য হলো নারীবাদ কীভাবে ধাপে ধাপে একজন মুসলিমকে রিদ্দার দিকে নিয়ে যায়, তা তুলে ধরা। আমি আশা করি এ বিষয়টা স্পষ্ট হলে মুসলিমরা বাস্তবতা উপলব্ধি করবে এবং নারীবাদের বিরুদ্ধে নীরবতা ভাঙবে। তাহলে রিদ্দার পথে একজন মুসলিম ফেমিনিস্টের যাত্রার কথা শোনা যাক।

.
প্রথম ধাপ:

শুরুটা হয় যৌক্তিক কিছু অভিযোগ, কিছু ক্ষোভ দিয়ে। এমন অনেক মুসলিম পুরুষ আছে যারা স্ত্রীর হক্ব আদায় করে না, স্ত্রী ওপর যুলুম করে। এমন অনেক মুসলিম প্রতিষ্ঠান আছে যারা এই যুলুমের বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়। নারীর প্রয়োজন এবং তাকে উপযুক্ত সহায়তা দেয়ার দিকগুলো তারা উপেক্ষা করে।
.
এমন অনেক মুসলিম দেশ আছে, যেখানে এ ধরনের যুলুমগুলোকে একধরনের সামাজিক বৈধতা দেয়া হয়। অনেক সমাজে কন্যাসন্তানকে অবহেলা করা হয়। সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হলো যারা এই যুলুমগুলো করে অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের যুলুমকে দ্বীন ইসলামের নামে বৈধতা দিতে চায়।
.
এই সমস্যাগুলো আছে,এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। একইসাথে এটাও বোঝা দরকার যে এই সমস্যাগুলোর সমাধান নারীবাদ না। এর সমাধান হলো ইসলামী জ্ঞানের যে কমতি আছে, শরীয়াহর ব্যাপারে যে অজ্ঞতা আমাদের মধ্যে আছে সেটা দূর করা।
.
এই জ্ঞান মানুষের মধ্যে প্রচারিত হয় হক্বপন্থী আলিমদের মাধ্যমে। ওইসব আলিম ও দাঈদের মাধ্যমে, যারা মডার্নিসম, লিবারেলিসম এবং নারীবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত। দুঃখজনকভাবে, এই ইলম আজ দুর্লভ। ফলে অনেক মুসলিম নারী (এবং পুরুষ) নিজ হতাশা এবং তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে নারীবাদকে। এভাবেই শুরু হয় নারীবাদের পথে একজন মুসলিমের পথচলা।

.
নারী নির্যাতন যদি অসুখ হয় তাহলে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা হলো এর সহজাত, প্রাকৃতিক চিকিৎসা। অন্যদিকে নারীবাদ হলো এমন এক বিষাক্ত ওষুধ, যার ফলে রোগ হয়তো অল্প কিছুটা দূর হবে কিন্তু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় একদিকে রোগী মরার দশা হবে অন্যদিকে আরও দশটা নতুন অসুখ দেখা দেবে।
.
নারী নির্যাতনের বিষয়টা নারীবাদ কীভাবে উপস্থাপন করে?
.
নারীবাদ তারস্বরে চেঁচিয়ে বলে, ‘সবকিছুর মূলে হলো পুরুষতন্ত্র।’নারীবাদের বক্তব্য হলো–পুরুষ জাতটাতেই সমস্যা। যেসব নারী পুরুষতন্ত্রকে মেনে নিয়েছে তারাও সমস্যার অংশ। নারীবাদের মতে, পুরুষরা সহজাতভাবে নারীকে শোষণ আর নির্যাতন করতে চায়। চায় নারীর দুর্বলতার সুযোগ নিতে। এটা হলো বাস্তব সমস্যা আর ন্যায্য অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ ভাষার ব্যবহার। আর একসময় সমস্যাকে ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে ভাষাই।
.
.
দ্বিতীয় ধাপ:
=======
প্রথম ধাপে ক্ষোভ এবং অভিযোগের কারণ ছিল কিছু পুরুষ (এবং নারীর) যুলুম। দ্বিতীয় ধাপে অভিযোগ ও ক্ষোভগুলো বাস্তবতা থেকে মোড় নেয় নানা বিমূর্ত, মতাদর্শিক দিকে।
.
- অমুক ইসলামী কনফারেন্সে কোনো নারী বক্তাকে রাখা হয়নি কেন? - অনুষ্ঠানের পোস্টারে পুরুষ বক্তাদের ছবি থাকলেও নারী বক্তাদের ছবি নেই কেন?
- হিজাব নিয়ে পুরুষ ইমামরা কেন লেকচার দিচ্ছে? মুসলিম নারীরা কী পরবে সেটা নিয়ে পুরুষরা কেন কথা বলবে?
- নারী ও পুরুষের সালাতের জায়গার মাঝখানে পার্টিশান কেন? আজকের যুগেও নারীপুরুষের মেলামেশায় কেন এত কড়াকড়ি? কেন নারী আর পুরুষের স্থান পৃথক হবে?
- পুরুষ হবার কারণে বিশেষ সুবিধা পাবার কথা মুসলিম পুরুষরা কেন স্বীকার করে না?
- নারীদের কেন শালীন আর বিনম্র হতে হবে? পুরুষ কেন নারীর বিষয়ে কথা বলবে?
- পুরুষরা কেন নারীবাদ নিয়ে কথা বলবে?
.
নারীবাদ ঢালাওভাবে পুরুষের বিরুদ্ধে শোষক ও নিপীড়ক হবার অভিযোগ তোলে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাওয়া অভিযুক্তের অধিকার। কিন্তু যখনই কোনো পুরুষ সেটা করতে যায় তখন সেটা হয়ে যায় ‘পুরুষতান্ত্রিক বয়ান’। নারীবাদের কাছে সব প্রশ্নের মুখস্থ উত্তর একটাই–পুরুষতন্ত্র। সবকিছুর জন্য দায়ী পুরুষতন্ত্র।
.
প্রথম ধাপে সমস্যাগুলো সংজ্ঞায়িত হয়েছিল ইসলামের অবস্থান অনুযায়ী নারী ও পুরুষের হক এবং যুলুম ও ইনসাফের জায়গা থেকে। দ্বিতীয় ধাপে এসে আলোচনার কাঠামো গড়ে ওঠে এবং চালিত হয় পশ্চিমা নারীবাদী এবং লিবারেল অবস্থানকে কেন্দ্র করে। এর প্রমাণ হলো দ্বিতীয় ধাপের মুসলিম নারীবাদীরা এমন অনেক বিষয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় যেগুলো কুরআন-সুন্নাহ থেকে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং ইসলামী আইন ও শরীয়াহর অবিচ্ছেদ্য অংশ।
.
যেমন : পর্দা, ঘরের বাইরে নারীর চলাফেরা, নারী ও পুরুষের মেলামেশা; বিশেষ করে গাইর-মাহরাম পুরুষের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে শরীয়াহর সীমারেখা, ইত্যাদি।
.
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দ্বিতীয় ধাপের মুসলিম নারীবাদীরা ইসলাম সম্পর্কে খুব একটা জানে না। যেসব বিষয়ে তারা আপত্তি তোলে সেগুলোর ব্যাপারে ইসলামী আইন এবং কুরআন-সুন্নাহর দলিলের অবস্থান তাদের অজানা। এ বিষয়গুলো যখন জানানো হয় তখন তারা এগিয়ে যায় তৃতীয় ধাপের দিকে।
.
.
তৃতীয় ধাপ:
=======
এই ধাপে এসে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় ইসলামী ইলম এবং ইলমের সিলসিলাকে। দ্বিতীয় ধাপে অভিযোগ ছিল মুসলিম সমাজের বিভিন্ন আচার আর বিধিবিধান নিয়ে। তৃতীয় ধাপে এসে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয় মুসলিম উম্মাহ, বিশেষ করে অতীত প্রজন্ম এবং আলিমগণকে।
.
নারীবাদের দর্শন অনুযায়ী, নারীদের আজ যে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে তার মূল কারণ পুরুষতন্ত্র। পুরুষতন্ত্র হলো এমন এক অশুভ ব্যবস্থা, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নারীদের শোষণ করে আসছে। কাজেই নারীবাদের জায়গা থেকে এটা ধরে নেয়া স্বাভাবিক যে অতীত প্রজন্মগুলোর সময়েও পুরুষতন্ত্র ছিল এবং আজকের চেয়ে আরও শক্তিশালী ছিল।
.
এমন অবস্থায় একজন নারীবাদী নিজেকে প্রশ্ন করে–
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে যে আলিমরা এসেছেন তাঁরা সবাই কি এই পুরুষতন্ত্রের অধীনেই ছিলেন না? পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা আর নারীবিদ্বেষের লেন্সের আলোকেই কি তাঁরা তাদের ফতোয়াগুলো লেখেননি?
.
যে নারীবিদ্বেষ আজকের আলিমদের মধ্যে আমরা দেখি সেটা কি কয়েকশ কিংবা হাজার বছর আগের আলিমদের মধ্যে আরও বেশি মাত্রায় ছিল না?
.
ইসলামের ইতিহাসের যেকোনো সময়ের যেকোনো আলিমের বই খুললে আমরা এমন অসংখ্যা অবস্থান পাব যেগুলো শরীয়াহর দিক থেকে, কুরআন ও সুন্নাহর মানদণ্ডে সঠিক। কিন্তু নারীবাদের দৃষ্টিতে ‘পুরুষতান্ত্রিক’ এবং ‘নারীবিদ্বেষী’।
.
এ কারণেই তৃতীয় ধাপে এসে এমন অনেক নারীকে দেখা যায়, একসময় যারা খুব আগ্রহ নিয়ে ইলম অর্জনের চেষ্টা করত–হয়তো কোনো আলিমের অধীনে কিংবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে পড়ত, কিন্তু তারা যখন আলিমগণের লেখায় এমন কিছু খুঁজে পায়, যা নারীবাদের সংজ্ঞানুযায়ী ‘ভুল’ বা ‘ঘৃণ্য’, তখন ইলম থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। পুরো মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের আলিমগণ তাদের চোখে পরিণত হয় পুরুষতন্ত্রের প্রতিভূতে।
.
মুসলিম নারীবাদী তখন সিদ্ধান্ত নেয় সে কোনো আলিমের (অতীত কিংবা বর্তমান) কথা শুনবে না। সে সরাসরি কুরআন আর সুন্নাহর কাছে যাবে। কেবল কুরআন আর সুন্নাহই পুরুষতন্ত্রের কালো থাবা থেকে মুক্ত।
কিন্তু…
.
.
চতুর্থ ধাপ:

চতুর্থ ধাপে পৌছানোর পর মুসলিম ফেমিনিস্টরা কুরআন ও সুন্নাহয় তারা এমন অবস্থান দেখতে পায়, যা নারীবাদের মানদণ্ডে টিকে না।
.
সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াত
সূরা বাক্বারার ২২৮ নং আয়াত
দুই জন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান
উত্তরাধিকারের ব্যাপারে শরীয়াহর অবস্থান
আক্বল ও দ্বীনে নারীর অসম্পূর্ণতা
জাহান্নামীদের অধিকাংশ হবে নারী
যদি কোনো মানুষকে সিজদাহ করার অনুমতি থাকত তাহলে স্বামীকে সিজদাহ করার হাদীস ... [১]
.
মুসলিম ফেমিনিস্ট এমন আয়াত ও হাদীসের মুখোমুখি হয়, যেগুলো নারীবাদের অবস্থান থেকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব না। কীভাবে সে নারীবাদের আদর্শের সাথে এই আয়াত ও হাদীসগুলোর সমন্বয় করবে? কীভাবে আল্লাহ্ এতগুলো আয়াত এবং হাদীস নাযিল করলেন, যেগুলো নারীবাদের সংজ্ঞানুযায়ী নারীবিদ্বেষ ছাড়া আর কিছুই না?
.
মরিয়া হয়ে সে সমন্বয়ের চেষ্টা করে–
.
'হয়তো এই সবগুলো আয়াত আর হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হয়তো চেষ্টা করলে নারীবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো-না-কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যাবে। যে ওয়াহিকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্পষ্টভাবে বুঝেছে, যা এখনো পর্যন্ত প্রজ্ঞা, ভাষাগত উৎকর্ষ এবং ন্যায়ের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত হয়ে আছে–হয়তো সেটাকে গত ১০০ বছরের সেক্যুলার জেন্ডার স্টাডিস প্রফেসরদের অসংলগ্ন প্রলাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে'!
.
কিন্তু এই মনোভাব খুব বেশি দিন ধরে রাখা যায় না। চতুর্থ ধাপে পৌঁছানোর পর ‘মুসলিম ফেমিনিস্ট’ উপলব্ধি করে যে বৃত্তকে কখনো ত্রিভুজ বানানো যায় না। নারীবাদের সাথে ইসলামকে খাপ খাওয়ানোর একমাত্র উপায় হলো কুরআনের ঐশ্বরিক উৎসকে অস্বীকার করা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহর প্রয়োগযোগ্যতা প্রত্যাখ্যান করা।
.
এই ধাপের নারীবাদীদের মধ্যে এমন অনেককে আপনি পাবেন যারা বলে–
.
"আমাদের কুরআনকে না বলা শিখতে হবে"। [২]
এমনকি এমনও মানুষ পাবেন, যারা নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) ব্যাপার কুৎসিত-সব শব্দ ব্যবহার করে, কারণ তাঁরা নাকি ‘পুরুষতান্ত্রিক’!
ইয়াদুবিল্লাহ!।
.
চতুর্থ ধাপে এসে নারীবাদীরা অবলীলায় এমন-সব কথা বলে, যা স্পষ্ট কুফর। একই সাথে এমন-সব বিষয়ের পক্ষে প্রচারণা শুরু করে যেগুলো ইসলামের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
.
যেমন : জামাতের সালাতে কোনো মহিলাকে ইমাম বানানো, মুসলিম নারীর সাথে কাফির পুরুষের বিয়ে, সমকামিতার বৈধতা, ট্র্যান্সজেন্ডারিসমের পক্ষে অবস্থান, যিনা এবং ব্যভিচারকে জায়েজ মনে করা, ইত্যাদি।
.
এটা কীভাবে সম্ভব?
.
কারণ, চতুর্থ ধাপে পা দেয়া ‘মুসলিম’ ফেমিনিস্ট এরই মধ্যে ইতিহাসের সব আলিমের অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করেছে। শরীয়াহর চূড়ান্ত, অপরিবর্তনীয় এবং আবশ্যক কোনো অবস্থান থাকতে পারে যা মুসলিমদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করবে–এটাও সে অস্বীকার করে বসেছে। যখনই কেউ বলে–আল্লাহ্ আমাদের এমনটা করতে নির্দেশ দিয়েছেন–তখনই পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধি সাব্যস্ত করে তাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়। কারণ, তাদের কাছে কর্তৃত্বের ধারণাটাও পুরুষতন্ত্রের ফসল।
.
খুব বেশি দিন চতুর্থ ধাপে থাকা যায় না। পরস্পরবিরোধী দুটো অবস্থান (ইসলাম এবং নারীবাদ) একসাথে নিজের মধ্যে ধারণ করা অত্যন্ত ক্লান্তিকর একটা কাজ। এমন অবস্থায় পৌঁছে যাবার পর, এমন-সব অবস্থান গ্রহণ করার পর নিজেকে মুসলিম মনে করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
.
সাথে যুক্ত হয় ‘মুসলিম’ ফেমিনিস্টদের অদ্ভুত কথাবার্তা এবং কুফরি অবস্থানের কারণে অন্যান্য মুসলিমদের কাছ থেকে আসা যৌক্তিক বিরোধিতা ও সমালোচনা। সবকিছু মিলিয়ে তাদের মধ্যে তিক্ততা বাড়তে থাকে। নিজের মুসলিম পরিচয় নিয়েও তাদের মধ্যে তিক্ততা কাজ করে।
.
আর তারপর…
.
.
পঞ্চম ধাপ:
=======
পঞ্চম ধাপে এসে ‘মুসলিম’ ফেমিনিস্ট প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়। পৌঁছে যায় খাদের কিনারায়।
.
"আল্লাহর যদি নারী ও পুরুষের ব্যাপারে সাম্যবাদী হন তাহলে নিজের ব্যাপারে কুরআনে কেন পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করলেন"?
.
"আল্লাহ্ কেন প্রথমে আদমকে (আলাইহিস সালাম); একজন পুরুষকে সৃষ্টি করলেন? কেন প্রথমে নারীকে সৃষ্টি করলেন না"?
.
"শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন একজন পুরষ? কেন নারী নন"?
.
"কেন আল্লাহর ওয়াহি নারীর মাধ্যমে না এসে পুরুষের মাধ্যমে এল"?
.
জন্ম নেয় একের পর এক প্রশ্ন। এই প্রশ্নের স্রোত একসময় তাকে নিয়ে যায় কুফর ও রিদ্দার অন্ধকারে। আর যে প্রশ্ন দিয়ে এ পথচলা শুরু হয়েছিল সেই প্রশ্নটাই শেষ ধাক্কা দিয়ে তাকে খাঁদে ফেলে দেয়–
.
"আল্লাহ্ কেন পুরুষতন্ত্রকে টিকে থাকতে দিলেন? আল্লাহ্ কেন হাজার হাজার বছর ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন নারীকে পরাধীন এবং ধর্ষিত হতে দিলেন?"
.
আর এই ধাপে এবং বাকি সব ধাপে নারীবাদের উত্তর একটাই–
.
"আল্লাহ্ বলে কেউ নেই। ধর্ম হলো পুরুষতন্ত্রের বানানো গল্প, যার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নারীকে পুরুষের অধীন করে রাখা"।
.
সমাপ্তি।
.
***
.
নারীবাদের সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো এটা একটা চেইন রিঅ্যাকশনের মতো। একজন মানুষ যখন সবকিছুকে ‘পুরুষতন্ত্র’ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে শুরু করে তখন বাকি ধাপগুলোতে যাওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সব ধরনের অবিচারকে পুরুষতন্ত্রের দোষ বলে চালিয়ে দেয়ার এই ব্যাখ্যা যদিও ভুল, কিন্তু এটা একটা সর্বগ্রাসী ব্যাখ্যা। আসলে পঞ্চম ধাপে থাকা ফেমিনিস্টরা আগের ৪ ধাপের মুসলিম ফেমিনিস্টদের চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সৎ। পঞ্চম ধাপের নারীবাদী তার আদর্শিক সমীকরণের চূড়ান্ত ধাপ পর্যন্ত গেছে। অন্যরা যায়নি।
(ইন শা আল্লাহ চলবে...]

নারীবাদ ও ধর্মবিদ্বেষ
নারীবাদের ধর্মবিদ্বেষের ইতিহাস পুরনো। পাঠক হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন–এখানে নারীবাদের কোন পর্যায় নিয়ে কথা বলা হচ্ছে? হয়তো সমস্যা নারীবাদে না; বরং নারীবাদের নির্দিষ্ট কোনো সংস্করণে?
.
আসলে সমস্যা নারীবাদেই। সমস্যা নারীবাদের মূল আদর্শেই। একটা উদাহরণ দিই। বর্ণবাদ ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। মানুষের গায়ের রং কিংবা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আচরণ ইসলাম কোনোভাবেই মেনে নেয় না। কিন্তু পৃথিবীর সব বর্ণবাদী দলের আদর্শ কিন্তু একরকম না। ক্যু ক্লাক্স ক্ল্যান, নিও নাৎসি, অলট-রাইট–সবার আদর্শ হুবহু এক না। তাদের চিন্তার সূক্ষ্ম তারতম্য আছে, ধরন এবং মাত্রায় আছে নানান পার্থক্য। কিন্তু শেষ বিচারে এই পার্থক্যগুলো তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ না, কারণ সবার মূল আদর্শ এক–বর্ণবাদ।
.
একইভাবে নারীবাদের বিভিন্ন পর্যায় আর সংস্করণগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সবার মূল আদর্শ এক। দয়া করে কেউ আবার এটা ভেবে বসবেন না যে আমি নারীবাদকে বর্ণবাদী বলছি। আমি কেবল উদাহরণ দিচ্ছি।
.
নারীবাদ এমন এক আদর্শ, যার মূলনীতিগুলো মেনে নিলে এবং সামগ্রিকভাবে গ্রহণ করলে, তা একজন মুসলিমকে ঈমানের সংকট এবং রিদ্দার দিকে নিয়ে যাবে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। কীভাবে প্রথম ধাপ থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে একজন মানুষ পঞ্চম ধাপের দিকে এগিয়ে যায় সেটা বুঝলে পুরো প্রক্রিয়া আমাদের সামনে স্পষ্ট হবে।
.
আর এতেও যদি পাঠক সন্তুষ্ট না হন তাহলে সরাসরি নারীবাদের শেকড়ের দিকে তাকানো যেতে পারে। নারীবাদের সবচেয়ে নামিদামি তাত্ত্বিকদের বলা কথার দিকে তাকালে বাস্তবতা পরিষ্কার হয়ে যায়। গোড়া থেকেই নারীবাদ ছিল একটা ধর্মবিরোধী মতাদর্শ। নারীবাদের প্রতিটা পর্যায়ের রথীমহারথীরা ছিল তীব্রভাবে ধর্মবিদ্বেষী।
.
নারীবাদের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঊনবিংশ শতাব্দীতে, সামাজিক আন্দোলন হিসেবে। এ আন্দোলনের মূল লক্ষ ছিল ভোটাধিকার ও সম্পদের মালিকানাসহ বিভিন্ন আইনি অধিকার। এটাকে বলা হয় নারীবাদের ফার্স্ট ওয়েভ বা প্রথম পর্যায়। তখন থেকেই নারীবাদীরা ধর্মকে নারীর পরাধীনতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে।
.
প্রথমদিককার নারীবাদীরা তাত্ত্বিকরা মনে করতেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল নারীঅধিকার খর্ব করার পেছনে ভূমিকা রাখে না; বরং ধর্মই হলো নারীবিদ্বেষী বিশ্বাস ও আচার-আচরণের মূল উৎস। নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেত্রীদের একজন, সুসান বি অ্যানথনি বলেছিল-
.
‘নারীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট শত্রু হলো গির্জার বেদি’। [১]
.
সুসান অ্যানথনি নিয়মিত ধর্মের সমালোচনা করত। ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্য অনুযায়ী সে ছিল অজ্ঞেয়বাদী। ধর্মের ব্যাপারে সে বলেছিল–
.
‘একদিকে একের পর ক্ষুধার্ত মুখ পাঠায়, অন্যদিকে সেই মুখে তুলে দেয়ার মতো খাবার দেয় না–তাদের এই ঈশ্বর কতই-না ভয়ংকর এক জীব’! [২]
.
সুসান বি অ্যানথনি আরও বলেছিল,
.
‘মহাবিশ্বের এমন কোনো স্রষ্টার কথা আমি ভাবতে করতে পারি না, আমার নতজানু হওয়া আর স্তুতিবাক্যের ওপর যার সন্তুষ্টি নির্ভর করে’। [৩]
.
ঊনবিংশ শতাব্দীর আরেক উল্লেখযোগ্য নারীবাদী হেলেন এইচ গার্ডনার। নারীর বিরুদ্ধে খ্রিষ্টধর্মের ‘অপরাধ’ আর নিপীড়ন’ নিয়ে অনেকে লেখাজোখা ছিলেন হেলেনের। সে লিখেছিল–
.
‘এই ধর্ম আর কিতাব (বাইবেল) নারীর কাছে দাবি করে সবকিছু। বিনিময়ে দেয় না কিছুই। এরা নারীর সমর্থন আর ভালোবাসা চায়, বিনিময় দেয় অত্যাচার, নিগ্রহ আর অবজ্ঞা …খ্রিষ্টধর্মীয় দেশগুলোতে নারীর বিরুদ্ধে যত অত্যাচার আর নিগ্রহ হয়েছে, সেগুলোর বৈধতা দিয়েছে বাইবেল আর টিকিয়ে রেখেছে গির্জার বেদি’। [৪]
.
গার্ডনারের ঘৃণা শুধু খ্রিষ্টধর্মের প্রতি ছিল না। Men, Women And Gods বইতে সে লিখেছিল–
.
‘ধর্মগুলো যদিও অতিপ্রাকৃত উৎস থেকে আসার কথা বলে, কিন্তু আমি মনে করি এই দাবিগুলোকে যাচাই করা উচিত মানবীয় বুদ্ধির আলোকে। আমাদের সর্বোচ্চ নীতিবোধ যদি ধর্মের কোনো বিধানকে মেনে নিতে অস্বীকার করে তাহলে সেই বিধান বাদ দিতে হবে। কারণ, ধর্মের একমাত্র ভালো জিনিস হলো নৈতিকতা। আর নৈতিকতার সাথে বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই।
.
নৈতিকতার সম্পর্ক দুনিয়াতে সঠিক কাজ করার সাথে, আর বিশ্বাসের সম্পর্ক পরকালের অজ্ঞাত বিষয় নিয়ে। একটা হলো সময়ের চাহিদা আরেকটা চিরন্তনের স্বপ্ন। নৈতিকতার ভিত্তি হলো সর্বজনীন বিবর্তন। বিশ্বাসের ভিত্তি হলো ‘ওয়াহি’। আর আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত ‘ওয়াহি’ এসেছে তার কোনোটাই নারীর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না।
.
মুসা কিংবা কনফুশিয়াস, মুহাম্মাদ কিংবা পল, ইব্রাহিম কিংবা ব্রিঘাম ইয়াং [৫] এসে আমাদের সামনে দাবি করে তার ধর্মমত ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। ঈশ্বর এদের কোনো একজনের সাথে বা সবার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে এই ধর্মগুলো দিয়েছে কি না, তার কোনো মূল্য আমাদের কাছে নেই। যদি তাদের ধর্মমত আমাদের নৈতিকতা, সুচিন্তা, উন্নত আদর্শ এবং বিশুদ্ধ জীবনবোধের সাথে খাপ না খায় তাহলে আমাদের ওপর এসব ধর্মের কোনো কর্তৃত্ব নেই।
.
তাদের মধ্যে কে আছে এই পরীক্ষায় পাশ করার মতো? আজ পর্যন্ত যত ‘ওয়াহি’ এসেছে, তার কোনটা ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে দাবি করতে পারে,
.
“আমি তোমাদের সর্বোত্তম বিকাশের সমকক্ষ, আমি আজও তোমাদের সর্বোন্নত চিন্তার পথ দেখাতে সক্ষম, আমার মধ্যে এমন কোন শিক্ষা নেই, যা তোমাদের ন্যায়বিচারের বোধের সাথে সাংঘর্ষিক?”
.
একটাও না’। [৬]
.
নারীবাদের প্রথম পর্যায়ের প্রথম সারির তাত্ত্বিকদের অনেকের লেখায় ধর্মের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ দেখা যায়। এদের মধ্যে ইলিসাবেথ ক্যাডি স্ট্যান্টন তো চরম উগ্র এবং উসকানিমূলক The Women’s Bible রচনার পেছনে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছিল। হাল আমলের কোনো মুসলিম নারীবাদী যদি ‘দা উইমেনস কুরআন’ লেখা শুরু করে তাহলে সেটা অভিনব কিছু হবে না; বরং তা হবে এক শ বছর আগের সেই ফার্স্ট ওয়েভ নারীবাদের অনুকরণমাত্র।
.
মনে রাখবেন নারীবাদের পর্যায়গুলোর মধ্যে প্রথম পর্যায়কে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম উগ্র এবং আপত্তিকর ধরা হয়। এর পরের প্রতি প্রজন্মে নারীবাদের ধর্মবিদ্বেষ আরও বেড়েছে।
.
নারীবাদের দ্বিতীয় পর্যায় বা সেকেন্ড ওয়েভের কথাই ধরুন। বলা হয় নারীবাদের সেকেন্ড ওয়েভের শুরু ফরাসী দার্শনিক সিমন দি ব্যুভয়ার হাত ধরে। ধর্মের প্রতি তার বিরোধিতা সিমন প্রকাশ করেছিল এভাবে–
.
‘পুরুষের বড় সুবিধা হলো পুরুষের লেখা নিয়মগুলোকেই ঈশ্বর বৈধতা দিয়েছে। আর পুরুষ যেহেতু নারীর ওপর কর্তৃত্ব করে তাই সার্বভৌম সত্তাও যে ধর্মমতে পুরুষকেই কর্তৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে, এটা বিশেষ সৌভাগ্যই বলতে হবে। ইহুদী, মোহাম্মাদান, খ্রিষ্টধর্মসহ অন্যান্য সব ধর্মে ঐশ্বরিক অধিকার বলে পুরুষই কর্তা। নিপীড়িত নারীর বিদ্রোহের যেকোনো চেতনা দমন করার জন্য স্রষ্টার ভীতি বরাবরই পুরুষের পক্ষে আছে।’ [৭]
.
সেকেন্ড ওয়েভের আরেক বিখ্যাত নারীবাদী, গ্লোরিয়া স্টাইন্যাম ধর্মের ব্যাপারে বলেছিল–
.
‘(ধর্ম) অবিশ্বাস্য মাত্রার জোচ্চুরি। ব্যাপারটা চিন্তা করে দেখুন। মৃত্যুর পরের পুরস্কারের আশায় বর্তমানে একটা বিশ্বাসকে আঁকড়ে থাকা! গ্রাহক ধরে রাখার জন্য কর্পোরেশানগুলো নানা পুরস্কারের অফার দেয়, কিন্তু তারাও মরণোত্তর পুরস্কার দেয়ার বুদ্ধি বের করতে পারেনি’। [৮]
.
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে স্টাইনেমকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আজকের নারীবাদের সবচেয়ে বড় সংকট কী’? জবাবে স্টেইনেম বলেছিল –
.
‘আজকের নারীবাদীরা ধর্মের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সোচ্চার না। আধ্যাত্মিক হওয়া এক জিনিস, ধর্ম আরেক জিনিস। ধর্ম হলো আকাশের রাজনীতি। আমার মনে হয় নারীবাদীদের ধর্মের বিরুদ্ধে আরও কথা বলা দরকার। কারণ, আমাদের নীরবতা ধর্মকে আরও শক্তিশালী করে’। [৯]
.
নারীবাদের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের এ ধর্মবিদ্বেষ আরও তীব্র হয় তৃতীয় পর্যায়ে এসে। এ পর্যায়ে এই বিদ্বেষ আবির্ভূত হয় নানান রূপে। যার একটি হলো বিভিন্ন জগাখিচুড়ি আধ্যাত্মিকতা আর বিকল্প ধর্মবিশ্বাস’-এর প্রতি ভক্তি।
.
উইমেন, জেন্ডার এবং সেক্সুয়ালিটির প্রফেসর সুসান শ’র মতে, বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন, গির্জা, সিনাগগ, মসজিদ) অবস্থার আলোকে বলা যায়, ‘পুরুষতন্ত্রই পৃথিবীর কর্তৃত্বশালী ধর্ম।’ আর ‘ধর্মগুলো লিঙ্গের (gender) যে ধারণা দেয় তাতে সমস্যা আছে। এই সমস্যা পুরো পৃথিবীর সমস্যা। তাই আমাদের এমন এক সংস্কার দরকার (তা বিপ্লবও হতে পারে), যা পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতার বেদিগুলো ভেঙে বিশ্বজুড়ে অন্তর্ভুক্তি, সাম্য, ন্যায়বিচার, শান্তি এবং ভালোবাসার এক পবিত্র আশ্রম গড়ে তুলবে।’
.
্যাডিকাল লেসবিয়ান নারীবাদী দার্শনিক ম্যারি ড্যালির মতে, ধর্ম প্রকৃতিগতভাবেই নারীকে নিগৃহীত করে। তার ওপর যুলুম করে। ড্যালির বক্তব্য অনুযায়ী–
.
‘গির্জার কাছে নারীর সমানাধিকার চাওয়া আর কেকেকে (Ku Klax Klan) এর কাছে কালো মানুষের সমানাধিকার চাওয়া একই কথা’। [১০]
.
তার উসকানিমূলক প্রবন্ধ “Sin Big” এ ড্যালি লিখেছে,
.
‘ইংরেজি সিন (পাপ) শব্দটি এসেছে ইন্দো-ইউরোপীয় “এস/es” ধাতুমূল থেকে। এস/es অর্থ অস্তিত্বমান হওয়া (to be)। সিন শব্দের এই উৎস আবিষ্কার করার পর আমি বুঝতে পারলাম, বর্তমান পৃথিবীর ধর্ম হলো পুরুষতন্ত্র। আর পুরুষতন্ত্রের জাঁতাকলে আটকা পড়া মানুষের জন্য অস্তিত্বমান হবার পূর্ণাঙ্গ অর্থ হলো পাপ করা (to sin)’। [১১]
.
এ লেখায় ড্যালি নারীদের পাপ করায় সাহসী হতে বলছে। কারণ, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেটাকে পাপ বলা হচ্ছে, সেটাই নাকি পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিবাদ। পুরুষতন্ত্র ধ্বংস করতে হলে ধর্মীয় বিধানগুলোকে ধ্বংস করতে হবে। কারণ, ধর্ম হলো পুরুষতন্ত্র আর পুরুষতন্ত্র হলো ধর্ম। এ দুয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। একটাকে ধ্বংস করা মানে অন্যটাকেও ধ্বংস করা।
.
নারীবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো এ ধরনের কথাবার্তা দিয়ে ভর্তি। এগুলো সব একসাথে করতে গেলে কয়েক ভলিউমেও হয়তো ফুরাবে না। মুসলিম নারীবাদীদের মধ্যেও আমরা এই ধর্মবিদ্বেষ দেখতে পাই, বিশেষ করে পঞ্চম ধাপে গিয়ে। আসলে যত যাই হোক, শিষ্য তার গুরুর কাছ থেকেই শেখে...।
.
নারীবাদী দর্শনের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে ধর্মের প্রতি তীব্র ঘৃণা এবং শ্লেষাত্মক মন্তব্য। নারীবাদের ইতিহাস থেকে ধর্মবিদ্বেষকে আলাদা করার উপায় নেই। একজন মুসলিম যখন এই আদর্শকে গ্রহণ করবে তখন তা অবশ্যই তার ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং নষ্ট করবে।
.
(ইন শা আল্লাহ চলবে)
#নারীবাদ
#সংশয়বাদী
- Asif Adnan
Next Post Previous Post