স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরা | বোবায় ধরা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে, বাচার দোয়া ও উপায় এবং প্রতিকার


স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরা থেকে বাচার উপায় দোয়া এবং আরো কিছু টিপস | ইসলামের দৃষ্টিতে বোবা ধরা এবং প্রতিকার  


  1. ইসলামে বোবায় ধরা
  2. বোবায় ধরা
  3. বোবা ধরা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে
  4. বোবায় ধরা থেকে বাচার উপায়

বোবায় ধরা ইংরেজি কি?

বোবায় ধরা ইংরেজি: Sleep paralysis

  • বোবায় ধরা থেকে বাচার উপায় ও দোয়া
  • বোবায় ধরলে করণীয়
  • ইসলামের দৃষ্টিতে বোবা ধরা
  • বোবায় ধরার প্রতিকার
  • বোবায় ধরা ইসলাম

বোবায় ধরা থেকে বাচতে ঘুমানোর আগের আমল গুলো করতে পারেন। আর অবশ্যয় পবিত্র অবস্থায় পরিস্কার জায়গায় ঘুমাবেন।

রাসুল (সাঃ) ঘুমানোর পূর্বে যে আমলগুলো করতেন-
১- ঘুমানোর পূর্বে ওযু করে নেওয়া- আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ওযু অবস্থায় রাত্রি যাপন করে তার অন্তর্বাসে এক ফিরিশ্তাও রাত্রিযাপন করেন। সুতরাং যখনই সে জাগ্রত হয় তখনই ঐ ফিরিশ্তা বলেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার বান্দা অমুককে ক্ষমা করে দাও, কারণ সে ওযু অবস্থায় রাত্রি যাপন করেছে।’’(ইবনে হিববান, সহীহ তারগীব ৫৯৪) 

তিনি আরো বলেন, যে কোনও মুসলিম যখনই ওযু অবস্থায় রাত্রিযাপন করে, অতঃপর রাত্রিতে (সবাক্) জেগে উঠে ইহকাল ও পরকাল বিষয়ক কোন মঙ্গল প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তাকে তা প্রদান করে থাকেন।’’(আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, সহীহ তারগীব ৫৯৫)

২- শয়ন অবস্থায় দুই হাতের তালু একত্রে মিলিয়ে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে তাতে ফুঁ দিবে : তারপর দুই হাতের তালু দ্বারা দেহের যতোটা অংশ সম্ভব মাসেহ করবে। মাসেহ আরম্ভ করবে তার মাথা, মুখমণ্ডল ও দেহের সামনের দিক থেকে। (এভাবে ৩ বার করবে অর্থাৎ সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে মাসাহ করবে তাহলে ১ বার হল তারপর আবার সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে মাসাহ করবে তাহলে ২ বার হল এরপর আরও ১ বার করবে সর্বমোট ৩বার) (বুখারি-৫০১৭)

৩- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসী পড়বে শয়তান সারা রাত তার নিকটে যাবে না।(বুখারি-২৩১১)

৪- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত (আ-মানার রাসূলু--) তেলাওয়াত করবে এটা তার জন্য যথেষ্ট হবে ”। (বুখারি- ৪০০৮)

৫- নবী (সাঃ) বলেছেন, রাতে (কুল ইয়া আইয়্যু হাল কা-ফিরুন) (অর্থাৎ সূরা কা-ফিরুন) পাঠ করা শির্ক থেকে মুক্তি পেতে উপকারী। (সহীহ তারগীব-৬০২)

৬- একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার সাহাবাদের বললেন, “তোমাদের কেউ কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অসমর্থ হবে?” এতে সকলকে বিষয়টি ভারী মনে হল। বলল, একাজ আমাদের মধ্যে কে পারবে, হে আল্লাহর রাসূল?! তিনি বললেন, সূরা ইখলাস হল এক তৃতীয়াংশ কুরআন।(বুখারী- ৫০১৫) [১ বার সুরা ইখলাস পড়া]

৭- “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন তাঁর ডান হাত তাঁর গালের নীচে রাখতেন, তারপর এ দো‘আটি বলতেন।”
« اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا».
(আল্লাহুম্মা বিস্‌মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া)।
“হে আল্লাহ ! আপনার নাম নিয়েই আমি মরছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হবো।(বুখারি- ৬৩২৪)

নিচে একটি বাস্তব ঘটনা পড়ুন। 

আমার বাসার পেছনে একসময় ঝোপঝাড় ছিলো। এখন অবশ্য পরিষ্কার করে আধাপাকা একটা বাসা করা হয়েছে। কেউ বলে, অনেক আগে এখানে নাকি শ্মশান ছিলো। বাসা যখন তিনতলা করা হচ্ছিলো তখন কাঠ-মিস্ত্রী দরজাগুলো বানিয়ে দিচ্ছিলেন। তিনি হিন্দু ছিলেন। তার চেহারাটা এখনো আমার মনে আছে। চোয়াল ভাঙ্গা। গোঁফ আছে। আর চোখ দুটো কোটরের বেশ ভিতরে।
তিনি একদিন হুট করে আমার আপাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা তিনতলার একদম কোনার রুমে কে থাকবে?

রুমটার সাথে এটাচড বাথরুম ছিলো। তাই আপা বললেন, আমি থাকব।

লোকটা বলল, আপনাদের বাসার পেছনে সমস্যা আছে। আপনি মেয়ে মানুষ। ওই রুমে থাকবেন না প্লীজ। আর যদি থাকেনও, রাতের বেলা চুল খুলে ঘুমাবেন না।

আপা অবশ্য পরে অন্য কারণে ওই রুমে থাকে নি। আমার বড়ো ভাই উঠেছিলেন।। তিনি সিলেটে পড়তে চলে যাওয়ার পর সে রুমে আমি চলে গিয়েছিলাম। তখন কলেজে উঠেছি কেবল। রুমে উঠার পর বিচিত্র কিছু অনুভূতি হতো। রাতের বেলা মনে হতো কে যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। পেছনের জানালা তো একেবারেই খুলতাম না। পূর্বদিকেরটা বাধ্য হয়ে খুলতাম। না হয় রুম একেবারে বয়লার হয়ে যেতো।

রুমে উঠার পর আমি জীবনে প্রথম বোবায় ধরার সম্মুখীন হই। যারা জানেন না, আমাদের দেশে গ্রাম-বাংলায় 'বোবায় ধরা'- নামে একটা অসুখের কথা প্রচলন আছে। ঘুমিয়ে আছেন, হুট করে মনে হবে কিছু একটা আপনার ওপর চেপে বসেছে। হাত-পা নাড়াতে পারছেন না।

জোরে চীৎকার করতে চাইছেন। তাও পারছেন না। কেউ যেন গলা চেপে ধরেছে। যখন মনে হবে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, মারা যাবেন- তখন একসময় সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে। ইবনে মানজুর 'লিসানুল আরব'- বইতে এটাকে 'জাশুন' বলেছেন। ইবনে সিনা তার 'আল-কানুন'- বইতে এটাকে বলেছেন, 'আল-খানিক'। খানিক মানে যে গলায় চাপ দিয়ে ধরে।

বিজ্ঞানের ভাষায় এ অসুখটাকে বলা হয় 'স্লিপ প্যারালাইসিস'। বিজ্ঞানীরা বলেন, আমরা যখন ঘুমের প্রাথমিক স্তরে থাকি সে সময়ে এটা বেশি হয়। কোনো কারণে আমাদের ঘুম হয়তো ভেঙে যায়, কিন্তু মস্তিষ্ক ভাবে আমরা ঘুমিয়েই আছি। তাই সে হাত-পা নাড়াতে দেয় না।

 কারো কারো ক্ষেত্রে এটা এতো তীব্র হয় যে, চোখ খুললে তার হ্যালুসিনেশন হয়। সে তখন দৈত্যাকার প্রাণী তার সামনে আবিষ্কার করে। অনেক মেয়েরা দাবি করেছে, এসব প্রাণীরা ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ধর্ষণ পর্যন্ত করেছে। কাউকে জোর করে ধর্ষণ করা হলে তার যেমন লাগবে, তাদেরও তেমন লেগেছে।

আমার বোবায় ধরার মাত্রাটা খুব বেশি না। দুই তিন মাসে একবার। ওযু করে, সূরা ইখলাস-ফালাক্ব-নাস মুঠোতে করে পড়ে পুরো শরীরে বুলিয়ে দিয়ে ঘুমোতে গেলে সমস্যা হয় না খুব একটা। কিন্তু মাঝে মধ্যে এমন হয়, বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। দু'আ পড়ে শরীর বন্ধ করা হয় না। তখন বেশি আক্রমণের শিকার হই।

লাস্ট আক্রমণের শিকার হয়েছিলাম দুই-তিন হপ্তা আগে। মনে হচ্ছিল, কেউ বিছানা থেকে ফেলে দিয়ে পা ধরে টানছে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে মারতে চাইছে। সূরা পড়তে চাইছিলাম কিন্তু পারছিলাম না। শেষে মনে মনে পড়া শুরু করলাম। সেটাও পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল, অর্ধেক পড়ার পর অন্য কিছু পড়া শুরু করছি। কেউ যেন জোর করে পড়া থামিয়ে দিচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছিলো। বোবায় আমাকে বেশ কয়বার ধরেছে, কিন্তু এতো কষ্ট খুব কমই পেয়েছি।

পাশে কেউ থাকলে এ সময় খুব সহজেই বুঝে যাবে যে, কোনো একটা সমস্যা হচ্ছে ঘুমন্ত ব্যক্তির। তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। শরীর মোচড়ানো শুরু হয়। সে সময় তাকে মৃদু ধাক্কা দিলে এ অবস্থা কেটে যায়। অবশ্য, আমার ক্ষেত্রে কী লক্ষণ প্রকাশ পায় জানি না। অনেক বছর ধরে তো একাই ঘুমিয়ে অভ্যেস।

বোবায় ধরার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা আমি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে অস্বীকার করছি না। ইবনে সিনা তার বইতে লিখেছেন, কারো কারো ক্ষেত্রে সমস্যাটা মানসিক এটা যেমন সত্যি, সঠিক ওষুধ সেবনে তার আরোগ্য লাভ সম্ভব। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে সমস্যাটা একেবারে অমানবীয়, এটাও সত্যি। এটাকে অস্বীকার করা মানে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা।

আমি শুধু এতোটুকু বলব, আমি বাসার বাইরে সব মিলিয়ে পাঁচ বছর থেকেছি। কোনোদিন আমায় বোবায় ধরে নি। সত্যি বলতে কি, কোনার ওই রুমটা, যেটা এখন আমার ব্যক্তিগত রুম, সেখানে ছাড়া আর কোথাও ঘুমোলে আমায় কখনো বোবায় ধরে নি।
-From Shihab Ahmed Tuhin's Wall

বোবায় ধরার কারন কি হতে পারে? আনুমানিক 

Md. Moshiur Rahman ভাই এর কমেন্ট।

আসসালামু আলাইকুম

এই স্লীপ প্যারালিসিস, বোবা ধরা, সুপারন্যাচারাল বা অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটা– এগুলো সব অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন জিনিসের মিক্সচার Shihab Ahmed Tuhin ভাই

আক্ষরিকভাবে "স্লীপ প্যারালিসিস" জিনিসটা নিজে নিজে আসলে খারাপ কিছু না, বরং উল্টা আরও আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সীমাহীন রহমতগুলার মধ্যে একটা

ঘুমের মধ্যে বা স্বপ্ন দেখাকালীন সময় যেন হাত-পা চালিয়ে দূর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য মালিকুল মুলক– গামা-অ্যামিনোবিউটাইরিক এসিড আর গ্লাইসিন নামের দুইটা নিউরোট্রান্সমিটারের বিশেষ ব্যবস্থা করে রেখেছেন,
যেগুলো ওই নির্দিষ্ট সময়গুলাতে ভলান্টারি বা ঐচ্ছিক মাসলগুলাকে প্যারালাইজড করে রাখে

কাজেই সমস্যা মেইনলি এটা না যে শরীর অবশ হয়ে থাকে, সমস্যা হলো এমন অবস্থায় হঠাৎ করে জেগে উঠা

এমন অবস্থায় হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আবার দেখা যায় রব্বুল আলামীনের সেট করে দেওয়া– হাইপারভিজিল্যান্স নামের একটা ইমার্জেন্সি রেসপন্স চলে আসে,
যেখানে সে ব্যক্তি পরিবেশ বা বিপদ অনুভব করার প্রতি হাইলি সেনসিটিভ হয়ে যায়, যার কারণে এলোমেলো অনেক কিছুই অনুভূত হয়

অতিপ্রাকৃত কিছু অনুভব করার আরেকটা কারণ হতে পারে ইনফ্রাসাউন্ড– মানুষের শব্দ শোনার নিম্নসীমা বা ২০ হার্জের নিচের শব্দ, যা মানুষের মধ্যে ভয়ের অনুভূতি তৈরী করতে পারে

যেমন ফর এক্সাম্পল– ১৯ হার্জের আশেপাশের ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ মানুষের অক্ষিগোলককে ভাইব্রেট করতে সক্ষম, যার ফলে অতিপ্রাকৃত জিনিসপাতি "দেখার" অনুভূতি হতে পারে

এখন এই ইনফ্রাসাউন্ডের উৎস সামান্য একটা ফ্যানও হতে পারে,
আবার কোন নন-হিউম্যান মাখলুকও হতে পারে– যেহেতু তারা কিছু কিছু অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী

এগুলো থেকে বাঁচার উপায় হলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শিখিয়ে দেওয়া আমলগুলো

এখন যদি সেই আমলগুলো না করে ঘুমানো হয়, তাহলে তো আর কিছু বলার থাকে না– কারণ সে ব্যক্তি তখন এসব জিনিসের প্রতি সম্পূর্ণভাবে "উদলা" থাকে

আর যদি অপোনেন্ট মাখলুক মাত্রাতিরিক্ত ইতর টাইপের হয়, তাহলে আমল করার পরও হয়তো সমস্যা দেখা দিতে পারে

আমল করার কারণে সরাসরি ডিস্টার্ব করতে না পারলে হয়তো দেখা গেল ঘরের কোন জিনিস ব্যবহার করে ইনফ্রাসাউন্ড করতে লাগলো, কিংবা নিজেই চ্যাগায়ে বসে সেইকাজের আঞ্জাম দিলো, আল্লাহু 'আলাম

কানে ইনফ্রাসাউন্ড শোনা না গেলেও শরীরে ঠিকই তার ভাইব্রেশনের প্রভাব পড়ে,
কাজেই ঘুমের মধ্যে এমন কিছু অনুভব হলে হয়তোবা দেখা গেল শরীর বাই ডিফল্ট– হাইপারভিজিল্যান্স মোডে চলে গেল, ফলে সেনসিটিভিটি বেড়ে যাওয়ার কারণে বিপরীত পক্ষের কাজ হয়তো আরও সহজ হয়ে যায়, ওয়াল্লাহু 'আলাম
Md. Moshiur Rahman 


  1. বোবা জ্বীন
  2. মুখ চাপায় ধরা
Next Post Previous Post