উসমানীয় সাম্রাজ্য এর ইতিহাস, উদারতা ও আইরিশ দুর্ভিক্ষ | খিলাফতের ইতিহাস

আইরিশ দুর্ভিক্ষ ও উসমানীয় উদারতা - আরত্রুগ্রুল গাজির ইতিহাস

১৮৪৫-১৮৫২,এই সাত বছরব্যাপী “দ্য গ্রেট আইরিশ ফেমিন” বা “আলু দুর্ভিক্ষ” বা “গ্রেট হাঙ্গার” শুধুমাত্র আয়ারল্যান্ডের নয় বরং ইউরোপের অন্যতম প্রাণঘাতী কৃষি বিপর্যয় । যা শুধুমাত্র একটা প্রজন্ম নয় বরং চিরদিনের জন্য আয়ারল্যান্ডের ডেমোগ্রাফিক,রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে দেয় । মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে জনসংখ্যা এক তৃতীয়াংশ কমে যায় । আইরিশ দুর্ভিক্ষের জন্য বরাবরই ব্রিটেনকে দায়ী করা হলেও ব্রিটেন ঘটনাটিকে “প্রাকৃতিক” বলে মনে করে ।

আয়ারল্যান্ডে ব্রিটিশ উপনিবেশঃ
১৬৪১ সালে ক্যাথলিক বিদ্রোহের মাধ্যমে “আইরিশ ক্যাথলিক কনফেডারেশন” আয়ারল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয় । ১৬৪৯ সালে ইংরেজ সেনাপতি অলিভার ক্রোমওয়েলের আক্রমণের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ব্রিটিশদের অধীনে আসে। ক্রোমওয়েলের বাহিনী আইরিশ ক্যাথলিকদের বাস্তুচ্যুত করে,বেসামরিক জনগণের উপর গণহত্যা চালায়,ক্যাথলিকদের জমি দখল করে ও আইরিশ জমিদারদের জমি কেড়ে নিয়ে সেখানে প্রটেস্ট্যান্ট ইংরেজ ও স্কটিশদের (অ্যাংলো আইরিশ) প্রতিস্থাপিত করে । বন্দরনগরী দ্রোহেদাতে ক্রোমওয়েলের বাহিনী প্রটেস্ট্যান্টদের উপর নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ও এটিকে “বর্বর জাতিগোষ্ঠীর বিষয়ে ঈশ্বরের ধার্মিক বিচার” বলে জাস্টিফাই করে ।
ক্যাথলিকদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনরুত্থান ঠেকাতে ক্রোমওয়েল ও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট “পেনাল ল” জারি করে । পেনাল ল অনুযায়ী ক্যাথলিকরা সরকারী অফিসে কাজ করতে পারতো না,নিজস্ব অস্ত্র বহন করতে পারতো না, আদালতের আইনজীবী হতে পারতো না,ভোটাধিকার ছিলো না,শিক্ষক হতে পারতো না ও কোন ক্যাথলিক প্রটেস্ট্যান্টকে বিবাহ করতে পারতো না । এছাড়াও ক্যাথলিক চার্চ পাথর দিয়ে বানানো নিষিদ্ধ ছিলো ও রাস্তার ধারে কোন চার্চ বানানো যেতো না । এমনকি কোন ক্যাথলিক দেশে বা বিদেশে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারতো না ।
আয়ারল্যান্ড ব্রিটিশদের প্রথম দিকের কলোনি । ১৮০০ সালের “অ্যাক্ট অফ ইউনিয়ন”এর অধীনে আয়ারল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হলেও মূলত অনেক আগে থেকেই ইংরেজরা আইরিশদের শোষণ করতো । কিংডম অফ আয়ারল্যান্ড ও কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন মিলেই সম্মিলিতভাবে ইউনাইটেড কিংডম নাম ধারণ করে । ব্রিটেন আজো এই নামে পরিচিত । “অ্যাক্ট অফ ইউনিয়ন” এর আওতায় আয়ারল্যান্ডের “গভর্নর জেনারেল” ও “চীফ সেক্রেটারী” ব্রিটিশরা নিয়োগ দিতো । ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অফ কমেন্সে ১০৫ জন ও হাউজ অফ লর্ডসে ২৮ জন আইরিশ প্রতিনিধিত্ব করতে পারতো ।
৮০ শতাংশ আইরিশ ক্যাথলিক জনসংখ্যা পেনাল কোডের অধীনে ধীরে ধীরে শোষিত হতে থাকে অন্যদিকে ব্রিটিশ জমিদাররা আয়ারল্যান্ডের ভূমি লীজ নিতে থাকে । ফলে আইরিশরা নিজ ভূমিতে পরের জন্য অর্থের যোগান দিতে থাকে । ব্রিটিশ জমিদারদের অনেকে তাদের জীবদ্দশাতে কখনোই তাদের জমিদারীতে যাননি অথবা গেলেও সাকুল্যে একবার বা দুইবার । জমিদাররা জমি লীজ নিয়ে তা দেখাশোনার জন্য স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগীদেরকে নিয়োগ দেয়
মধ্যস্বত্বভোগীরা একদিকে ব্রিটিশ ভূস্বামীদেরকে অর্থের যোগান দিতে থাকে অন্যদিকে তারা আরো বেশি মুনাফার জন্য জমিকে আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে আরো বেশি কৃষককে লীজ দিতে থেকে । এইভাবে একজন কৃষকের গড় উৎপাদনের জমি এতো কমে আসে যে সেখানে আলু ব্যতীত অন্য যেকোন ফসল চাষ করে ব্রিটিশ ভূস্বামী,মধ্যস্বত্বভোগী ও পরিবারের ভরণপোষণ চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় ।
যেখানে ১৭৭০ সালের দিকে আইরিশ কৃষকরা যব,মাখন,ঘি খেতে পারতো সেখানে মাত্র কয়েক যুগের ব্যবধানে আলু হয়ে দাড়ায় আইরিশদের প্রধান খাদ্য । আবার ইউরোপে বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকদের খাবার হিসেবে আলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । ফলে আইরিশদের উৎপাদিত আলো ইউরোপে রপ্তানি হতো । এইভাবেই আলু উৎপাদনে বাধ্য হয় আইরিশরা(অনেকটা উপমহাদেশের নীল চাষের মতো) ।
গ্রেট আইরিশ দুর্ভিক্ষের কারণঃ
গ্রেট আইরিশ দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ ছিলো “আইরিশ লম্পার” নামে এক জাতের আলুর উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা ও জেনেটিক বৈচিত্রের অভাব । আলু উৎপাদন সহজ ও সস্তা হওয়ায় এবং বিদেশে এর চাহিদা থাকায় আইরিশ কৃষকরা ব্যাপকভাবে আলু চাষ শুরু করে । ১৮৪৫ সালে Phytophthora infestans এর কারণে আয়ারল্যান্ডে ব্যাপকভাবে ‘পটেটো ব্লাইট’ দেখা দেয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাহাজে আসা কোন এক চালানে পটেটো ব্লাইট আয়ারল্যান্ডে প্রবেশ করে ও উপযুক্ত পরিবেশে তা ছড়িয়ে পরে ।

আবার উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নেপোলিয়নের অগ্রাভিযানের কারণে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে বৈরিতা তৈরি হয় এবং তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাধাগ্রস্থ হয় । ফলে ইংল্যান্ডের বাজারে আইরিশ পণ্যের চাহিদা বাড়ে ও আয়ারল্যান্ডে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি হতে থাকে ।


কিন্তু নেপোলিয়ন ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হলে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে পুনরায় ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপিত হয় । ফলে ইংল্যান্ডের বাজারে আবার ফরাসি পণ্য প্রবেশ করে ও আইরিশ পণ্যের চাহিদা কমতে থাকে । ফলে আয়ারল্যান্ডের উদীয়মান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে ।
অনেক আইরিশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় । বেকার হয়ে পরা শ্রমিকরা জীবিকার সন্ধানে গ্রামে ছড়িয়ে পরে । তারা চাষের জন্য এমন সব অনাবাদী পাথুরে ও অনুর্বর জমি লীজ নেয় যা ফসল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত ছিলো না । ফলে একদিকে শ্রমিকরা নিজেদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদনে ব্যর্থ হয় অন্যদিকে লীজ নেয়া জমির কর দিতে ব্যর্থ হয় । এইভাবে আইরিশ শ্রমিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব সৃষ্ঠি হয় ।
দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় ব্রিটেনের ব্যর্থতাঃ
আয়ারল্যান্ডের পূর্বে ১৮৪৩ সালে আমেরিকায় ও বেশ কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশে পটেটো ব্লাইট দেখা দেয় । পটেটো ব্লাইটের কারণে বেলজিয়ামের ৮৭%, নেদারল্যান্ডের ৭০%,জার্মানি ও ফ্রান্সের ২০% উৎপাদন নষ্ট হলেও তারা এর ধকল সামাল দিতে সক্ষম হন।রাশিয়া ও পোলান্ডও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় । ১৮০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময় আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন অংশে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হলেও ১৮৪৫ সালে পুরো দেশে একই সাথে ব্যাপকভাবে শস্য বিনষ্ট হয় ।
১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরে “The Gardeners’ Chronicleসহ আরো কয়েকটি ব্রিটিশ পত্রিকা পটেটো ব্লাইটকে “a blight of unusual character” বলে রিপোর্ট করে । “Freeman’s Journalরিপোর্ট করে “the appearance of what is called ‘cholera’ in potatoes in Ireland, especially in the north”। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়ায় ততদিনে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় । ব্রিটিশ পলিসিমেকাররা ত্রাণ সহায়তাকে “আইরিশ অর্থনীতি” সংস্কারের প্রধান ও প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে ও জনগণের জীবনরক্ষা অপ্রয়োজনীয়ই থেকে যায় ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী রবার্ট পিল আমেরিকা থেকে সস্তায় ভুট্টা আমদানি করা শুরু করেন ও বাজারে খাদ্য দ্রব্যের মুল্যের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেন । তিনি একই সাথে কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পের মতো আয়ারল্যান্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সড়ক নির্মাণ শুরু করেন ও শ্রমিক নিয়োগ দেন । শ্রমিকরা কাজ করে যা উপার্জন করতো তা দিয়ে খাদ্য ক্রয় করতো ।

কিন্তু অনুন্নত ইনফাস্ট্রাকচার ও যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য খাদ্য সামগ্রী দেশের বেশিরভাগ জায়গায় পাঠানো অসম্ভব ছিলো । ভুট্টা দূরে কোথাও পাঠানোর আগে তা ভেঙ্গে আটায় রূপান্তর করতে হতো । কিন্তু পুরো আয়ারল্যান্ডে এইরকম ভুট্টা ভাঙ্গানোর মিল ছিলো মাত্র দুটি ।
আবার অনেক আইরিশ ভুট্টা খাওয়ার যথাযথ নিয়ম জানতো না ফলে তারা এইসব ভুট্টা খেয়ে অসুস্থ হয়ে যেতো । আইরিশরা উচ্চ ভিটামিনযুক্ত আলু খাওয়ার ফলে তাদের দেহে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি’র চাহিদা পূরণ হতো । কিন্তু ভুট্টা খাওয়ার ফলে তাদের দেহে ভিটামিন সি’র অভাব দেখা দেয় ও ব্যাপকভাবে স্কার্ভি ছড়িয়ে পরে ।
১৮৪৬ সালে লর্ড রাসেল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ও দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় রবার্ট পিলের গৃহীত নীতি বাতিল করে নতুন কর্মনীতি গ্রহণ করেন । তিনি চার্লস ট্রিভিলিয়ন নামে এক সিভিল সার্ভেন্টকে সরকারী ত্রাণ কর্মসূচির দায়িত্ব দেন ।
চার্লস ট্রিভিলিয়ন ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট ক্রিস্টান । তিনি ধীরে চলো নীতি বা laissez-faire অবলম্বন করেন । ফলে প্রাণহানী আরো বাড়ে ও শুধুমাত্র ১৮৪৭ সালে প্রায় চার লক্ষ মানুষ নিহত হয় যা আজো “ব্লাক ৪৭” নামে পরিচিত । চার্লস ট্রিভিলিয়ন বিশ্বাস করতেন দুর্ভিক্ষ ঈশ্বরের পক্ষ থেকে মানুষের পাপের শাস্তিস্বরূপ । দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় মানুষের তেমন কিছুই করার নাই । আসলেই তিনি দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় তেমন কিছু করেন নাই ।

আইরিশ দুর্ভিক্ষ চলাকালীন সময়েও ব্রিটিশরা আয়ারল্যান্ড থেকে পণ্য আমদানী বন্ধ করে নি । ১৮৪৭ সালে প্রায় ৪,০০০ জাহাজ আয়ারল্যান্ড থেকে ব্রিস্টল, গ্লাসগো, লিভারপুল এবং লন্ডনের বন্দরে খাদ্য পরিবহন করে নিয়ে যায় । দুর্ভিক্ষের সময় গবাদি পশু রপ্তানি আরো বৃদ্ধি পায় যা পাঠানো হয় আয়ারল্যান্ডের সর্বাধিক দুর্ভিক্ষগ্রস্থ অংশ পশ্চিম উপকূল থেকে ।

এছাড়াও একই বছর মটর, শিম, পেঁয়াজ, খরগোশ, মাছ, ঝিনুক,মধু এবং বীজ সহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য রপ্তানি করা হয় । উডহাম তার “The Great Hunger: Ireland 1845–1849”বইয়ে লিখেন যে,“এটা নির্ঘাতে সত্য যে,যখন আয়ারল্যান্ডের মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছিল তখন আয়ারল্যান্ড থেকেই ইংল্যান্ডে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য রফতানি হয়েছিল” ।
উসমানীয় উদারতাঃ
১৮৪৭ সালে ২৩ বছর বয়সী উসমানী খেলাফতের সুলতান আব্দুল মাজিদ তার রাজকীয় এক আইরিশ চিকিৎসকের মাধ্যমে আইরিশ দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তিনি দশ হাজার পাউন্ড ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য মনস্থির করেন । কিন্তু ব্রিটিশ কূটনীতিকরা তাকে এক হাজার পাউন্ড অর্থ সহায়তা দিতে বলেন কেননা ব্রিটিশ রাণী ভিক্টোরিয়া দুই হাজার পাউন্ড অর্থ সহায়তা দিয়েছেন ।
ব্রিটিশ রাণী চাননা অন্য কেউ তার থেকে বেশি টাকা ত্রাণ সহায়তা করুক । সুলতান আব্দুল মাজিদ ব্রিটিশ কূটনীতিকদের কথা অনুযায়ী এক হাজার পাউন্ড অর্থ সহায়তা দিলেও ১৮৪৭ সালের মে মাসে খাদ্যশস্য সহ তিনটি জাহাজ গোপনে আয়ারল্যান্ডে প্রেরণ করেন কেননা ব্যাপারটি প্রকাশ হয়ে পড়লে ত্রাণবাহী উসমানীয় জাহাজকে ব্রিটিশ জাহাজ বাধা দিতে পারতো ।
এটা সেই সময় যখন উসমানীয় রাজকোষের অধিকাংশ অর্থ বহিঃশত্রু আর অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমনে ব্যয় করতে হতো অন্যদিকে কলোনিয়ালাইজেশনের মাধ্যমে ব্রিটিশরা অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হয় । পোর্ট অফ দ্রাগেদাতে উসমানীয় ত্রাণবাহী জাহাজ তাদের পণ্য খালাস করে ।
উসমানীয় খলিফার এই ত্রাণ সহায়তা শুধুমাত্র আয়ারল্যান্ডেই নয় ব্রিটেনেও ব্যাপক প্রশংসিত হয় ।
ব্রিটিশ একটি পত্রিকা “A benevolent sultan” শিরোনামে লিখে “for the first time a mohammedan sovereign,representing multitudinous islamic populations,manifests spontaneously a warm sympathy with christian nation.May such sympathies,in all the genial charities of a common humanity, be cultivated and henceforth ever be maintained between the followers of the crescent and the cross.”
পোর্ট অফ দ্রাগেদাতে উসমানীদের প্রতি আইরিশদের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ একটি স্মারক এখনো বর্তমান আছে ।
দ্রাগেদা শহরের ফুটবল ক্লাব “দ্রাগেদা ইউনাইটেড”এর লগোতে আজো উসমানীদের প্রতীক ক্রিসেন্টের মাঝখানে একটি তারকা দেখতে পাওয়া যায় । এমনকি পোর্ট অফ দ্রাগেদার লগোতেও অর্ধখচিত তারকার প্রতীক বিদ্যমান ।
দ্য আইরিশ ল্যাগাসিঃ
উসমানীয়রা নিঃস্বার্থভাবে আয়ারল্যান্ডের পাশে দাড়ালেও আয়ারল্যান্ড সেই উদারতাকে মনে রাখে ভালোভাবেই । দুর্ভিক্ষ শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই আয়ারল্যান্ড ক্রিমিয়ার যুদ্ধে উসমানীয়দের সহায়তায় নার্স,ইঞ্জিনিয়ার সহ ত্রিশ হাজার সৈনিকের একটি দল পাঠায় । লুজান চুক্তির সময় যেখানে সমস্ত ইউরোপীয় দেশ উসমানীয়দের বিরুদ্ধে ভোট দেয় সেখানে শুধুমাত্র আইরিশ প্রতিনিধি উসমানীদের পক্ষে ভোট দেয় ।

১৯৯৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার আইরিশ দুর্ভিক্ষের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ও দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় ব্রিটিশ পলিসিমেকার কর্তৃক গৃহীত ভুলনীতির সমালোচনা করেন । আইরিশ দুর্ভিক্ষের কারণে দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আয়ারল্যান্ড থেকে অন্যত্র চলে যায় । এদের বেশির ভাগই ব্রিটেন,কানাডা ও আমেরিকায় অভিবাসী হয় । তারা বোস্টন,নিউ ইয়র্ক,ফিলাডেলফিয়া,বাল্টিমোরে বসতি গড়ে তুলে । আজকের আমেরিকা,কানাডা ও ব্রিটেনের জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশ আইরিশ বংশদ্ভুত ।
লেখকঃ উলুবাতলি হাসান
তথ্যসূত্রঃ

Next Post Previous Post