বাংলা ইসলামিক শিক্ষা। দু‘আ করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-কানুন। বাংলায় ইসলামিক দোয়া

বাংলা ইসলামিক শিক্ষা।  দু‘আ করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-কানুন। বাংলায় ইসলামিক দোয়ার নিয়ম 


দু‘আ করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-কানুন [কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে]

.

[১] দু‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা এবং এরপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করা। একইভাবে দু‘আ শেষ করা।

.
একবার ইবনে মাস'ঊদ (রা.) সালাতের বৈঠকে বসে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন,

অতঃপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করেন,
তারপর নিজের জন্য দু‘আ করেন।

 তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘এখন চাও, তোমার প্রার্থিত বস্তু তোমাকে দেয়া হবে; এখন চাও, তোমার প্রার্থিত বস্তু তোমাকে দেয়া হবে।’’
[তিরমিযি: ২/৪৮৮, হাসান]

.
আরেকজন ব্যক্তি প্রথমেই নিজের জন্য চাওয়া শুরু করেন। তাকে দেখে নবীজি বলেন, ‘‘সে অনেক বেশি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে।’’ [আবু দাউদ: ১৪৮১, হাসান]


.
দু‘আর শেষদিকে আবারও প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা অতঃপর নবীজির উপর দরুদ পড়ার মাধ্যমে দু‘আ শেষ করা। [ইবনুল কায়্যিম, জালাউল আফহাম: ৩৭৫]
.

[২] প্রথমে নিজের জন্য দু'আ করা

.
আবু আইয়ূব আনসারি (রা.) বলেন, ‘‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দু‘আ করতেন, তখন নিজেকে দিয়ে শুরু করতেন।’’ [আহমাদ: ৫/১২১, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৫২, হাসান]
.

[৩] দৃঢ় বিশ্বাস রেখে দু'আ করা

.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে মানুষেরা! তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে চাইবে; কারণ কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু'আ করলে আল্লাহ তার দু'আ কবুল করেন না।’’

 [সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৩, হাসান]


.


[৪] সম্ভব হলে প্রথমে অজু করে নেওয়া

.
একবার নবীজিকে আবু আমির (রা.)-এর জন্য দু‘আ করতে অনুরোধ করা হলে, তিনি প্রথমে অজু করে নেন, এরপর দু‘আ করেন। [সহিহ বুখারি: ৪৩২৩]

.

[৫] তিনবার করে বলা (বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে)

.
ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) বলেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করলে (কখনো) তিনবার করে দু‘আ করতেন, কোনো কিছু (আল্লাহর কাছে) চাইলে তিনবার চাইতেন।’’ [সহিহ মুসলিম: ১৭৯৪]
.

[৬] কিবলামুখী হওয়া

.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য দু‘আ করতে চাইলে, তখন তিনি কিবলামুখী হতেন। [সহিহ বুখারি: ১০০৫]
.

[৭] দু‘আর মধ্যে ছন্দময় কথা না বলা

.
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, আমি দেখেছি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ ছন্দময় কথা দু‘আর মধ্যে এড়িয়ে চলতেন। [সহিহ বুখারি: ৬৩৩৭]

.

[৮] দু‘আর মধ্যে আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত ও নিজ অপরাধের স্বীকৃতি দেওয়া

.
সাইয়িদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দু‘আ)-র মধ্যে আমরা এমনটি দেখি, সেখানে বলা হচ্ছে—‘‘আমার উপর তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমার কৃত পাপের কথাও স্বীকার করছি।’’ [সহিহ বুখারি: ৬৩০৬]

.
[৯] নেক আমলের উসিলা দিয়ে দু‘আ করা, পাশাপাশি আল্লাহর রহমত ও বড়ত্বের উসিলায় দু‘আ করা। এছাড়া ইসমে আযম দিয়েও দু‘আ করা উত্তম। (এ প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র পোস্ট দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ)

.
একবার তিন ব্যক্তি একটি গুহায় আটকা পড়েছিলো। একটি বিশাল পাথর গুহার মুখে এসে আটকে যায়। এমন কঠিন অবস্থায় তিনজনই তাদের বিভিন্ন নেক আমলের উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলো, আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করে পাথরটি সড়িয়ে দিয়েছিলেন। [সহিহ বুখারি: ২২১৫]

.
[১০] আল্লাহর প্রভুত্ব, মহত্ত্ব, বড়ত্ব, অমুখাপেক্ষিতা, তাঁর সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো দু‘আর মধ্যে বারবার স্মরণ করা এবং বলতে থাকা। এটি দু‘আ কবুলের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। 
[ইবনু রজব, জামি‘উল উলূম ওয়াল হিকাম]

.
হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা (দু‘আর মধ্যে) এ বাক্য উচ্চারণ করা বন্ধ করো না— يَا حَيُّ يَا قَيُّمُ
.
[ ইয়া হাইয়ু, ইয়া কাইয়ূমু ]

"হে রাজকীয়তা ও মহানুভবতার অধিকারী!’’

[বুখারি, আত তারিখুল কাবির: ৩/২৮০, সহিহ]


.

[১১] স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের সময় বেশি বেশি দু‘আ করা

.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যার মন চায়—তার কষ্ট ও দুশ্চিন্তার সময় তার দু‘আ কবুল হোক, সে যেন প্রাচুর্যের সময় বেশি বেশি দু‘আ করে।’’ [তিরমিযি: ৩৩৮২, হাসান]

.
[১২] নীচু স্বরে দু‘আ করা; খুব জোরে দু‘আ না করা; কারণ এটি সীমালঙ্ঘন
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘তোমার রবকে ডাকো কান্নাজড়িত কণ্ঠে এবং চুপে চুপে। অবশ্যই তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’’ [সূরা আ’রাফ, আয়াত: ৫৫]

.
[১৩] কাতর কণ্ঠে, ভীত-বিহ্ববলচিত্তে দু‘আ করা [সূরা আ’রাফ, আয়াত: ২০৫]

.
[১৪] দু‘আর মধ্যে হাত উত্তোলন করা [সহিহ বুখারি: ২৮৮৪, আবু দাউদ: ১৪৮৮]
.
[১৫] আল্লাহর সামনে নিজের অসহায়ত্ব পেশ করা [সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯, সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৭]
.
[১৬] দু‘আর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় শব্দ না বলা [আবু দাউদ: ১৪৮০ ও ৯৬, সহিহ]

যেমন: ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে জান্নাতের অমুক ফলটা দিয়ো, তমুক জিনিসটা দিয়ো’’ এভাবে না বলে শুধু জান্নাত চাওয়া। কারণ জান্নাতে গেলে তো সবই পাওয়া যাবে।

.
[১৭] দু‘আর মধ্যে নিজ পিতা-মাতা, সকল মুসলিমদের জন্য দু‘আ করা 
[সূরা ইসরা, আয়াত: ২৪, সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১, সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯]

.

[১৮] বেশি বেশি করে চাওয়া

.
হাদিসে এসেছে, ‘‘তোমাদের কেউ যখন কামনা বা প্রার্থনা করবে, তখন সে যেন বেশি করে প্রার্থনা করে। কারণ সে তো তার মালিকের কাছেই চাচ্ছে!’’
[মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৫০, সনদ সহিহ]

.
[১৯] দু‘আর সময় দৃষ্টি নত রাখা [মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৬৭-১৬৮]
.
[২০] আমীন বলে দু‘আ শেষ করা [আবু দাউদ: ১/৯৩৮]
তবে, এটি দিয়েই শেষ করতে হবে, এমন নয়। মাঝেমধ্যে সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত, কখনো কালিমা তাইয়িবাহ্ ইত্যাদি দিয়েও দু‘আ শেষ করা যাবে। (বিস্তারিত অন্য কোনো পোস্টে ইনশাআল্লাহ্)

.
ইনশাআল্লাহ, সামনে দু‘আকেন্দ্রিক কিছু ভুল-ভ্রান্তি, দু‘আ কবুলের বিশেষ কিছু সময়, অবস্থা ইত্যাদি নিয়ে আরো কিছু পোস্ট দেওয়া হবে।
.
#Tasbeeh
Next Post Previous Post