যারা কুরআন খতম দিচ্ছেন, তাদের জন্য কিছু জরুরি নসিহত | রমাদানে সহজে কুরআনের দু’টি খতম দেওয়া

 যারা কুরআন খতম দিচ্ছেন, তাদের জন্য কিছু জরুরি নসিহত | রমাদানে সহজে কুরআনের দু’টি খতম দেওয়া 

যারা কুরআন খতম দিচ্ছেন, তাদের জন্য কিছু জরুরি নসিহত (এগুলো জানা উচিত)


(১) বেশি খতমের আকাঙ্ক্ষায় এমনভাবে তিলাওয়াত করবেন না যে, পড়া সহিহ হয় না। এতে তেমন ফায়দা হবে না। যেটুকু পড়বেন, ধীরে-সুস্থে, আগ্রহ সহকারে, ভালোবাসা নিয়ে পড়বেন। পরিমাণ কম হলেও আল্লাহ্ এতে বেশি খুশি হবেন। রমাদানে কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটিকে প্রধান্য দিন।
.
(২) ২৭ তারিখ বা লাইলাতুল কদরের মধ্যেই খতম শেষ করতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। (২৭ তারিখকে লাইলাতুল কদরের জন্য নির্দিষ্ট করা ভুল)
.
(৩) কুরআন খতম করার পর কোনো ইমাম বা আলেমকে দিয়ে ‘বকশে দিতে হবে’ এমন চিন্তা-ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল। নিজের তিলাওয়াত ও উদ্দেশ্যই যথেষ্ট। নিজে তিলাওয়াত শেষে নিজেই দু‘আ করুন।
.
(৪) চেষ্টা করবেন, রাতে কিছু সময় তিলাওয়াত করতে। কারণ রাতের তিলাওয়াত আল্লাহ পছন্দ করেন। এটা সালাফদের রীতি।
.
(৫) অর্থ বুঝে তিলাওয়াতের মর্যাদা অনেক বেশি। তবে, স্বাভাবিক তিলাওয়াতেও নেকি হয়। হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। সাধারণভাবে খতমের পাশাপাশি প্রতিদিন কিছুটা সময় হলেও অনুবাদ অথবা তাফসিরসহ পড়ার চেষ্টা করবেন। এটা কুরআনের দাবি।
.
(৬) অধিকাংশ সালাফে সালেহিন এবং ইমামের মতে, মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত বা নেকির উদ্দেশ্যে জীবিত ব্যক্তি কুরআন খতম দিতে পারবে। তাই, নিজের মৃত কোনো আত্মীয়ের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম দেওয়া যাবে। তবে, উত্তম হলো: মৃতদের জন্য বেশি করে দু‘আ ও দান সাদাকাহ্ করা। এ ব্যাপারে আলেমদের কোনো মতভেদ নেই।
.
(৭) এত জোরে তিলাওয়াত করবেন না, যাতে অন্যের ইবাদতে (যেমন: নামাজ, যিকর, দু‘আ) কষ্ট হয়। কারো সামনে তিলাওয়াত করা হলে তা শুনা তার জন্য ওয়াজিব। সুতরাং, কাউকে এই ওয়াজিব পালনে বাধ্য করবেন না। যতটুকু সম্ভব ধীরে পড়বেন। তবে, কেউ যদি শ্রোতা হয়, তবে জোরেই পড়ুন।
.
(৮) কুরআনে মোট ১৪ টি সিজদার আয়াত আছে। সেগুলো পাঠ করা মাত্রই সিজদা দিন। কোনো প্রয়োজন ব্যতীত এসব সিজদা বিলম্বে আদায় করা উচিত নয়।
.
(৯) কুরআন খতমের পর বিশেষ কোনো দু‘আ সহিহ কোনো হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত নয়। (শাতিবি রাহ.-এর সূত্রে আলবানি রাহ.)। সুতরাং স্বাভাবিকভাবে শেষ করে দু‘আ করে নিবেন। দু‘আ করে আল্লাহকে তিলাওয়াতের সওয়াবের উদ্দেশ্য বলতে হবে, এমনটা জরুরি নয়। আল্লাহ্ জানেন, আপনি কী উদ্দেশ্যে তিলাওয়াত করছেন।
.
(১০) মুসহাফ তথা কুরআনের কাগজের কপি ধরতে অযু জরুরি। তবে, মোবাইলে পড়তে অযু জরুরি নয়। এই মত দিয়েছেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুহাদ্দিস আল্লামা সাঈদ আহমাদ পালনপুরী, আরবের ওলামায়ে কিরামসহ অনেকে। তবে, অবশ্যই অযু করে পড়াই উচিত। যারা অযু ছাড়া মোবাইলেও পড়া নাজায়েয বলেছেন, তারা এটুকু অনুমতি দিয়েছেন যে, মোবাইলে পড়ার সময় সরাসরি আয়াতে টাচ না করে স্ক্রিনের সাইডে টাচ করে পড়া যাবে। এটা একটা নিরাপদ মত।
.
#Tasbeeh






রমাদানে সহজে কুরআনের দু’টি খতম দেওয়া সম্ভব—ইনশাআল্লাহ্। 


সেক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
.
[এক.]
প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ শেষে অথবা শুরুতে চার পৃষ্ঠা করে পড়বেন। এতে পাঁচ ওয়াক্তে মোট ৪×৫ = ২০ পৃষ্ঠা (এক পারা) হবে প্রতিদিন। প্রতিদিন এক পারা মানে ৩০ দিনে ৩০ পারা। অর্থাৎ এক মাসে এক খতম হবে ইনশাআল্লাহ্।
.
যদি নামাজের আগে ৪ পৃষ্ঠা ও পরে ৪ পৃষ্ঠা করে পড়েন, তবে প্রতি ওয়াক্তে হবে ৪×৪ = ৮ পৃষ্ঠা। তাহলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে-পরে হবে ৫×৮ = ৪০ পৃষ্ঠা তথা দুই পারা। প্রতিদিন দুই পারা হলে ১৫ দিনে এক খতম করে, এক মাসে দুই খতম হবে ইনশাআল্লাহ্।
.
চাইলে প্রতি ওয়াক্তের নামাজের শেষে ৮ পৃষ্ঠা করে পড়তে পারেন। এতেও ৫×৮ = ৪০ পৃষ্ঠা (দুই পারা) হয়ে যাবে প্রতিদিন। মাসে দুই খতম।
.
[দুই.]
সকাল ৯ টা থেকে ১১ টার মধ্যে ১০ পৃষ্ঠা পড়বেন। কারণ তখন মাত্রই ঘুম থেকে ওঠবেন। মন ফ্রেশ থাকবে, পড়তেও ভালো লাগবে। এরপর যোহরের নামাজের পর আরো ১০ পৃষ্ঠা পড়বেন। কারণ এই সময়টাও যথেষ্ট প্রশস্ত। তাহলে ১০+১০ = ২০ পৃষ্ঠা, অর্থাৎ এক পারা হবে প্রতিদিন।
.
যদি এর সাথে সংযুক্ত করতে চান, তবে আসরের পর ৮ পৃষ্ঠা, মাগরিবের পর ৪ পৃষ্ঠা, ইশার পর (ঘুমানোর পূর্বে) ৪ পৃষ্ঠা এবং সাহরিতে বা ফজরের পর আর ৪ পৃষ্ঠা। তাহলে মোট ৮+৪+৪+৪ = ২০ পৃষ্ঠা বা ১ পারা হবে।
.
অর্থাৎ দিনে প্রায় দেড় পারা আর রাতে প্রায় আধা পারা—মোট দুই পারা হচ্ছে প্রতিদিন।
.
[তিন.]
ফজরের আগে অথবা পরে ৫ পৃষ্ঠা;
সকাল ৯—১১ টার মধ্যে ১০ পৃষ্ঠা;
যোহরের নামাজের পরে ১০ পৃষ্ঠা;
আসরের আগে বা পরে ৫ পৃষ্ঠা;
মাগরিবের নামাজের পরে ৫ পৃষ্ঠা;
ঘুমানোর পূর্বে বা ইশার পরে ৫ পৃষ্ঠা।
সর্বমোট: ৫+১০+১০+৫+৫+৫ = ৪০ পৃষ্ঠা তথা ২ পারা হবে প্রতিদিন।
.
তবে, আমার মতে, বিভিন্ন সময়ের প্রেশার না নিয়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠে ৯—১১ টার মধ্যে ২০ পৃষ্ঠা, যোহরের পর ১০ পৃষ্ঠা এবং আসরের পর ১০ পৃষ্ঠা পড়বেন। যদি আসরের পর ১০ পৃষ্ঠা না পড়া যায়, তবে অন্তত ৫ পৃষ্ঠা পড়বেন আর রাতে ৫ পৃষ্ঠা পড়বেন। (মোট ২০+১০+১০ = ৪০ পৃষ্ঠা তথা দুই পারা)—এই হিসেবে মোট দুই পারা প্রতিদিন অনায়াসে পড়া সম্ভব, ইনশাআল্লাহ্। কারণ এই সময়গুলোতে ব্যস্ততা কম থাকে।
.
[কুরআন খতমের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো জানতে হবে, যেসব বিষয় লক্ষণীয়, সেগুলো নিয়ে আরেকটি পোস্ট আসবে শীঘ্রই—ইনশাআল্লাহ্]
.
#মহিমান্বিত_রামাদান
#Tasbeeh
Next Post Previous Post