সৃষ্টিকর্তার চেয়ে বেশি বুঝা ইব্লিশিও যুক্তিবাদী দল

 সেদিন এক বাই বর্ণ অর্থোডক্স খৃষ্টান এর সাথে কথা হচ্ছিল, সে গডে বিলিভ করে (ট্রিনিটি নাকি একক আল্লাহ তে তা স্পষ্ট করে নাই)। তো যাই হোক, তার দাবি, জাহান্নাম বলে আসলে কিছু নেই বা থাকতে পারেনা, গড এতোটা ক্রুয়েল হতে পারেন না, যে যত পাপ ই করুক, শিরক কুফরী করুক তাকে জাহান্নামে দিতে হবে এটা তার রিলিজিয়াস বিলিফের সাথে যায়না। সবাই নাকি পরিস্থিতির শিকার হয়ে যার যার পাপ করে।

.
তো যাই হোক, তাকে যতই এর এন্টি লজিকে কমন সেন্স দিয়ে বোঝানো হোক না কেনো সে মানতে নারাজ। তার কথা এটা তার বিলিফ গডের প্রতি তার নিজস্ব আরোপিত এট্রিবিউট, যদিও এর সাপেক্ষে না কোন যুক্তি আছে, না কোন প্রমাণ, না কোন প্রচলিত ধর্ম এই কথা বলে।
.
ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, আমার আকল বা বুঝ, বা আবেগ, বা দৃষ্টিভঙ্গি, কমফোর্ট জোনের সাথে যায়না, এমন কোন কিছুকে নিজের সুবিধার্থে পরিবর্তন করে এক কাস্টমাইজড ভার্শন তৈরি করা, যাতে নিজের ব্রেইনকে সেল্ফ ডিসেপশনে সহনীয় করে তোলা যায়।
.
তো এটা না হয় এক খৃষ্টান এর কথা। কিন্তু এই সমস্যা যে কেবল অন্য ধর্মের মানুষের মাঝে বিদ্যমান তা না, এই সমস্যা আমাদের অধিকাংশ বাই বর্ণ মুসলিমদের মাঝেও প্রকট।
.
আল্লাহ কুরআনে জানিয়েছেন "তবে কি তোমরা এই কিতাবের কিছু অংশ স্বীকার করো, আর কিছু অংশকে অস্বীকার করো?"
.
এমন জন্মগত মুসলিমরা সরাসরি হয়তো বলেনা কুরআনের এই এই অংশ মানিনা, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে কথাবার্তায়, কাজে কর্মে, আচার আচরণে সিদ্ধান্তে তারা এটাই প্রকাশ করে যে, সে আসলে এই নিয়ম সত্য বলে মানেনা। এই প্রবণতা ইসলাম সম্পর্কে জাহিল মানুষদের মাঝে ব্যাপকভাবে পাওয়া গেলেও একটা বুঝ দেয়া যায়, কিন্তু সমস্যা হলো, এই প্রবণতা অনেক তথাকথিত ইসলাম সচেতন বা আপাত দৃষ্টিতে প্র্যাকটিসিং অনেক ভাইবোনদের মাঝেও দেখা যায়, এমন সব কথা বার্তা, ক্লেইম, আচার আচরণে যা তাদেরকে অনেক সময় ইসলামের গন্ডি থেকে বের করে দেয় যা তারা টের ও পায়না।

বেশি বুঝার পরিনাম
.
আল্লাহ কুরআনে জানিয়েছেন, এমন কিছু জিনিস আছে যা আমরা সাধারণত অপছন্দ করি কিন্তু আমাদের জন্য কল্যাণকর, আবার এমন কিছু জিনিস আছে যা আমরা পছন্দ করি কিন্তু তা আসলে অকল্যাণকর, আল্লাহ জানেন, আমরা জানিনা।
.
ইসলাম এর ভেতরে যখন মানুষ প্রবেশ করে তখন সে এই ব্যাপারটা জেনে বুঝেই প্রবেশ করে যে, আল্লাহ সব কিছু জানেন, তিনি সকল দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমরা নিজেরা নিজেদের ব্যাপারেও যা জানিনা তা আল্লাহ জানেন। তিনি যখন কোন নিয়ম কানুন দিয়েছেন যা আপাত দৃষ্টিতে পছন্দ নাও হতে পারে অনেকের তবুও এমনটা বলার অবকাশ নেই, যে আমি এই নিয়ম মানিনা, বা আমি মনে করি এই নিয়মে ত্রুটি আছে, এই রুলিং ব্যাকডেটেড, বা এই যুগের সাথে মানানসই নয়। এমনটা অন্তরে ধারণ করা, বলা প্রকৃত অর্থে তাকে ঈমান থেকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়, যদিও সে বাহ্যিকভাবে অনেক পরহেজগার!
.
যেমন হালের ইসলামিক ফেমিনিস্ট, মডারেটদের ক্ষেত্রে আল্লাহর নিয়ম কানুনকে কাটছাঁট করার, প্রশ্ন তোলার, নতুন ডাইমেনশনে ব্যাখ্যা করার প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায়!
.
আপনি বলছেন আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ অথচ, তার দেয়া পুরুষের জন্য চার বিয়ের বিধান যৌক্তিক মনে হয়না, নিয়মটা ঠিক হয়নি, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই নিয়ম কে অবজ্ঞা, প্রশ্নবিদ্ধ করা, এর আমলকারীদের নিচু চোখে দেখা সহ পুরো নিয়ম নিয়ে বিদ্বেষাগার করা এইসব আপনাকে ইসলাম থেকে যে বের করে দিচ্ছে তা আপনি জেনে বুঝেও মানতে চাইছেন না।
.
জিহাদ, কিতালের মত ব্যাপারকে আল্লাহ মানুষের অপছন্দনীয় উল্লেখ করেছেন কিন্তু তা মানুষকে পরীক্ষার জন্য নিয়ম বানিয়েছেন, আর আপনি এটাকে গ্রস বলে বেড়াচ্ছেন, এটার ইন্টারপ্রিটেশন এই যুগে চলবেনা বলে ইন্টালেকচুয়াল আর্গুমেন্ট দাড় করাচ্ছেন যদিও আপনি ইসলামের একজন বিখ্যাত দায়ী হিসেবে পরিচিত।
.
এমনিকরে, ব্যভিচারের শাস্তি, মুরতাদের শাস্তি, বা অন্যান্য এমন সব বিধান যা অনেক শান্তিকামী মানুষের পছন্দ না, এইসব ইস্যু কে কেন্দ্র করেও দেখবেন ইসলামের দাবীদার বাহ্যিক প্র্যাক্টিসিং অনেকেই আল্লাহর দেয়া নিয়ম কে সত্য, সঠিক, যৌক্তিক, সর্বশ্রেষ্ঠ, একমাত্র পথ বা পদ্ধতি মানতে পারেনা।
.
ইবলিশ যখন বলেছিল, সে সিজদা করেনি, কারণ সে আগুনের তৈরি আর আদম আ. মাটির এটা তার নিজস্ব প্রবৃত্তির অহংকারের দোষে আল্লাহর সিদ্ধান্ত কে চ্যালেঞ্জ করাই বোঝায়, মানে ইবলিশ এর মতে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ভুল, তার নিজের আকলের সিদ্ধান্ত সঠিক। আর এটাই তাকে চিরকাল অভিশপ্ত পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
.
আল্লাহ কে চেনার একটা বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আপনি বুঝেন না বুঝেন, হিকমত জানেন আর না জানেন, কোন নিয়ম আপনার পছন্দ হোক বা না হোক, আপনি নিজের লিমিটেড বিবেক বুদ্ধি বিবেচণা, আবেগ কে উপেক্ষা করে আল্লাহর নিয়মকেই মনে প্রাণে মেনে নিবেন। কারণ আপাত দৃষ্টিতে যা মনে হয়, তা সব সময় এর প্রকৃত স্বরুপ হয়না। আল্লাহ যেহেতু সকল ত্রুটি থেকে মুক্ত সুতরাং আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহ যেহেতু এই নিয়ম দিয়েছেন অবশ্যই তা পারফেক্ট কারণ তিনি আল্লাহ, তিনি স্রষ্টা, আপনি সৃষ্টি। আপনার বিচার বুদ্ধিতে ভুল থাকবেই, তিনি তা থেকে মুক্ত।
.
তাই বহু বিবাহ, কিতাল, ব্যভিচার, মুরতাদ শাস্তি বা ইসলামের এমন যে কোন কিছু যা আপনার কাছে আপাত দৃষ্টিতে আবেগ, বিচার, বুদ্ধি, যৌক্তিকতার ভিত্তিতে নিজস্ব সাবজেক্টিভ আইডিয়া দিয়ে কাস্টমাইজড ইজলাম ধারণ করতে বাধ্য করে, তা এটাই প্রমাণ করে আপনি ইবলিশের সেই পথ ই ধরেছেন যা তার হাজার হাজার বছরের ইবাদতকে, তার মর্যাদাকে ধ্বংস করে চির অভিশপ্ত করে দিয়েছে। নিজেকে স্রষ্টার চেয়ে অধিক বুঝদার, প্রেমময়, জ্ঞানী, মানবতাবাদী মনে করা বা দাবী করা মানে আল্লাহ কে আসলেই না চেনা, আর নিজেই নিজেকে স্রষ্টার আসনে আসীন করার মুশরিক চেতনা!
- Mahfuj Alamin
Next Post Previous Post