ইসলাম অনুযায়ী মুসলিম নারীদের সাজগোজ মেকআপ এর নিয়ম। মেয়েদের পর্দা ও স্বামীর জন্য যেসব মেকাপ জায়েজ।

ইসলাম অনুযায়ী মুসলিম নারীদের সাজগোজ মেকআপ এর নিয়ম। কপালে টিপ, ভ্রু প্লাক, লম্বা নখ ও ফেসিয়াল হারাম না হালাম? 


একটু একত্র করলাম। ভুলত্রুটি নজরে পড়লে বা কিছু যোগ করার দরকার হলে কমেন্টে জানাবেন। আর এখনই শেয়ার কইরেন না। কিছু কারেকশন হোক, দুইদিন পরে বোনদের গ্রুপগুলোতে দিয়েন। ভাইদেরও জানা থাকা দরকার। আপাতত এটা দিয়ে কাজ চলুক, আলিমগণ আরও নিখুঁত কিছু আমাদের জন্য বানালে এটা ভুলে যাবেন।

লেখাটি Shamsul Arefin Shakti ভাই এর নোট থেকে নেওয়া। ভুল ত্রুটি হলে তার সাথে দলিল সহ যোগাযোগ কইরেন।

পোস্টে যেসব প্রশ্নের উত্তর পাবেন

  1. ভ্রু প্লাক করা কি হারাম?
  2. লিপস্টিক দেওয়া কি হারাম?
  3. ফেসিয়াল করা কি হারাম?
  4. ভ্রু প্লাক করলে কি ক্ষতি হয়?
  5. বাসায় মেকআপ করা? 

আসল পোস্ট শুরু। ↓

বাইরের লোকের জন্য সব সাজই হারাম,সে আপনি নিক্বাব করেন, আর না-ই করেন।
সেটা আমাদের আলোচ্য না। নিক্বাব না করলেও সামান্যতম সাজ নিয়েও বাইরে বেরোনো
কোনোভাবেই জায়েয না।

কথার কথা ধরে নিলাম, কুরআনে নিক্বাবের কথা সরাসরি নেই।
কিন্তু সাজ-প্রদর্শন যে করা যাবে না,এটা তো ভাই সরাসরি-ই আছে।

স্বামীর জন্য করা যাবে এমন জায়েয সাজ 

পাতলা Hair Dye ব্যবহার করে চুল কালো ছাড়া অন্যান্য রঙ করা যাবে [1]। রঙ এত বেশি গাঢ় হওয়া যাবে না যাতে পানি না লাগে।

কসমেটিকস ব্যবহারের কিছু সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে। যেকোন কসমেটিক্স নারীর জন্য জায়েয হবার কয়েকটি মূলনীতি[2]—

- নন-মাহরাম দেখবে না
- পদার্থটা হালাল হতে হবে, যেমন (মেহেদী, সুরমা)। হারাম কিছু ব্যবহার করা যাবে না (যেমন: মৃত পশুর চর্বি যা শরঈভাবে জবাই হয়নি)।
- ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হওয়া চলবে না। তবে অধিকাংশই ক্ষতিকর কেমিক্যাল।
- সৌন্দর্য বর্ধনটা সাময়িক হবে। স্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী হবে না (সৃষ্টি বিকৃতির ভিতর পড়ে যাবে)।
- কাফিরদের জন্য ইউনিক, এমন কিছু ব্যবহার (সিন্দুর, টিপ)
- অপব্যয়ের পর্যায়ে না হওয়া
- ওযুর প্রতিবন্ধক না হওয়া (নেইলপলিশ, মুখে ব্লীচ, চুলে মোটা কালার)


ভুরু ও চুল ছাড়া মুখের অন্যান্য পশম দূর করা, প্লাক করা, কাটা, শেভ করা, লেজার দিয়ে রিমুভ করা জায়েয। যেমন ঠোঁটের উপরে, গালে, হাত-পা, উরু ইত্যাদি [3]।

সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য উঁচুনিচু দাঁত সমান করা জায়েয নেই। তবে যা চেহারাকে বিকৃত করে দেয়, এমন উঁচুনিচু হলে তা সমান করা জায়েয। তবে গ্যাপ কমানো-বাড়ানো জায়েয না [4]।

চুল স্ট্রেইট করা, কোঁকড়া করা, ফুলানো, ঢেউ খেলানো (হেয়ারড্রেসিং) এগুলো জায়েয। [5] ইমাম নববী রহ. ইমামুল হারামাইনের মত উল্লেখ করেন শরহুল মুহাযযাবে: বিবাহিতা নারীর যেমন চুলে মেহেদি লাগিয়ে রাঙানো জায়েয, তেমনি চুল কোঁকড়ানোও (curl) জায়েয। [6]

ক্রীম দিয়ে পীলিং বা ফেস-মাস্ক করে ব্ল্যাকহেড, ময়লা, দাগ দূর করা জায়েয[7]। তবে একটা কসমেটিক সার্জারি আছে যাকে বলে ‘ফেসিয়াল পীলিং’, যাতে চামড়ার উপরের একটা অংশ ফেলে দেয় বয়সের বলিরেখা দূর করার জন্য, এটা নাজায়েয[8]।

ক্রীম, কসমেটিক্স ব্যবহার করে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো, ফর্সা করা জায়েয যদি তা ক্ষণস্থায়ী হয়। স্থায়ী কিছু হলে জায়েয না।

চোখের পাপড়ি রঙ করা (mascara) জায়েয[9]। তবে আলগা পাপড়ি লাগান নাজায়েয।

স্বামীর জন্য চোখে রঙিন লেন্স পরা জায়েয [10]। কিন্তু পাত্রপক্ষকে দেখানো, নন-মাহরামের মাঝে নিষেধ।

লিপস্টিক ও ব্লাশার (গালে গোলাপী শেড দেয়া) ব্যবহার জায়েয, বিশেষ করে বিবাহিতাদের জন্য [11]।

এবার দেখি চলুন কোন কোন সাজ স্বামীর জন্যও করা যাবে না। সৃষ্টি বিকৃতির ভিতর পড়বে বা কাফিরদের অনুকরণের ভিতর পড়বে।

শাইখ সালিহ আল-উসাইমিন রহ. বলেন:
আলিমগণের মধ্যে কেউ নারীদের চুল কাটাকে মাকরুহ বলেছেন, কেউ হারাম বলেছেন, আর কেউ জায়িয বলেছেন।

উপমহাদেশের আলিমগণের মত হল, সামনে পিছনে কোনো জায়গা থেকেই যে কোন পরিমাণ চুল কাটা [12] নাজায়েয ও হারাম। কেবল ‘আগা ফাটা’র জন্য সামান্য কাটার অনুমতি আছে। পুরুষের জন্য যেমন দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব, নারীদের জন্যও চুল লম্বা করা ওয়াজিব। [13]

আরব আলিমগণ কয়েকটি শর্তে হারাম বলেন।

- যদি গাইর-মাহরামকে দেখানোর উদ্দেশ্যে হয়
- যদি কাটার উদ্দেশ্য হয় কাফির নারীদের অনুকরণ
- যদি পুরুষের সদৃশ হয়
- যদি নন-মাহরাম চুল কাটে
- যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাটে

তাঁরা সহীহ মুসলিমের একটি হাদিসের বরাতে উপরের শর্তে চুল কাটাকে জায়েয বলেছেন। হাদিস হল: আবু সালামাহ ইবনে আবদুর রহমান রা. বলেন: ‘নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ রা. চুল কাটতেন যেন তা কানের লতির নিচে না আসে’। আরবি ভাষারীতি অনুসারে এর দ্বারা কাঁধের সামান্য নিচ পর্যন্ত অর্থ দাঁড়ায়। ইমাম নববী রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেছেন: নারীদের জন্য চুল কাটার অনুমতি আছে। [14]

পরচুলা পরিধান করা বা কৃত্রিম চুল দিয়ে চুল লম্বা করা। স্বামীর জন্যও করা যাবে না।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘সেই নারীর উপর আল্লাহর লানত, যে কৃত্রিম চুল লাগিয়ে দেয় এবং যে লাগিয়ে নেয়। এবং যে নারী ট্যাটু করে এবং যে করিয়ে নেয়’। [15]

আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বর্ণনা করেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মেয়েদের ভ্রু উপড়ানো, দাঁতের মাঝে ফাঁক বাড়ানো, অতিরিক্ত চুল লাগানো এবং ট্যাটু করা থেকে নিষেধ করতে শুনেছি, যদি না কোনো অসুখের চিকিৎসা উদ্দেশ্য হয়।[16]


শাইখ উসাইমিনের মতে, তবে কেমোথেরাপির দরুণ বা কোন কারণে চুল পরে গেলে এর অনুমতি আছে, কেননা এর দ্বারা সৌন্দর্য বর্ধন উদ্দেশ্য না, খুঁত নিবারণ উদ্দেশ্য।

ভুরু প্লাক করা বা সাইজ করা হারাম। স্বামী চাইলেও নাজায়েয। কাটা, শেভ করা, সাইজ করা, তুলে ফেলা (প্লাক করা) কোনোটাই জায়েয না। যদি কোনো সমস্যা থাকে, যেমন তিল জাতীয় জন্ম দাগ, যেখানে থেকে অতিরিক্ত চুল বেরিয়ে ভুরুকে বিকৃত করে ফেলেছে, তাহলে অনুমতি আছে[17]।

কৃত্রিম আইল্যাশ (চোখের পাপড়ি) পরা নাজায়েয। কেননা এটাই কৃত্রিম চুল লাগানোর ভিতর পড়ে [18]।

টিপ পরা হারাম নাকি জায়েজ? 


টিপ পরা হিন্দুদের অনুকরণ। বাঙালি সংস্কৃতির নামে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় আচারকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার একটা প্রবণতা কারো কারো মধ্যে লক্ষ্যণীয়। নাচ ও টিপ— এমনই দুটো আচার, যা সরাসরি দেবদেবীদের উপাসনা হিসেবে করা হত। ‘টিপ’-কে হিন্দিতে বলা হয় ‘বিন্দি’, যা সংস্কৃত শব্দ ‘বিন্দু’ থেকে এসেছে। যা মূলত প্রাচীন হিন্দু প্রথা হলেও আজ ফ্যাশন হিসেবে এর ব্যবহার ব্যাপক। ঋগ্বেদ থেকে ৫০০০ বছর আগে এই প্রথার অস্তিত্ব জানা যায়। অনেকে ‘লাল রঙের টিপ’-কে সম্পৃক্ত করেন পশুবলি অনুষ্ঠানের সাথে।

তান্ত্রিক গূঢ়ার্থ মতে, ৬টি মৌলিক পয়েন্টের (ষড়চক্র) একটি হল দুই ভ্রুর মাঝখানটা, যার নাম ‘আজ্ঞা’। এখানে লাল ‘বিন্দি’ দেহের শক্তি ও মনোযোগ ধরে রাখে বলে তান্ত্রিক শাস্ত্র মনে করে।
প্রাচীন আর্য সমাজে বর কনের কপালে একটা লম্বা ‘তিলক’ দিত, যার অপভ্রংশ হল বর্তমান টিপ। বিবাহিতা নারীর ‘শনাক্ত চিহ্ন’ হলেও আজ অবিবাহিতরাও এটা ব্যবহার করে থাকে। প্রখ্যাত সব অভিধানও ‘bindi’-র অর্থকে বিবাহিতা হিন্দু নারীদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। (One of the most recognizable items in Hinduism is the bindi, a dot worn on women's foreheads.)[19]

সুতরাং ‘টিপ পরা’ অবশ্যই কাফিরদের সাদৃশ্য ধারণের মধ্যে পড়ে, যা পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের নীতির লঙ্ঘন। মুসলিম নারীদের অবশ্যই এই সাজ পরিহার করা ঈমানের দাবি।
ব্লিচিং হল স্কিন কালার দিয়ে ভুরু সাইজ করা (না তুলে ঢেকে ফেলা), বা মুখের লোম, কালো দাগ ঢেকে ফেলা। যদি সৌন্দর্য বাড়াতে করা হয় (ভুরু ঢাকা), তাহলে জায়েয নেই। কিন্তু যদি কালো দাগ, ভুরু ছাড়া মুখের অন্য লোম ঢাকার জন্য (খুঁত ঢাকা) করে, তাহলে জায়েয। [20]

কৃত্রিম নখ লাগানো নাজায়েয। আমাদের শরীয়াহ নখ ছোটো করতে বলেছে। কাফির নারীদের অনুকরণে শরীয়াবিরোধী সাজ অনুমোদিত নয় [21]

রেফারেন্স: 
[1] Darul Ifta - Darul Uloom Deoband, India; Fatwa: 1347/1347=M/1430 [Question # : 15576, Aug 19, 2009 ]
[2]Islam Q&A,questions # 119359
[3] Islam Q&A, Supervised by: Shaikh Salih Al-Munajjid; questions # 13744
[4] Islam Q&A,questions # 69812
[5] Guidelines and reservations regarding hairdressing for women, 123351
[6] আল-মাজমুক শরহুল মুহাযযাব ৩/১৪০ সূত্রে মালয়েশিয়ার সরকারি ইফতা [https://www.muftiwp.gov.my/en/artikel/al-kafi-li-al-fatawi/3621-al-kafi-1340-the-ruling-of-hair-rebonding-or-hair-straightening]
[7]Islam Q&A,questions # 145307, 104920
[8]Islam Q&A,questions # 34215
[9]Islam Q&A,questions # 144957, 148664
[10]Islam Q&A,questions # 926 এবং IslamWeb, Wearing coloured contact lens, Fatwa No: 86767
[11]Islam Q&A,questions # 13466
[12] প্রাগুক্ত
[13] Darul Ifta - Darul Uloom Deoband, India; Fatwa: 1120/859/B=1434 [Question # : 46265, Jul 16, 2013]
[14] Islam Q&A, Supervised by: Shaikh Salih Al-Munajjid; It is permissible for a woman to cut her hair for the purpose of adornment, and there is nothing wrong with that, questions # 139414
[15] প্রাগুক্ত, questions # 113548
[16] আহমাদ, নাসাঈ থেকে সহীহ সনদে
[17] প্রাগুক্ত questions # 21393 এবং islamweb.net [Fatwa No: 84865]
[18] প্রাগুক্ত questions # 39301
[19] Bindi: Investigating the True Meaning Behind the Hindu Forehead Dot, Ancient Origins 3 MAY, 2019
[20]Ruling on bleaching the skin,Islam Q&A,questions # 2895
[21]Islam Q&A,questions # 22803

রেফারেন্স এর লিংক গুলো আমি পোস্ট থেকে মুছে দিতে বাধ্য হয়েছি, ফেসবুক এর নোট এর লেখা তাই ব্লগের HTML এর সাথে ঝামেলা হচ্ছিলো সাজাতে এজন্য।

আমি মূল পোস্টের লিংক দিয়ে দিচ্ছি আপনারা সেখানে রেফারেন্স এর লিংক গুলো পাবেন সাথে মূল লেখক কে প্রশ্নও করতে পারবেন।

Post Link: Shamsul Arefin Shakti Facebook Note
Next Post Previous Post