কসোভো থেকে কাশ্মিরঃ হিন্দুতবাদি ভারতের আগ্রাসন ও বাংলাদেশের মুসলিমদের নিরবতার ভয়াবহতা

হিন্দুতবাদি ভারতের আগ্রাসন ও মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির এবং মুসলিম গণহত্যা যুদ্ধের আলামত।- Monem Ibn Mohammed


২৮ জুন, ১৯৮৯। কসোভোর গাজীমেস্তান ময়দান লোকে লোকারণ্য হয়ে আছে। প্রায় দশ লাখ সার্ব এসে হাজির হয়েছে ময়দানে, তাদের উদ্দেশ্যে আজ স্লোবোদান মিলোসেভিচ (Slobodan Milošević) কিছু বলবেন [১]।

⟶যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়?
⟶বসনিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
⟶বসনিয়ার অর্থনীতি
⟶বসনিয়ার বর্তমান অবস্থা


গত কয়েকদিন ধরেই যুগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করা সার্বরা তুমুল উৎসাহের সাথে এই মাসটি উদযাপন করছে। সার্ব অর্থোডক্স চার্চের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ থেকে ৬০০ বছর আগে এই দিনটিতেই ঐতিহাসিক এই ময়দানে কসোভোর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধেই ওসমানীদের হাতে সার্বদের চূড়ান্ত পতন ঘটে, অস্তমিত হয় স্বাধীনতার সূর্য।

সেদিনর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সার্বদের অবিসংবাদিত নায়ক প্রিন্স লাজার রেবলিয়ানোভিচের (Lazar Hrebeljanović) মৃত্যু হয়, মৃত্যু হয় সুলতান মুরাদেরও (রহঃ)। এই লাজার রেবলিয়ানোভিচকে পরবর্তীতে অর্থোডক্স চার্চ পেট্রোন সেইন্টের (Patron Saint) মর্যাদায় ভূষিত করে।
আজকের এই বিশেষ দিনটি পালনের মাসখানেক আগে থেকেই লাজারের দেহাবশেষ নিয়ে পুরো যুগোস্লাভিয়ার সার্বপ্রধান অঞ্চলগুলোতে শোভাযাত্রা করা হয়েছে [২]।
সার্বদের মধ্যে এটি জাতীয়তাবাদের এক অন্যরকম আবেদন তৈরি করে। সারাদেশে শোভাযাত্রা শেষে লাজারের দেহাবশেষ গাজীমেস্তানের নিকট গ্রাচানিচার (Gračanica) একটি অর্থোডক্স মঠ তথা চার্চে রাখা হয়। কসোভোতে যে নায়কের পতন হয়েছে তাকে আবার কসোভোর মাটিতেই ফিরিয়ে আনা হল।
কিছুক্ষন পরেই মিলোসেভিচের হেলিকপ্টার গজীমেস্তানের আকাশে উড়তে লাগল। হেলিকপ্টারটি যখন মাটিতে নামছিল তখন মনে হচ্ছিল যেন খোদ সেইন্ট লাজার স্বর্গ হতে নেমে আসছেন। ডায়াসে উঠে মিলোসেভিচ তার বক্তৃতা শুরু করলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জসিপ ব্রজ টিটো (Josip Broz Tito) যখন যুগোস্লাভিয়াতে সোশ্যালিস্ট সরকার গঠন করেছিলেন তখন জাতীয়তাবাদকে শক্ত হস্তে দমন করেন; সেই যুগোস্লাভিয়াতে আবার হঠাৎ করে জাতীয়তাবাদের বিস্ফোরণ কেন ঘটল?

ভেঙ্গে যাওয়ার আগে যুগোস্লাভিয়া বলকানের সাতটি দেশের (সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, স্লোভেনিয়া, মন্টেনিগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া ও কসোভো) সমন্বয়ে গঠিত একটি ফেডারেশন ছিল। বহু জাতির মিশেলে এই ফেডারেশন অস্তিত্ব পেয়েছিল। ভাষাগত ভাবে অধিকাংশ মানুষ কথা বলত বিভিন্ন স্লাভিক (Slavic) ভাষায়, এছাড়াও ছিল আলবেনীয় এবং তুর্কিভাষীরা।
ধর্মীয়ভাবে পুরো দেশের মানুষ মূলত তিন ভাগে বিভক্ত ছিলঃ অর্থোডক্স (সার্ব, মন্টেনেগ্রিন, মেসিডোনিয়ান), ক্যাথলিক (ক্রোয়াট, স্লোভিন) ও মুসলিম (বসনিয়াক, আলবেনিয়ান, তুর্কি); এছাড়াও ছিল ইহুদীদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী।
তাই বহু জাতি ও ধর্মের সমন্বয়ে গঠিত এই ফেডারেশনকে রক্ষায় যুগোস্লাভিয়ার কমিউনিস্ট সরকার ধর্ম ও জাতীয়তাবাদকে নির্মূলের প্রয়াস চালায় এবং বাহ্যতভাবে এতে বেশ সফলতাও পেয়েছিল তারা। কিন্তু, তারপরও যুগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিশেষতঃ সার্বদের মধ্যে ধর্মমিশ্রিত এই জাতীয়তাবাদের উত্থানের পিছনে কারণ কি?
কয়েক বছর আগে ফিরে যাই। সোশ্যালিস্ট যুগোস্লাভিয়াকে যিনি শক্তহাতে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন সেই জসিপ ব্রজ টিটো ১৯৮০ সালের ৪-ই মে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পরেই আস্তে আস্তে দেশটিতে জাতীয়তাবাদের বিস্তার ঘটতে থাকে। তবে একটি বিশেষ ঘটনা জাতীয়তাবাদের পালে বেশী করে হাওয়া দিতে লাগল।
যুগোস্লাভিয়ার সবচেয়ে সংকটপূর্ণ অঞ্চলটি ছিল কসোভো। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসী আলবেনীয় মুসলিম, সাথে আছে তুর্কিদের একটি ছোট মাইনরিটি। সারাদেশের অধিকাংশ মানুষ যেখানে বিভিন্ন স্লাভিক ভাষায় কথা বলত সেখানে আলবেনিয়ানরা কথা বলত আলবেনীয় ভাষায় যা ভিন্ন ইলিরীয় (Illyrian) ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
সারা দেশের সাথে এইরূপ ধর্মীয় ও ভাষাগত পার্থক্যের কারণে কসোভো শাসন করা ছিল খুবই ঝামেলার ব্যাপার। তাই ১৯৭৪ সালে যুগোস্লাভিয়ার সংবিধান সংশোধন করে কসোভোকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেয়া হয়। ওসমানী আমল থেকেই কসোভোতে আলবেনীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এক সময় সার্বরা সেখানে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়।
এই সার্বদের কাছে অটোনোমি পছন্দনীয় ছিল না। এছাড়া, টিটোর মৃত্যুর পর যুগোস্লাভিয়ার অর্থনীতি যখন খারাপ হতে থাকে তখন কসোভোর অর্থনীতি আরও বেশী করে খারাপ হতে থাকে। অন্যদিকে, আলবেনিয়ানরাও সার্বদের খবরদারি আর পছন্দ করছিল না, তাই তারা বিদ্রোহের ভাব প্রকাশ করতে লাগল।
সুতরাং, এই সমস্ত কারণের সম্মিলিত প্রভাবে দলে দলে সার্বরা কসোভো ত্যাগ করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চলে যেতে থাকে। তবে রাজনৈতিক সুযোগ সন্ধানীরা এতে দ্রুতই ধর্মীয় ও জাতিগত রং দিতে থাকে। এই ঘটনাকে ব্যাবহার করে যারা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুসংহত করে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্লোবোদান মিলোসেভিচ।
কসোভো হতে সার্বদের এই ম্যাস-মাইগ্রেশন ইস্যুটি মিলোসেভিচের কাছে সুবর্ণ সুযোগ হয়ে ধরা দেয়। তিনি একে সার্ব জাতির প্রধান সংকট হিসেবে তুলে ধরে সার্বদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এই ইস্যুকে ব্যাবহার করেই ১৯৮৭ সালের মধ্যে তিনি সার্বিয়ার লীগ অফ কমিউনিস্টের প্রধান নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং ১৯৮৯ সালে যুগোস্লাভিয়ার সার্বিয়ার অংশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েই তিনি যুগোস্লাভ পার্লামেন্টে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে লাগলেন। যেহেতু সার্ব ও তাদের এলাই (Ally) দের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল তাই এক্ষেত্রে তাকে বেশী বেগ পেতে হয়নি। শুরুতেই যুগোস্লাভিয়ার সংবিধান পুনঃসংশোধন করে কসোভোর অটোনোমি ব্যাপকভাবে হ্রাস করা হয়। এছাড়াও হ্রাস করা হয় ভয়ভদিনার (Vojvodina) অটোনোমি।
মিলোসেভিচের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। তিনি যে বছর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সে বছরটি ছিল ঐতিহাসিক কসোভো যুদ্ধের ৬০০-তম বার্ষিকী। সেই বছরেই কসোভোর অটোনোমি হ্রাস করে তিনি সার্বদের মধ্যে এক যুদ্ধ জয়ের আবহ সৃষ্টি করেন, যেন সেই ঐতিহাসিক পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে, আর এখানে প্রতিপক্ষও তো সেই মুসলিমরাই।
এতদিন যে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ সুপ্ত ছিল তা প্রকাশ পেতে শুরু করল। মিলোসেভিচের ঘনিষ্ঠ সার্ব মিডিয়া আউটলেটগুলো এমনভাবে প্রচারণা চালাতে লাগল যেন বর্তমান সার্ব নেতারা যারা সার্ব জাতির স্বার্থের জন্য কাজ করছেন তারা কসোভোর মাঠে জীবন বলিদানকারী যোদ্ধাদের মতই এই যুগের যোদ্ধা [৩]।
অটোনোমি হ্রাস করার প্রতিবাদে বিক্ষোভরত আলবেনিয়ানদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হল [৪]। কমিউনিস্ট হয়েও মিলোসেভিচ এতদিন ধরে চলে আসা টিটোর ধর্ম ও জাতিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের নীতি হতে সরে আসতে লাগলেন।
ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে আরও উস়্কে দেয়ার জন্য মিলোসেভিচের নেতৃত্বে সার্ব কর্তৃপক্ষ কসোভো যুদ্ধের ষষ্ঠ শত বার্ষিকী সাড়ম্বরের সাথে পালন করার প্রস্তুতি নিতে লাগল। মিডিয়াগুলো প্রচার করতে লাগল কীভাবে কসোভো ঐতিহাসিক দিক দিয়ে সার্বিয়ার “অখণ্ড” অংশ।
নাট্যকার, গায়ক, চিত্রকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতারা কসোভোকে ঘিরে সার্বিয়ার গৌরবময় ইতিহাস মিডিয়াতে প্রচার করতে লাগল [৫]। দ্রুতই জাতীয়তাবাদের পারদ তুঙ্গে পৌছাল। সেইন্ট লাজারের দেহাবশেষ নিয়ে শোভাযাত্রার পাশাপাশি তাকে নিয়ে সিনেমা-নাটক তৈরি করে এই সংকটকে ধর্মীয় রং দেয়া হল।
সার্বদের মধ্যে এমন একটি ন্যারেটিভ দাঁড়িয়ে গেল যেন কসোভো থেকে সার্বদের এই ম্যাস মাইগ্রেশনের ব্যাপারটি ১৩৮৯ সালে সার্বদের পরাজয়ের মতই আরেকটি পরাজয়। তাই সার্বদের বড় বড় জনসভায় বার বার এই প্রতিজ্ঞায় উচ্চারিত হতে লাগল - “সার্বিয়া আর পরাজিত হবে না, সার্বরা আর কোন পরাজয় মেনে নিবে না” [৬]।
অবশেষে এল ২৮ জুন, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গাজীমেস্তানে ভাষণ দিলেন মিলোসেভিচ। কমিউনিস্ট হয়েও তিনি এই ভাষণে সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাইলেন কীভাবে সার্বরা কসোভোর মাঠে নিজেদের বলিদান দিয়ে খৃষ্টান ইউরোপকে ইসলামের হাত থেকে রক্ষা করেছে [৭]।
ইঙ্গিত দিলেন মধ্যযুগের প্রাক-উসমানী অর্থোডক্স গ্রেটার সার্বিয়া তথা “অখণ্ড সার্বিয়া’র” ব্যাপারে যখন বলকানে সার্ব সুপ্রেমেসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল [৮]।
আরও ইঙ্গিত দিলেন যে ৬০০ বছর আগের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়ে যায়নি (কসোভোর মাইগ্রেন্ট ক্রাইসিসকে যুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করলেন), এবং ভবিষ্যতে সেটা রক্তপাতে গড়াতে পারে [৯]।
তিনি এই ভাষণে ১৩৮৯-এ কসোভোর পরাজয় এবং ১৯৭৪ এর সংবিধান সংশোধনকে একই রকম পরাজয় হিসেবে উপস্থাপন করেন, এবং কীভাবে সংবিধান পুনঃসংশোধন করে কসোভোর অটোনোমি হ্রাস করে ৬০০ বছরের পুরনো গ্লানিকে মুছে ফেলা হয়েছে তা দেখান।
এই ভাষণ শেষে জাতীয়তাবাদের উগ্র উল্লাস বয়ে যায় চারিদিকে। গাজীমেস্তানে সার্বরা চিৎকার করে বলতে থাকে, “কসোভো সার্বেদের। প্রিন্স লাজার, তুমি দুর্ভাগ্যবান ছিলে যে তুমি তোমার পাশে স্লোবোকে (মিলোসেভিচ) পাওনি”। মিলোসেভিচের নাম হয়ে যায় “মিনি লাজার”।
তারা আরও বলতে থাকে, “ইউরোপ, তোমার কি মনে নেই যে আমরা তোমাকে রক্ষা করেছি” [১১]। অর্থাৎ, তারাই ইউরোপের খৃষ্টান সত্ত্বাকে রক্ষা করেছে এই মিথ তাদের মধ্যে গেঁড়ে বসল।
১৯৯৩ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি কলামে থমাস এ. এমার্ট (Thomas A. Emmert) এ ব্যাপারে লিখেছেন যে, “এই ভাষণের পর থেকেই সার্বরা নিজেদের এবং বিশ্বকে বার বার মনে করিয়ে দিতে থাকে যে ইসলামিক মৌলবাদ হতে ইউরোপকে রক্ষা করতে তারা প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে। এই মিথটি (Myth) আসলে তাদের নিজেদের মিথ্যা অহমিকার পালে আরও হাওয়া দিচ্ছিল।
তারা বুঝতেও চাচ্ছিল না যে ইউরোপ ও আমেরিকার কাছে তারা সামান্য গুরুত্বই রাখে এবং প্রতিরক্ষার জন্য ইউরোপ ও আমেরিকা সার্বদের উপর কোনভাবেই নির্ভরশীল নয় [১২]”।
এই ভাষণ ছিল যুগোস্লাভিয়ার মৃত্যুঘণ্টা বাজার মতই একটি ব্যাপার। এটি ছিল টিটোর ধর্ম ও জাতীয়তাবাদহীন রাজনীতির প্রতীকী মৃত্যু [১৩]।

এভাবেই কসোভোকে ঘিরে ধর্মীয় জাতীয়াতাবাদের উত্থান ঘটে সার্বদের মধ্যে [১৪]। পুরনো দিনের মতই এবারও প্রধান শত্রু হচ্ছে মুসলিমরা, দ্বিতীয়ত ক্যাথলিকরা।
ইতালিতে ফ্যাসিজমের উত্থান হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যের হারানো গৌরবকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য, জার্মানিতে নাৎসিজমের উত্থান হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান জাতির উপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায় অপমানের কঠিন বদলা নিতে।
তেমনিভাবে, ঐতিহাসিক পরাজয়ের বদলা এবং গ্রেটার সার্বিয়া তথা যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে সার্ব সুপ্রেমেসি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সার্বদের মধ্যে ফ্যাসিজমের নিজস্ব সংস্করণ চেটনিক (Chetnik) আইডিওলজির দ্রুত ও গোপন উত্থান ঘটায়, এই চেটনিকরা পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জুড়ে ভয়ংকর নৃশংসতার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছে সারা যুগোস্লাভিয়াতে।

অর্থাৎ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতে ঘুমিয়ে থাকা এই চেটনিক দানব হঠাৎ করে আবার জেগে উঠতে শুরু করল, এবং তা অতি অল্প সময়ের ব্যবধানেই। ফ্যাসিজমের ইতিহাস পড়লে সবসময় এমন কিছু বিশেষ দিন পাওয়া যায়, যেদিনগুলোতে জাতিসমূহের এই ফ্যাসিস্ট রূপগুলো দুনিয়ার সামনে উন্মোচিত হয়ে যায়। গাজীমেস্তান ছিল তেমনি একটি দিন, একটি টার্নিং পয়েন্ট।
এই দিনটি সরাসরি প্রকাশ করে দেয় যে, যুগোস্লাভিয়াতে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার দিন শেষ এবং তার বদলে জায়গা করে নিচ্ছে অতি ডানপন্থী ও অসহিষ্ণু মতবাদ। এর প্রেক্ষিতেই প্রথমে যুদ্ধ শুরু হয় সার্ব ও ক্রোয়াটদের মধ্যে, যা বীভৎস রূপ লাভ করে বসনিয়াতে।
কয়েক বছর পর কসোভোতেও যুদ্ধ শুরু হয় এবং সেখানে আলবেনিয়ানদের প্রায় নির্মূল করে ফেলছিল সার্বরা যদি “বিশ্ব অভিভাবক” নিজেদের নাক বাঁচাতে কসোভোকে উদ্ধার করতে না আসত।
স্লোবোদান মিলোসেভিচ যে বছর সার্বিয়ার লীগ অফ কমিউনিস্টে শক্ত জায়গা করে নেন, সে বছরেই কসোভো হতে প্রায় ৩০০০ মাইল দূরে বলকানের মতই এক পাহাড়ি অঞ্চলে ইলেকশনের আয়োজন করা হয়।
কাশ্মীরিরা দীর্ঘদিন ধরে এই নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নির্বাচনে তারা এবার মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্টকে (MUF) ভোট দিবে। MUF দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কাশ্মীরে জাতিসংঘ কর্তৃক আশ্বাস দেয়া গণভোটের আয়োজন করতে, এই গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ নির্ধারণ করবে যে কাশ্মীর স্বাধীন রাষ্ট্র হবে, নাকি পাকিস্তানের অংশ হবে নাকি ভারতের সাথেই থাকবে।
নির্বাচনের দিন সবাই দলে দলে ভোটকেন্দ্রে গেল ভোট দেয়ার জন্য। কাশ্মীরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোট পড়ল সেবার, প্রায় ৮০%। কিন্তু, ফলাফল পাওয়ার পর দেখা গেল MUF মাত্র ৪টি সিটে জয়লাভ করেছে; দিল্লীপন্থী ন্যাশনাল কনফারেন্সকে বিজয়ী ঘোষণা করা হল।
ক্ষোভে ফেটে পড়ল পুরো উপত্যকা। সহিংসতার ভয়ে কাশ্মীর ছেড়ে পালাল কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিত সম্প্রদায়। একে কারণ বানিয়ে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরিদের উপর চাপিয়ে দিল এক অসম যুদ্ধ। পাশ করা হল AFSPA act। এবার ভারতীয় বাহিনী স্বাধীন, কেউ তাদের বিচার করবে না। তারা কাশ্মীরে গুম, খুন ও যৌনসন্ত্রাসের এক বিভীষিকাময় অধ্যায় শুরু করল।
কসোভো ও কাশ্মীর, এ দুটি অঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব অনেক হলেও, মিল রয়েছে বেশ কিছু। কসোভোর মত কাশ্মীরও ভারতের অন্যান্য অঞ্চল হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন, ধর্মীয় ও ভাষাগতভাবে।
কাশ্মীর ভারতের একমাত্র রাজ্য যা মুসলিম প্রধান। ভাষাগতভাবে কাশ্মীরিরা অন্যান্য ভারতীয়দের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

যেখানে অধিকাংশ ভারতীয় হয় বিভিন্ন ইন্ডিক (Indic), দ্রাবিড় (Dravidian) অথবা সাইনো-তিবেতান (Sino-Tibbetan) ভাষায় কথা বলে সেখানে কাশ্মীরিরা কথা বলে দারদিক (Dardic) ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি ভাষায়, যা স্থানীয়ভাবে কশুর (Koshur) নামে পরিচিত। সংস্কৃতিগত দিক দিয়েও কাশ্মীর ভারতের অন্যান্য অঞ্চল হতে বেশ ভিন্ন।
তাই কাশ্মীরি নেতা শেইখ আবদুল্লাহ সংকটে ভরপুর কাশ্মীরকে ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্ত করেন শুধুমাত্র এই শর্তে যে কাশ্মীরকে ভারতের মধ্যে ব্যাপক স্বাধীনতা দেয়া হবে, যা ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল 370 এবং 35A - এর মাধ্যমে প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়।
তবে এতে বাঁধ সাধেন শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি, তিনি ছিলেন আর.এস.এস নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা (এটিই পরবর্তীতে আজকের বিজেপি-তে রূপ নেয়)।
তিনি আর্টিকেল 370 এবং 35A রদের জন্য কাশ্মীর অভিমুখী মার্চ করেন, এবং কাশ্মীরে পুলিশের হাতে বন্দী হয়ে সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। এটি সারা ভারতে আলোড়ন ফেলে দেয়। এভাবেই কাশ্মীর ইস্যুকে ব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদীরা ভারতে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে।
যাই হোক শেইখ আবদুল্লাহ’র মোহভঙ্গ হতে দেরী হয় না, যে স্বাধীনতা পাওয়ার কথা তা আর পাওয়া হয়ে উঠে না। কাশ্মীরিদেরও মনে হতে থাকে যে একমাত্র গণভোটের মাধ্যমেই তারা পাবে কাঙ্ক্ষিত আজাদি।

সেই লক্ষ্যেই তারা ৮৭-তে ভোট দিয়েছিল MUF-কে। কিন্তু নির্বাচনে ভারতের জোচ্চোরির পর অশান্ত হয়ে উঠে উপত্যকা। সহিংসতার ভয়ে কাশ্মীর ছেড়ে পালায় লাখ লাখ কাশ্মীরি পণ্ডিত।
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এই ইস্যুটি বিজেপি তথা আর.এস.এসের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জন্য সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেয়।
কসোভোর মাইগ্রেন্ট ইস্যুর মত এই ইস্যুকেও ব্যবহার করে ভারতীয় গণমানুষের সুপ্ত হিন্দুত্ববাদী চেতনাকে জাগ্রত করা হয়। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করেই ভারতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে বিজেপি।

কসোভোকে কেন্দ্র করে যেমন যুগোস্লাভিয়াতে উগ্র ডানপন্থার উত্থান হয়েছে তেমনি কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদীরা ভারতে শক্তিশালী অবস্থান দখল করে। সুতরাং, কসোভোর মতই ভারতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানে বেশ বড় ভূমিকা রাখে কাশ্মীর।
এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখা ভালো যে, কাশ্মীরে যখন ভারতীয় বাহিনীর গুম, খুন ও ধর্ষণের উৎসব চলছিল তখন সেখানে গভর্নর হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন সেই জাগমোহন মালহোত্রা হচ্ছেন বিজেপির একজন সদস্য। তার নেতৃত্বেই কাশ্মীরের বিচ্ছিনতাবাদ ঠেকাতে ভারতীয় দখলদার বাহিনীর নৃশংসতা মাত্রা ছাড়ায়।
এমনকি এই আর.এস.এসের নেতৃত্বেই ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরের পাশ্ববর্তী জম্মু রাজ্যে প্রায় ২ লাখ মুসলিমকে হত্যা করে সেখানকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়।
সুতরাং, কাশ্মীরে দখল বজায় রাখা সবসময় ভারতের হিন্দুত্ববাদী চরিত্রের কাছে একটি এজেন্ডা ছিল। এর দখল ছেড়ে দেয়া মানে তাদের “অখণ্ড ভারত” - এর স্বপ্ন নস্যাৎ হয়ে যাওয়া। সার্বদের কাছে কসোভো যেমন “অখণ্ড সার্বিয়া”-র অংশ তেমনি হিন্দুত্ববাদীদের কাছে কাশ্মীর তাদের “অখণ্ড ভারত”-এর অংশ। কসোভো ছেড়ে দেয়া যেমন সার্বিয়ার ন্যাশনাল ইগোর উপর আঘাত তেমনি কাশ্মীর ছেড়ে দেয়া হিন্দু ভারতের ন্যাশনাল ইগোর উপর আঘাত।
যাই হোক পণ্ডিত ইস্যুতে শক্তিশালী হওয়া আর.এস.এস ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদকে শহীদ করল। এর জের ধরে সংঘটিত বিভিন্ন গণহত্যায় শহীদ হল আরও প্রায় আড়াই হাজার মুসলিম।
বাবরী মসজিদকে শহীদ করা ছিল বিজেপির সবচেয়ে বড় জয়। এর মাধ্যমে ৫০০ বছর আগে শুরু হওয়া মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতি একটা বড় প্রতীকী প্রতিশোধ নেয়া হল, তৈরি হল ভারত থেকে আস্তে আস্তে ইসলামকে মুছে ফেলার একটি মডেল।
এই সবগুলো ঘটনাই তাদের জনপ্রিয়তাকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই করল। ফলশ্রুতিতে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করল তারা (বিজেপি)।
যাই হোক সেই বিজেপি এখন ভারত শাসন করছে। আজ অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন প্রতিটি হিন্দুর মন ছুঁয়েছে, তা যত অবাস্তবই হোক না কেন। উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ ছেয়ে গেছে পুরো হিন্দুস্তানে। বাবরী মসজিদকে শহীদ করার পর হিন্দু জাতীয়তাবাদের দ্বিতীয় বড় জয় আসে কাশ্মীরে।
গত বছরের ৫-ই আগস্ট আর্টিকেল 370 এবং 35A রদ করা হয়েছে, কাশ্মীরে আরোপ করা হয়েছে অমানবিক এক কারফিউ। সার্বরা কসোভোর অটোনোমি হ্রাস করে যা করেছে ঠিক যেন তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে কাশ্মীরে। এখনও পর্যন্ত কাশ্মীরের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়নি। “অখণ্ড ভারত” নামে ভারতের নিজস্ব কলোনিয়াল প্রজেক্ট রূপ পেতে শুরু করেছে কাশ্মীরে। তাই ৫-ই আগস্ট হিন্দুত্ববাদীদের কাছে এক মহান দিন, হিন্দুত্ববাদী সুপ্রেমেসি প্রতিষ্ঠা পাওয়ার দিন।
হোক জয় বা পরাজয়, কিছু কিছু দিন থাকে যা জাতির চেতনাকে শেইপ (Shape) করে। কিছু কিছু দিন থাকে যেগুলোকে ঘিরে একটি জাতির সত্ত্বা ঘুরপাক খায়। এগুলো হচ্ছে একটি জাতির জন্য মাহাত্ম্যপূর্ণ দিনসমূহ। ২৮-জুন যেমন বেদনাদায়ক পরাজয় এবং অসংখ্য সেক্রিফাইসের কারণে সার্বদের কাছে মহৎ একটি দিন, তেমনি ৫-ই আগস্ট অখণ্ড ভারত আইডিয়ার একটি বড় জয় হিসেবে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয়দের কাছে মহৎ একটি দিন।
পপুলিস্ট ডানপন্থী নেতারা সবসময় এই দিনগুলোকে ব্যাবহার করে, জাতীয় চেতনার ঘোড়াকে চাবুক মেরে জাগিয়ে তোলার জন্য। মিলোসেভিচ যেমন ১৯৮৯ সালের ২৮ জুনকে ব্যাবহার করেছিলেন সার্বদের জাতীয় চেতনাকে সুসংহত ডানপন্থী রূপ দিতে তেমনি এই বছর ভারতীয় শাসকরা ৫-ই আগস্টকে ব্যাবহার করেছে একই উদ্দেশ্যে।
শহীদ বাবরী মসজিদের লাশের উপর রাম মন্দির তৈরি করার প্রকল্প হিন্দুত্ববাদী ভারতের অন্যায়ের অন্যতম বড় একটি উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে সবসময় লিখা থাকবে।
এই রাম মন্দির তৈরি করার জন্য অযোধ্যায় ভূমি-পূজন ও প্রথম ইট স্থাপনের জন্য তারা বেছে নিয়েছে ৫-ই আগস্টকে। এই দিনটিকে তারা এই জন্যই বেছে নিয়েছে যাতে একে ব্যাবহার করে হিন্দু জাতীয়তাবাদকে আরও শক্তিশালী ও সুসংহত করা যায়।
গাজীমেস্তানের মত বহুদিন ধরে এর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, মিডিয়াতে এ নিয়ে হয়েছে অনেক উৎসব ও তোলপাড়, দেখানো হয়েছে কাশ্মীর কীভাবে ভারতের অখণ্ড অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রিন্স লাজারের মতই হিন্দু রাজাধিরাজ পুরুষোত্তম রামকে তার রাজত্বে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
যারা রাম মন্দির প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে তাদেরকে দেখানো হচ্ছে রামায়ণের রাম, লক্ষণ ও হনুমানের সেনা হিসেবে। করোনার প্রাদুর্ভাব না থাকলে এই উৎসব যে গাজীমেস্তানের চেয়ে কয়েক গুণ বড় করে পালন করা হত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গাজিমেস্তানে যেমন সার্ব ডানপন্থার পরিপক্ব রূপ প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি ৫-ই আগস্ট অযোধ্যায় প্রকাশ পেয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদের পরিপক্ব রূপ।
গাজিমেস্তান যদি যুগোস্লাভিয়ার আনঅফিশিয়াল মৃত্যুঘণ্টা হয় তাহলে ৫-ই আগস্টের ভূমিপূজন উৎসব হচ্ছে সেকুলার ভারতের আনঅফিশিয়াল মৃত্যুঘণ্টা। গাজীমেস্তানে যেমন যুগোস্লাভিয়ার টিটোইস্ট নীতির মৃত্যু ঘটেছে, তেমনি ভারতের সেকুলারিজমের মৃত্যু ঘটেছে অযোধ্যায়।
সুতরাং, এখন থেকে সেকুলারিজম নয় বরং হিন্দুত্ববাদই হবে ভারতের মূল চালিকাশক্তি। এখন শুধু আমরা দিন গোণতে পারি যে এর অফিশিয়াল ডিক্লারেশন কবে আসবে।
ফ্যাসিজম, উগ্র ডানপন্থা বা হিন্দুত্ববাদ যাই নাম দেন না কেন, এর ইঞ্জিন পুরোপুরি চালু হয়ে গেছে। ইতালিতে ফ্যাসিস্টরা আসার পর প্রথম আক্রমনের শিকার হয় ইতালির বরাবরে থাকা ভূমধ্যসাগরের অপর প্রান্তের দেশ লিবিয়া, আক্রমণের শিকার হয় কাছেই থাকা এড্রিয়াটিকের অপর পাড়ের দেশগুলো।

তেমনিভাবে নাৎসিদের দখলদারিত্বের প্রথম শিকার হয় পাশ্ববর্তী দেশ চেকোস্লোভাকিয়া ও তারপর শিকার হয় পোল্যান্ড। সুতরাং, ডানপন্থা বৃদ্ধির একটি নিশ্চিত পরিণতি হচ্ছে যুদ্ধ। উপমহাদেশের অবস্থা যেভাবে আগাচ্ছে সেভাবে চলতে থাকলে যুদ্ধ আসবে, নিশ্চিত ভাবেই আসবে।
আসবে এক বিকট, বীভৎস ও নির্দয় যুদ্ধ। ইউরোপে এসেছিল, যুগোস্লাভিয়াতে এসেছিল, সুতরাং এখানেও আসবে। সেটা কীভাবে শুরু হবে তা এখনও অজানা, কিন্তু শুরু অবশ্যই হবে। কারণ, যে মূর্খ সমাজের উপর ভিত্তি করে ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা পায় সেই মূর্খ সমাজকে সন্তুষ্ট রাখতেই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়াতে হয়।
মুসলিমমুক্ত ভারত বা অখণ্ড ভারতের স্বপ্নে বিভোর হিন্দুত্ববাদী ভারত কি সেই পথেই হাঁটবে? অনেকেই বলবে যে এগুলো সব ইলেকশন স্টান্ট, মুসলিমমুক্ত ভারত বা অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন বাস্তবসম্মত নয়, তাই হয়ত কিছুই হবে না।
ইতালিয়ান ফ্যাসিস্টদের নিও-রোমান ইম্পায়ার তৈরি করার স্বপ্ন, জার্মানদের অ্যারিয়ান সুপ্রেমেসি তৈরি করার স্বপ্ন অথবা বলকানে সার্বদের সার্ব সুপ্রেমেসি তৈরি করার স্বপ্নও বাস্তব সম্মত ছিল না, তবুও অবাস্তব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাষ্ট্রগুলো একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

এটাই উগ্র ডানপন্থার নিয়তি, অবাস্তব স্বপ্নের পিছনে ছুটে তারা তৈরি করবে ঝড়, যে ঝড়ে তারা নিজেরা সহ আশে পাশের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
তাই কল্পিত অখণ্ড ভারতের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেরও এই ব্যাপারে যথেষ্ট শঙ্কা থাকা উচিত। গাজীমেস্তানের সাথে অযোধ্যার মিলটি দেখতে হবে, ম্যাসেজ রিডিংয়ে কোনভাবেই ভুল করা যাবে না।
যেহেতু আমরা মুসলিম রাষ্ট্র এবং আমাদের কোন নিউক্লিয়ার ডিটারেন্স (Nuclear Deterrence) নেই, তাই পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রের রিসেন্ট ঘটনাপ্রবাহে আমাদের শঙ্কা সবচেয়ে বেশী থাকা উচিত। আমরা কি এই ব্যাপারে সচেতন হচ্ছি?
নাকি যুদ্ধ-সংঘাত যখন নিজেদের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছাবে তখন হব?
কাশ্মীর মডেল যখন এখানে আমদানি করা হবে তখন কি আমাদের চোখ খুলবে? যখন একের পর এক রচিত হবে স্রেব্রেনিৎসা বা রেইপ অফ ন্যানকিং (Rape of Nanking)। অখণ্ড ভারতের সেনানীরা কি করতে পারে তার কিছু স্যাম্পল দেখিয়েছ গুজরাট গণহত্যায়।
তারা আমাদের মুমিন নারীদের সাথে কীরূপ আচরণ করেছিল তা একটু কষ্ট করে পড়ে দেখার অনুরোধ জানালাম। সুতরাং পানি কোথায় গড়ালে এটা আমাদের এই জাতি ও রাষ্ট্রের মাথা ব্যাথার কারণ হবে? - প্রশ্নটা রেখে গেলাম।

দলিল/ রিসোর্স /তথ্যসূত্রঃ

১/ Zirojević, Olga. "Kosovo in the Collective Memory", p. 207-208, in The Road to War in Serbia: trauma and catharsis, ed. Nebojša Popov. Central European University Press, 2000.
২/ Milan Milošević, "The Media Wars: 1987 - 1997", pp. 110-11 in Burn This House: The Making and Unmaking of Yugoslavia, ed. Jasminka Udovički, James Ridgeway, Duke University Press, 2000.
৩/ Edit Petrović, "Ethnonationalism and the Dissolution of Yugoslavia", p. 170.
৪/ Kola, Paulin. In Search of Greater Albania, pp. 181-182. C. Hurst & Co, 2003.
৫/ Crnobrnja, Mihailo. The Yugoslav Drama, p. 102. McGill-Queen's Press, 1996.
৬/ Volkan, Vamik D., William F. Greer & Gabriele Ast. The Third Reich in the Unconscious: Transgenerational Transmission and Its Consequences, pg. 47. Psychology Press, 2002.
৭/ Sell, Louis. Slobodan Milošević and the Destruction of Yugoslavia, p. 88. Duke University Press, 2003.
৮/ Cigar, Norman. "The Serbo-Croatian War, 1991", p. 57 in Genocide After Emotion: The Postemotional Balkan War, ed. Stjepan G. Mestrović. Routledge (1996).
৯/ International Criminal Tribunal, transcript 020214IT, un.org, 14 February 2002.
১০/ Ramet, Sabrina Petra & Vjeran Pavlaković, Serbia Since 1989: politics and society under Milošević and after, p. 13. University of Washington Press (2005).
১১/ Sell, Louis. Slobodan Milošević and the Destruction of Yugoslavia, p. 88. Duke University Press, 2003.
১২ এবং ১৪/ Emmert, Thomas A. "Why Serbia Will Fight for 'Holy' Kosovo; And the Peril for Western Armies Approaching the Balkan Tripwire". Washington Post, 13 June 1993.
১৩/ Thomas, Robert. Serbia Under Milošević: Politics in the 1990s (pg. 50), C. Hurst & Co. Publishers, 1999.

  • কসোভো ইসলাম
  • কসোভোর রাজধানী
More : কসোভো, ইসলাম, বসনিয়া, ভারত, হিন্দু সন্ত্রাসী, যুদ্ধ, মুসলিম।
  1. বসনিয়া যুদ্ধে বাংলাদেশ
  2. বসনিয়ার ধর্ম
  3. বসনিয়ার আয়তন
  4. কসোভোর ইতিহাস
Next Post Previous Post