ইসলামিক শরীয়াহ ও আধুনিক মুনাফিক মুসলিম | আয়নাঘর ড. ইয়াদ আল-কুনাইবি

বাংলা ইসলামিক বই আয়নাঘর লেখক ড. ইয়াদ আল-কুনাইবি | শরীয়াহ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা


শরীয়াহ নিয়ে আরেকটি বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা - শরীয়াহকে আজকের যুগের জন্য অপ্রতুল, অপর্যাপ্ত কিংবা অপরিপূর্ণ মনে করা। এমন মনে করা যে শরীয়াহর অন্য কিছুর প্রয়োজন আছে।
.
আজ অনেকেই মনে করেন শরীয়াহ শাসন দিয়ে বর্তমান সময়ের চাহিদা মেটানো যাবে না। অনেকে বিশ্বাস করেন পরিপূর্ণভাবে শরীয়াহ অনুসরণ করা আজ সম্ভব না। আধুনিক সময়ে রাষ্ট্র শরীয়াহ দিয়ে চলবে, এ চিন্তাটাই অনেকের কাছে অবাস্তব। তারা মনে করে শরীয়াহ যুগের চাহিদা মেটাতে অক্ষম। কেউ কেউ এটা সরাসরি বলে ফেলে। আর কেউ কেউ এ চিন্তাগুলো প্রকাশ করে নানান প্রশ্নের মোড়কে।
.
এ ধরনের মানুষদের অনেকেই মনে করেন শরীয়াহতে অসম্পূর্ণতা আর কমতি আছে। আর এগুলো মেটানোর জন্য গণতন্ত্রের মতো আদর্শগুলো থেকে কিছু কিছু জিনিস ধার করা দরকার।
নিঃসন্দেহে এটা একটা মারাত্মক ভুল ধারণা।
.
এই ভুল ধারণার পেছনে বড় একটা কারণ হলো আমাদের আজকের বাস্তবতা। আজ আমরা এমন একটা সিস্টেমের অধীনে থাকি, যা ইসলামের দৃষ্টিতে পুরোপুরি অবৈধ। অবৈধ এ সিস্টেমের প্রভাব আমাদের জীবনে পড়ে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঢুকে পড়ে বিভিন্ন ক্ষতিকর, হারাম বিষয়। হারামের সাথে সহাবস্থানে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাই।


আরো দেখুনঃ 
.
ইসলাম নিয়ে আমাদের আলোচনার বিশাল একটা অংশ বরাদ্দ থাকে আমাদের জীবনে জোর ঢুকে পড়া এই হারাম বিষয়গুলো নিয়ে।
‘অমুক জিনিস কি হারাম?
‘কেন হারাম?’
‘আচ্ছা এই হারামের বিকল্প কীভাবে তৈরি করা যায়?’
‘আচ্ছা অল্প কিছুটা হারাম কি মেনে নেয়া যায় না?’
আমাদের চিন্তা আটকে থাকে এমন নানান প্রশ্নের গোলকধাঁধায়।
.
অথচ শরীয়াহর ব্যাপ্তি কিন্তু শুধু হারাম-হালাল নির্ধারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না; বরং শরীয়াহর উদ্দেশ্য হলো এমন এক বাস্তবতা তৈরি করা, যেখানে এই হারামগুলো এবং সেগুলোর প্রয়োজনই থাকবে না। কিন্তু শরীয়াহর পরিপূর্ণ ছবিটা আজ আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। সেটা নিয়ে আলোচনা করার, বোঝার, ভাবার ফুরসত হয় না আমাদের। তাই আজ অনেকেই শরীয়াহ বলতে বোঝেন নিছক কিছু বাধানিষেধ, আর শাস্তিকে। বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার, ইত্যাদির মতো অল্প কিছু ক্ষেত্রে আমাদের শরীয়াহর কথা মনে পড়ে। অথচ শরীয়াহ একটি পূর্ণাঙ্গ, পরিপূর্ণ ব্যবস্থা। কুরআন, সুন্নাহ, খালিফাহগণের আমল, ইসলামী শাসনের হাজার বছরের ইতিহাস এবং আলিমগণের ইস্তিমবাতে যে গভীর ও বিস্তৃত আলোচনা পাওয়া যায়, তার দিকে তাকালে যে কেউ বিস্মিত হয়ে যাবে।
.
কীভাবে আহলুল হাল্লি ওয়াল আক্বদ এবং শাসক নির্বাচন করা হবে তার বাস্তবসম্মত পদ্ধতি শরীয়াহতে দেয়া আছে। শাসকও যেমন-তেমন হলে হবে না। এমন শাসক হতে হবে যে, মানুষের কাছে গৃহীত হবে এবং ইসলামী আইন অনুযায়ী সাধারণ মুসলিমদের প্রতি তাঁর চুক্তি অনুযায়ী আমল করতে বাধ্য থাকবে।
.
শরীয়াহ সুদকে নিষিদ্ধ করছে এবং বিভিন্ন ধরনের অংশীদারীকে হালাল করেছে। শারীয়াতে (ডিউটি, ট্যাক্স) হারাম করা হয়েছে। অন্যদিকে খারাজ, উশর, ওয়াকফ ইত্যাদি থেকে অর্থায়নের পদ্ধতি দেয়া হয়েছে।
.
শরীয়াহতে মালিকানার ব্যাপারে বিস্তারিত নির্দেশনা এসেছে। পানি, জ্বালানি এবং চারণভূমির জনমালিকানার (public ownership) কথা এসেছে।
.
শরীয়াহতে একচেটিয়া ব্যবসা (মনোপলি) আর দলবেঁধে লুটপাট করার পুঁজিবাদের (ক্রোনি ক্যাপিটালিযম) উত্থানের পথ বন্ধ করার উপায় বলে দেয়া হয়েছে। শরীয়াহতে নির্দেশিত হয়েছে যুদ্ধ ও শান্তি-বিষয়ক কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলনীতি।
.
শরীয়াহ আমাদের শিক্ষা দিয়েছে দুর্বল এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্তদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার, যদিও তারা কাফির হয়।
.
কিন্তু আমরা এগুলো নিয়ে কথা বলি না। আসলে শরীয়াহতে কত বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া আছে সেটা আমাদের অধিকাংশেরই অজানা।
.
শরীয়াহ আমাদের এ কাজগুলো করার শিক্ষা দেয় আখিরাতের জন্য। শরীয়াহ আমাদের দেয় ইবাদতের এক পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ ধারণা, যা দুনিয়াবি কোনো ব্যবস্থায় পাওয়া যায় না। নিজের সাথে সৎ হয়ে শরীয়াহর এ বিস্তৃতি ও বিধানগুলোর দিকে তাকালে যে কেউ আল্লাহর এই আয়াতের যথার্থতা ও গভীরতা অনুধাবন করবে,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। [তরজমা, সূরা মা’ইদা, ৩]
.
আমাদের এক সমৃদ্ধ, স্বয়ংসম্পূর্ণ ভান্ডার আছে। কিন্তু আমরা সেটা ভুলে বসে আছি। সেটা ফেলে সমাধান খুঁজছি নানা তন্ত্রমন্ত্রে। শরীয়াহ নিয়ে এবং শরীয়াহর এ দিকগুলো নিয়ে আজ কথা বলা হয় না। স্কুলে এগুলো পড়ানো হয় না; বরং স্কুলে শিশুদের জাহিলিয়্যাহর শিক্ষা দেয়া হয়। অথচ শরীয়াহ থেকে উৎসারিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয় এবং তা থেকে তারা উপকৃতও হয়।
.
শরীয়াহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে, সমাধান দিয়েছে। সেই সাথে অবিচার বন্ধ করা এবং নির্দেশনা দেয়ার জন্যে সীমাও ঠিক করে দেয়া হয়েছে শরীয়াহতে। প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে ইজতিহাদের জায়গাও।
.
শরীয়াহ নিয়ে ছয়টি ভুল ধারণা
আয়নাঘর
ড. ইয়াদ আল-কুনাইবি
.
আয়নাঘর বইটি অনলাইনে অর্ডার করার লিঙ্ক -
১। ওয়াফিলাইফ - https://tinyurl.com/ybadov8v

- Asif Adnan
Next Post Previous Post