থানকুনি পাতা ও আমলকীর উপকার এবং খাওয়ার নিয়ম

 থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকার এবং সাথে আমলকী ও মরিচের উপকার  

খুব সাহস করেই খেয়ে ফেললাম এই থানকুনি পাতা। আমার বাপ দাদারাও খায়নি তাই আমিও আগে কখনো খাইনি। স্বাভাবিকভাবে স্বাদ-ও অজানা ছিলো। তাছাড়া ঝোঁপঝাড়ে বা খেতের আশেপাশে যত্ন ছাড়াই এসব হয় বলে এতো পাত্তা দেইনি কখনো। কিন্তু হঠাৎ করে ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করতে করতে থানকুনি পাতার উপকারিতা পেয়ে গেলাম।

ওয়েব সাইটের লেখাটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলি। আর অবাক হই! হায়। এই অযত্ন অবহেলিত লতাগুল্মোরা এতো গুণবতি!? তবুও প্রথম দিন মুখে দিতে ভয় ভয় করছিল। অচেনা পাতা, যদি লেখক ভুল তথ্য দেয়? যদি খেয়ে মরে যাই?! শেষমেশ সেই পাতার সাথে এড করি কয়েকটা আমলকি, তুলসি আর একটা মরিচ আর একটু লবণ। ও হ্যা, পরে অবশ্য কয়েক বিচি তেঁতুলও যোগ করে দেই। আর আল্লাহর নাম নিয়ে খেতে আরাম্ভ করি। আলহামদুলিল্লাহ! এতো সুস্বাদু ছিলো যা জ্বিভ’ই ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে।

বাঙালি ( আমিও কিন্তু বাঙালী) দেখে আমি মুগ্ধ। ঘরে ডায়মন্ড সেট থাকলেও বিদেশিদের গলার এমিটিশনের হার দেখে চমকে উঠে। তাই তো থানকুচির মতো সহজলোভ্য অথচ উপকারি উদ্ভিদকে অবমূল্যায়ন করে।
যাইহোক,ছবিতে যে উপাদান গুলো নিয়েছি সংক্ষেপে সেগুলোর উপকারিতা উল্ল্যেখ করলামঃ

থানকুচি পাতা খেলে কি হয়?

থানকুচি পাতার উপকারিতা

১.নিয়মিত থানকুনির রস খেলে ত্বক সুন্দর থাকে।
২.চুলের গোঁড়া মজবুত হয়।
৩.চুল পড়া বন্ধ হয়।
৪.জ্বর, পেটের পিড়া, আমাশয়, আলসার, বাতের ব্যথা বিভিন্ন অসুখের ওষুধ হিসেবে এটির ব্যবহার রয়েছে।

৫. থানকুনি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
৬.সংবহনতন্ত্রের স্থায়ীভাবে স্ফীত ও বর্ধিত শিরা কমাতে সহায়তা করে।
৭. থানকুনি পাতা চামড়া মসৃণ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
৮. গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর হয়।

৯.কাশি প্রকোপ কমে।
১০.অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমায়।
১১. অনিদ্রা সমস্যা দূর করে।
১২.মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১৩.ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।

আমলকির উপকার

অনেকেই অনেকগুলো জানেন তবুও এবার আমলকির ২০ উপকারিতা সম্পর্কে বলি-
১. আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
২. এটি চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।
৩. আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এ ছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে।
৪. এক গ্লাস দুধ বা পানির সঙ্গে আমলকি গুঁড়া ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারলে অ্যাসিডিটির সমস্যা কমবে।
৫. আধা চূর্ণ শুষ্ক ফল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে। খাবারের সঙ্গে আমলকির আচার হজমে সাহায্য করে।
৬. প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সঙ্গে মধু মিশে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
৭. আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ, চোখ চুলকানি বা পানি পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়।
৮. আমলকি চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৯. এ ছাড়াও প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত শক্ত থাকে।
১০. আমলকির টক ও তেঁতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকির গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন।
১১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
১২. কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায় আমলকি অনেক উপকারী।
১৩. ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার জন্য আমলকীর জুস উপকারী।
১৪. আমলকি শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, পেশি মজবুত করে।
১৫. এটি হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। আমলকির আচার বা মোরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে।
১৬. শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে আমলকি।
১৭. লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভাল রাখে।
১৮. এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বুড়িয়ে যাওয়া ও সেল ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
১৯. সর্দি-কাশি, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বেশ ভাল কাজ করে।
২০. ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
আমলকি নিয়ে আরেকটা কথা! যারা কিডনি রোগীর তাঁরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমলকি খাবেন।


কাঁচা মরিচ খাওয়ার উপকারঃ কাঁচা মরিচের উপকারিতা

১.গরম কালে কাঁচা মরিচ খেলে ঘামের মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা থাকে।
২.প্রতিদিন একটি করে কাঁচা মরিচ খেলে রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমে যায়।
৩.নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা কমে যায়।
৪.কাঁচা মরিচ মেটাবলিসম বাড়িয়ে ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে।
৫.কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন আছে যা কার্ডোভাস্ক্যুলার সিস্টেম কে কর্মক্ষম রাখে।
৬.নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৭.কাঁচা মরিচ রক্তের কোলেস্টেরল কমায়।
৮. কাঁচা মরিচে আছে ভিটামিন এ যা হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
৯.কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা মাড়ি ও চুলের সুরক্ষা করে।
১০.নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে নার্ভের বিভিন্ন সমস্যা কমে।
১১. প্রতিদিন খাবার তালিকায় অন্তত একটি করে কাঁচা মরিচ রাখলে ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়ে না।
১২. কাঁচা মরিচে আছে ভিটামিন সি। তাই যে কোনো ধরণের কাটা-ছেড়া কিংবা ঘা শুকানোর জন্য কাঁচা মরিচ খুবই উপকারী।
১৩. কাঁচা মরিচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরকে জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে।
লেখা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আরো উপকারিতা জানতে চাইলে গুগুল মাম্মাকে জিঙ্গেসা করুন।
ধন্যবাদ!
লেখাঃ মেহের আফরোজ এর পোস্ট (মিম্বার (Minbar)
Next Post Previous Post