বিপদের সময় নিরাপত্তার দোয়া ঃ বিশেষ করে মেয়েদের জন্য
বেশ কয়েকদিন ধরে চারদিকে নারীদের শ্লীলতাহানীর করুন কাহিনী শুনছি, যা বেদনাদায়ক। এ ঘটনার পর থেকে আমি কিছুটা ভিত সন্ত্রস্ত, নিরাপত্তাহিনতায় ভুগতেছি।
দুই তিন দিন আগের ঘটনা-
মাগরিবের পর আমি বাসা থেকে বের হয়েছি। আমার গন্তব্যস্থল একটি হাসপাতাল, সেখানে ব্যক্তিগত জরুরী কাজে যাচ্ছি।বাসা থেকে প্রায় ১০-১৫ মিনিটের দুরত্ব। তাই একাই যেতে সাহস করেছিলাম। আমি তো পুরো দস্তর বোরকা পড়ে আছি, মুখটাও আবৃত। ভয় কিসের!ভাবনা এমনই ছিল। কিন্তু ঘটনা অন্য দিকে মোর দিতে গিয়েও আল্লাহ রক্ষা করেছেন।
আমি বড় হয়েছি ঢাকা শহরে। ঢাকা শহর আর জেলা শহরের সন্ধার চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। করোনার মধ্যে এই প্রথম একা বের হচ্ছি সন্ধায়। এই জেলা শহরে নতুন এসেছি। পথ ঘাট আমার অচেনা। আমার গন্তব্য স্থলের দুরত্ব সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট ছিল।২০ মিনিট হাটার পর আমার হুশ হল, আমি পথ ভুল করেছি।
দেখতে পাচ্ছি, সামনে দুইটা গরু। ঘুট ঘুটে রাস্তা। আর সুন সান নিরবতা। এতক্ষন পথে লোকজন থাকলেও, এই রাস্তায় কয়েকটা লোক ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। আর এই লোকগুলো আমার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে আছে। হার্টবিট সেকেন্ডে ৭০ এর যায়গায় ১০০ হয়ে দুপ দাপ শব্দ শুরু হচ্ছে।
আমার অর্ধাংগকে ফোন করার সাহস পাচ্ছিনা। সে শুনলে ব্যপারটা হেসে উড়িয়ে দিবে, বলবে ১০ মিনিটের রাস্তা হারায় ফেলছো! ২০২০ সালে এসে সন্ধায় একা চলতে এত ভয়। হাজার হাজার মেয়ে একা চলে কই কিছু হয়! সে আছে হাসপাতালে কর্মরত। তাই আমাকে একাই যেতে হচ্ছে।
আসলেই কি কিছু হয়না? স্বামীর সাথে বেরিয়ে তো মেয়েরা নিরাপদ না। আর আমি সম্পুর্ন বোরকায় ঢাকা। তারপরেও কিছু লোক আড়চোখে তাকিয়ে আছে। চাহুনিতে ভাল কিছু নেই। আছে নোংরামি।
রাস্তায় দাড়িয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। রাগ লাগতেছে কেন একা বের হলাম। এখন কি করব?
এমন পরিস্থিতে আমার মনে পড়ে সুরা রাদ আয়াত ১১ তে আছে মানুষের সাথে কয়েকজন ফেরেশতা থাকে পাহারাদার হিসেবে, যারা যাবতীয় বিপদাপদ থেকে একজন মুমিনকে রক্ষা করে।
"মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হেফাযত করে।"
( সুরা রাদ, আয়াত-১১)
এই ফেরেশতাদের একজন ফজরের সময় আসে, আরেকজন আসরের সময় এসে পালা বদল করে।
আজকে ফজর পড়েছি? হ্যা, মাগরিব নামাজও পড়েছি? হ্যা।
কিন্তু মাসনুন আমল গুলো কি করেছিলাম?
আমাদের নবী ( সাঃ) আমাদের সুরক্ষার জন্য সকাল, সন্ধার কিছু আমল করতে বলেছেন। যাবতীয় বালা মসিবত থেকে বাচার জন্য।
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
"আল্লাহ্র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।"
[আহমাদ ২/২৯০, নং ৭৮৯৮; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৫৯০; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৮; আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ৩/১৮৭; সহীহ ইবন মাজাহ ২/২৬৬; তুহফাতুল আখইয়ার লি ইবন বায, পৃ. ৪৫।]
আয়াতগুলো জপতে শুরু করলাম, আয়াতুল কুরসি ( বাকারাহ ২৫৫ নং আয়াত), সুরা বাকারাহর শেষ দুই আয়াত( ২৮৫-২৮৬), তিন কুল( ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়লাম।
মনে সাহস পেলাম,
গুগুল ম্যাপটা চালু করে, লোকেশন সেট করে, দিক নির্নয় করে হাটা শুরু করলাম। দিক নির্নয় করার পর বুঝলাম। আমি ভুলে ডান দিকে মোর না দিয়ে বামে মোর দিয়েছি। ডিরেকশন অনুযায়ী হাটা শুরু করলাম।
একটা সময় মোবাইল বলতেছে, আর মাত্র ২ মিনিট! আলহামদুলিল্লাহ, গন্তব্যস্থলে পৌছে যাই নিদিষ্ট সময় পরে।
কাহিনীটা সম্পুর্ন সত্য এবং আমার মত বোকা টাইপ মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনি । যদিও আমার পথ হারিয়ে যাওয়াতে কোন বিশেষ বিপদ ঘটেনি আল্লাহর রহমতে। কিন্তু আমি মনে করি আমাদের মেয়েদের আরো সচেতন হওয়া উচিত। ১৪০০ বছর আগের পৃথিবী এখন নেই।
যুবায়র ইব্নু আদী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আনাস্ ইব্নু মালিক (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং হাজ্জাজের নিকট থেকে মানুষ যে জ্বালাতন ভোগ করছে সে সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করলাম। তিনি বললেন, ধৈর্য ধর। কেননা, মহান প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবার পূর্ব পর্যন্ত (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে) তোমাদের উপর এমন কোন যুগ অতীত হবে না, যার পরের যুগ তার চেয়েও বেশী খারাপ নয়। তিনি বলেন, এ কথাটি আমি তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৮৮)
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭০৬৮]
আমরা পর্দা করেও এখন নিরাপদ নই। আমাদের মেয়েদের একা জার্নিতে সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে রাতে এবং নির্জন এলাকায়।
আর মাসনুন আমল গুলো নিয়মিত করা উচিত।সালাত ঠিক মত পড়তে হবে, আর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল।
حَسْبِيَ اللّٰهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
"আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।"
( সুরা তওবা, আয়াত-১২৯)
একমাত্র আল্লাহই রক্ষা করবেন। ইনশাআল্লাহ। নিজের সুরক্ষার জন্য আমল করি, দুয়া ও ইস্তিগফার করি। আমিন।
"আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সে তাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। অতএব আল্লাহরই ওপর মুমিনরা যেন তাওয়াক্কুল করে।"
( সুরা মুজাদিলা, ৫৮ নং সুরা, আয়াত-১০)
।। সুরক্ষা।।
- মাহফুজা শারমিন।
১ অক্টোবর ২০২০।