বাংলা ভাষায় সীরাত সিরাতুন নবী সাঃ | মহানবী সাঃ এর জীবনী | সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) PDF Download
সিরাত এর পর্ব গুলো Naseehah Official এর পেজ থেকে নেওয়া। যাবতীয় ক্রেডিট তাদের।
এক টুকরো সিরাত (১-১০) মহানবী সাঃ এর জীবনী
.সিরাত বলতে বোঝায় পদচিনহ (footsteps) । সোজা বাংলায় যদি বোঝাতে চাই তাহলে বলা যায় সিরাত মানে জীবনি । যে কারো জীবনি ।
তবে মুলত রাসুল (সঃ) জীবনি বোঝাতেই সিরাত শব্দ বেশী ব্যাবহৃত হয়ে থাকে। সিরাত কে মাগাজিও(যুদ্ধ) বলা হয়।
যাকে দুনিয়ার সব কিছুই চাইতে ,সবাই চাইতে বেশী ভালোবাসতে হবে , যিনি আমাদের জন্য এসেছিলেন রহমত স্বরুপ ।
যার মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানু তায়ালা এই দ্বীন কে পরিপূর্ন করেছেন । সেই আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) ব্যাপারে আমরা কতটুকু জানি?
এই দ্বীনকে বোঝার জন্য কি আমাদের জন্য আবশ্যক নয় সিরাত অধ্যায়ন করা? সেই অনুধাবন থেকেই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ।
সিরাত থেকে কিছু ঘটনা সামনে তুলে ধরার চেস্টা করব , যাতে আমাদের মধ্যে আগ্রহ জন্মে রাসুল (সঃ) এর ব্যাপারে বিস্তারিত জানার ।
যাতে করে আমরা আগ্রহ পাই সিরাত অধ্যায়নের।আল্লা
- বাংলা ভাষায় সীরাত চর্চা
- সীরাত পাঠের প্রয়োজনীয়তা
- সিরাতে ইবনে কাসির
- সিরাতুন্নবী বনাম মিলাদুন্নবী
- সিরাতুন নবী সাঃ
- সিরাতে রাসুলুল্লাহ সা
- সিরাতুন নবী pdf

সিরাতুন নবী সাঃ
পর্ব ১ঃ
বদরের প্রান্ত
বদর যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল , কুরাইশদের বানিজ্যিক কাফেলার আক্রমনের মাধ্যমে । তারই প্রতিশোধ নিতে , কুরাইশরা তাদের বড় বড় যোদ্ধা , অস্ত্র ,উট আর নর্তিকিদের নিয়ে হাজির হয়েছে ।
সংখ্যার তারা অনেক । অন্যদিকে মুসলিমরা মাত্র ৩১৩ জনের মত । রাসুল (স) দেখলেন , কুরাইশ ঢিলার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে । এই দেখে আল্লাহ্র রাসুল(সঃ) দুয়ার নিমগ্ন হলেন ।
“হে আল্লাহ! এই কুরাইশরা এসেছে, তাদের সকল ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিকতা নিয়ে তোমার রসূলকে মিথ্যা প্রমাণ করতে। হে আল্লাহ্ তুমি যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূর্ন করো । হে আল্লাহ্ , প্রত্যুষ্যের তুমি তাদের কে ধংশ করো।'
রাসুল (সঃ) রাতের বেলায় তন্ময় বিভোর হয়ে এই দুয়া করতে লাগলেন । সেটা ছিলো জুময়ার রাত । ১৭ রামদান ।
এক পর্যায়ে রাসুল (স) এর কাধ থেকে চাদর পড়ে গেলো । তিনি টের ও পেলেন না । আবু বকর (রা) তার পেছনেই ছিলেন । তিনি বললেন ,
"হে আল্লাহর রাসুল(স) আপনি আল্লাহ্ পাকের কাছে মিনতি-অনুনয় জানানোয় ক্ষান্ত হোন । তিনি আপনাকে যে প্রতিশ্রতি দিয়েছেন তা অবশ্যই পুরন করবেন । "
.
সুবাহান'আল্লাহ আবু বকর (রা) আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) কে বলছেন হে রাসুল্লাহ আপনি নিজের উপর দয়া করুন । অবশ্যই আল্লাহ্ আপনাকে সাহায্য করবেন । তিনি যে ওয়াদা দিয়েছেন তা অবশ্যই পুরন করবেন ।
.
এবার বদর থেকে একটু পিছিয়ে যাই ,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) এর থেকে মক্কার একটি ঘটনা শুনি ,
রাসুল (সঃ) কাবা ঘরের পাশে সলাত আদায় করছিলেন।
আবু জাহেল তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সেখানে বসা ছিলেন । এমন সময় একজন অন্যজনকে বললঃ কে আছো অমুকের উটের নাড়িভুড়ি এনে মোহাম্মদ যখন সেজদায় যাবে, তখন তার পিঠে চাপিয়ে দিতে পারবে?
.
এরপর ওকবা ইবনে আবু মুঈত উটের নাড়িভুড়ি এনে অপেক্ষা করতে লাগলো।
নবী কারীম (সাঃ) সেজদায় যাওয়ার পর সেই নাড়িভুড়ি তাঁর উভয় কাঁধের উপর ঝুলিয়ে দিল। আ
মি সব কিছু দেখছিলাম, কিন্ত কিছু বলতে পারছিলাম না। কি যে ভালো হত হায় যদি আমার মধ্যে তাঁকে রক্ষা করার শক্তি থাকতো।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেনঃ এরপর দৃর্বৃত্তরা হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পরছিলো।
এদিকে রাসুল (সাঃ) সেজদায় পরে রইলেন মাথা তুললেন না। হযরত ফাতেমা (রা) খবর পেয়ে ছুটে এসে নাড়িভুড়ি সরিয়ে ফেললেন।
এরপর রাসুলে আকরাম (সাঃ) সেজদা হতে মাথা উঠালেন। এরপর তিনবার বললেনঃ“আল্লাহুম
এরপর রাসুলে আকরাম (সাঃ) নাম উল্লেখ করে বদদোয়া করলেন, হে আল্লাহ আবু জাহেলকে পাকড়াও করো, ওতবা ইবনে রবিয়া, শায়রা ইবনে রাবিয়া, ওলিদ ইবনে ওতবা, উমাইয়া ইবনে খালফ, এবং ওকবাইবনে আবু মুঈতকে পাকড়াও করো। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরো কয়েকজনের নাম বলেছিলেন কিন্ত হাদিস বর্ণনাকারী সেসব নাম ভুলে গেছেন।
.
আবার ফিরে যাই বদরের প্রান্তে যুদ্ধ তখন শেষ হয়ে গিয়েছে । আল্লাহ্ ইচ্ছায় মুসলিমরা জিহাদের মাধ্যমে জয় লাভ করেছে । কুরাইশদের লাশ গুলো এদিকে সেদিক পড়ে আছে ।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) দেখতে পেলেন কিছু লাশ বদরের কুয়োয় কাছে পড়ে আছে । সেই লাশ গুলো ছিলো সেই সব ব্যাক্তিদের যাদের নাম ধরে আল্লাহ্র রাসুল(সঃ) বদ-দোয়া করেছিলেন ।
বাংলা ভাষায় সীরাত
.পর্ব ২ঃ
মদিনা,
রাসুল (সঃ) স্বপ্নের মাধ্যমে জানতে পারলেন , কুরাশাইদের বানিজ্যিক কাফেলা শাম থেকে ফিরছে ।
মুলত কুশাইশদের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার বড় একটা অংশ ছিলো এই বানিজ্যিক কাফেলা । এই কাফেলায় ছিলো সমগ্র কুরাইশদের অংশ ।
আবু সুফিয়ান ছিলেন এই কাফেলার অধিনায়ক । কুরাইশের শক্তি অন্যতম উৎস ছিলো এই বানিজ্য আর বানিজ্যিক পুজি ।
তাদের এই বিত্ত বৈভব , অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষমতা তাদের অহংকার , তাদের দাম্ভিকতাকে বারিয়ে দিয়েছিল ।
আর এই শক্তি এই দাম্ভিকতার বসেই তারা আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) আর মুসলিমদের উৎপীড়ন নিপীড়ন করে মুসলিমদের মক্কা থেকে তারিয়ে দিয়েছিল।
.
রাসুল (সঃ) সাহাবাদের বললেন "তোমরা বের হও আল্লাহ্ হয়ত এই মাল তোমাদের হস্তগত করে দেবেন । " কোন কোন সাহাবা বলবেন ,আমাদের সাওয়ারি তো মদিনার বাইরে গ্রাম এলাকায় ।
আমরা কিভাবে বের হবো? সেই সময় মদিনার বাইরে থেকে সাওয়ারি এনে এরপর আবু সুফিয়ানের কাফেলা আক্রমণের মত সময় ছিলো না।
কাজেই রাসুল (সঃ) তাদের নিয়েই বের হলেই যাদের পক্ষে বের হওয়া সম্ভব । কিন্তু আবু সুফিয়ান অতান্ত বুদ্ধিমত্বার পরিচয় দিয়ে কাফেলা নিয়ে পালাতে সক্ষম হন ।
.
মক্কা,
আবু সুফিয়ানের পাঠানো দূত ইতিমধতে মক্কার এই খবর পৌছে দিয়েছে , যে মুহাম্মদের বাহিনী (সঃ) আবু সুফিয়ানের কাফেলায় আক্রমন করেছে ।
সে এমন ভাবে খবরটিকে বারিয়ে প্রচার করলো যে , কুরাইশদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল । সে তার উঠের নাক কান কেটে ফেলল , উটের হাওদাটি উলটো করে বসল, নিজের পরিধেয় জামা ছিড়ে চিৎকার করে জানালো "হে কুরাইশ গোত্র ! বিপদ !বিপদ ভয়াবহ বিপদ , মোহাম্মদ আর তার সঙ্গীরা তোমাদের বানিজ্যিক কাফেলা পাকরাও করতে চায়!"
.
এই খরব শুনে মক্কার কুফফাররা জরুরি পরামর্শ সভার আয়োজন করল , এদিকে রাসূলুল্লাহর (সা.) ফুপু আতিকার দেখা স্বপ্ন আবু জাহলের কানে পৌছালো । তিনি দেখেছিলেন ,
.
যে একটা লোক উটে চড়ে দ্রুত মক্কার দিকে ধেয়ে আসছে এবং সে মক্কার অধিবাসীদেরকে চিৎকার করে ডাকছে। তার উট প্রথমে কাবাঘরের উপর, তারপর মক্কার এক পাহাড়ের চূড়ার উপর গিয়ে দাঁড়াল। তারপর সে কুরাইশদের সাবধান করে বলল, ‘তিনদিনের মধ্যে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে!’
.
এ কথা বলে লোকটি একটি পাথর নিয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে ছুঁড়ে মারলো। পাথরটি মক্কার মাটিতে পড়ামাত্র বিস্ফোরিত হলো। মক্কার প্রতিটি ঘরে সেই বিস্ফোরণ থেকে ছিটকে আসা বস্তু এসে আঘাত হানলো।
.
এই স্বপ্নের কথা শুনে আবু জাহল চটে গেলো , সে ঔদ্ধন্তের সঙ্গে বলল , শোন আব্বাস! তোমাদের বংশের পুরুষরা তো নবুয়াতের দাবী করেছে , এখন কি মহিলারাও করতে শুরু করেছে? আমরা তিনদিন অপেক্ষা করব , তিনদিনে যদি এই স্বপ্ন না ফলে তাহলে আমরা লিখে দেব তোমাদের পরিবারের চেয়ে মিথ্যাবাদি আর কেও নেই ।
আবু জাহল মুলত তার দাম্ভিকতা আর ঔদ্ধত্বের চরম সীমায় পৌছে গিয়েছিল । যে চাচ্ছিলো যেভাবেই কুরাইশরা যেন মুসলিমদের উপর আক্রমন করে । এমনি কি আবু সুফিয়ান যখন আরেক দুতের মাধ্যমে খবর পাঠালেন যে , কাফেলা এখন আশংখা মুক্ত ।
এরপরেও আবু জাহল দমল না সে ঘোষনা করল "লাতের কসম ! আমরা বদরের প্রান্তে উপস্থিত না হয়ে কিছুতেই ফিরব না। আমরা
সেখানে মদ পান করব , উট জবাই করব , আমাদের নর্তকীরা সেখানে নাচবে । গোটা আরব আমাদের উল্লাস দেখবে । আমাদের এই দম্ভ কখনই শেষ হবে না।"
.
বদরের প্রান্ত,১৭ই রামাদান,
আব্দুর রহমান বিন আউফ(রাদি) এর কাছে এসে হঠাত এক তরুণ জিজ্ঞেস করল , হে চাচা! আবু জাহেল কোথায়? আমিও তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তার কাছে তোমার কি দরকার?
সে উত্তর দিলঃ আমি শুনেছি, সে মহানবী (স) কে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ‘আমি যদি তাকে দেখতে পাই, আমার ছায়া তাকে অতিক্রম করবে না, যতক্ষণ না আমি তাকে হত্যা করি কিংবা সে আমাকে হত্যা করে।’
.
তিনি বলেছেন, ‘আমি তার এ কথায় অভিভূত হয়ে গেলাম!’
কিছুক্ষণ পর আরেকজন তরুণ এসেই একই কথা জিজ্ঞেস করলো ।
তারপর আমি লক্ষ করলাম যে, ‘আবু জাহল সামান্য দূরে লোকজনদের মাঝে বিচরণ করছে। আমি তাদেরকে বললাম, ঐ হলো সেই ব্যক্তি যাকে তোমরা খুঁজছো।"
.
যুদ্ধ তখন শেষ হয়েছে রাসূলুল্লাহ (স) বললেন- “কে আছ এমন যে, দেখে আসবে আবু জাহলের অবস্থা কি হল।
.
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ তখন সৈন্যদের মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে আবু জাহেলকে খুঁজে পেলেন।
.
আবু জাহল তখন মৃত প্রায় অবস্থায় ছিলো। এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ তার বুকের উপর উঠে বসলেন। আবু জাহল চোখ খুলে দেখলো আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ তার বুকের উপর।
এতে আবু জাহল অপমানবোধ করে বললো, 'তুমি মক্কায় রাখাল ছিলে না?’
.
ইবনে মাসউদ বললেন, ‘হে আল্লাহর দুশমন, আমি অবশ্যই মক্কাতে রাখাল ছিলাম।
.
আবু জাহল বললো- হে উটপালক! তুমি অনেক বড় স্থানে চড়ে বসেছো। এত বড় সম্মানিত উচ্চাসনে এর আগে কেউ বসেনি।
ইবনে মাসউদ বললেন, ‘আজকে কার দিন? আজকে কে বিজয়ী হয়েছে? আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল(স) বিজয়ী হয়েছেন।
সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
.পর্ব ৩ঃ
এক,
বদরের যুদ্ধের কিছু পরের ঘটনা। একদিন উমার (রা) দেখতে পেলেন , আল্লাহ্র রাসুল (স) আর আবু বকর (রা) কাদছেন । উমার (রা) ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করেলন , আপনারা কেনো কাদছেন আমাকে বলুন। যদি কান্নার কোন কারন হয়ে থাকে তাহলে আমিও কাদব , যদি কারন না থাকে তাহলে আপনারা কাদছেন এজন্য কাদব ।
.
আল্লাহ্র রাসুল (স) ও আবু বকর (রাদ) এর কান্নার কারন জানতে হলে আমাদের অল্প একটু পেছনে যেতে হবে ,
আল্লাহর রাসুল (স) সাহাবাদের নিয়ে জরুরি পরামর্শ সভা ডাকলেন । বদরের বন্দি কাফেরদের নিয়ে কি করা যায়? সাহাবারা মাশোয়ারা দিতে লাগলেন ,
.
আবু বকর (রাদি) বললেন ,
এরা তো আমাদের চাচাত ভাই ,আত্বীয়স্বজন। আপনি এদেরকে ফিদিয়া অর্থাৎ মুক্তিপন নিয়ে ছেড়ে দিন । এতে যা কিছু আসবে তাতে আমাদের কাজে লাগবে । এমনো হতে পারে আল্লাহ্ এদের হেদায়াত দেবেন এবং এরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে ।
.
উমার (রা) বললেন ,
আপনি আমার আত্বীয় উমুকে আমার হাতে তুলে দিন আমি তার শিরচ্ছেদ করব । একই ভাবে আকিল ইবনে আবু তালিব কে আলীর হাতে তুলে দিন তিনি তার শিরচ্ছেদ করবেন । হামযার ভাই ওমুকে হামযার হাতে তুলে দিন সে তার শিরচ্ছেদ করবে। এতে করে আল্লাহ্ তায়ালা বুঝতে পারবেন কাফেরদের প্রতি আমাদের মনে কোন সমবেদনা নেই ।
.
আল্লাহ্র রাসুল (স) আবু বকর (রাদি) মত গ্রহন করলেন । কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানু তায়ালার পছন্দ ছিলো উমার (রাদি) এর মত । আল্লাহ্ বলেন ,
وَاللّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
নবীর পক্ষে উচিত নয় বন্দীদিগকে নিজের কাছে রাখা, যতক্ষণ না দেশময় প্রচুর রক্তপাত ঘটাবে। তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর, অথচ আল্লাহ চান আখেরাত। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। [ সুরা আনফাল ৮:৬৭ ]
لَّوْلاَ كِتَابٌ مِّنَ اللّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمْ فِيمَا أَخَذْتُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
যদি একটি বিষয় না হত যা পূর্ব থেকেই আল্লাহ লিখে রেখেছেন, তাহলে তোমরা যা গ্রহণ করছ সেজন্য বিরাট আযাব এসে পৌছাত। [ সুরা আনফাল ৮:৬৮ ]
.
দুই,
বদরের যুদ্ধ শেষ । মুসলিমরা একে একে কাফেরদের বন্ধি করে নিয়ে যাচ্ছে। হঠাত মুসয়াব ইবনে উমাহর দেখলেন , তার ভাই কে আবু আযিয কে আবুল ইয়াসার (রা) বন্দি করে রেখেছে । মুসয়াব (রা) তাকে দেখে বললেন , একে ধরে রাখো তার মায়ের অনেক ধন সম্পদ। তিনি অনেক অর্থ দিয়ে একে ছাড়িয়ে নেবে ।
.
আবুল ইয়াসার (রা) অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন , আমার প্রতি আপনার এ কেমন ওশিয়ত । সে তো আপনার ভাই !
.
মুসয়াব (রা) উত্তরে বললেন , আল্লাহর কসম ! আমার ভাইয়ের সঙ্গে ভাতৃত্বের চেয়ে তোমার সঙ্গে ভাতৃত্বের টান আমার অনেক বেশী ।
.
পর্ব ৪ঃ
এক,
তায়েফ,
মক্কা থেকে ৬০ মাইল দূরে । রাসুল (সঃ) পায়ে হেটে তায়েফে পৌছেলেন । দ্বীনের দাওয়াহ পৌছে দিতে । প্রথমে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) তায়েফের গোত্রপতিদের নিকট গেলেন , তাদের ইসলামের দাওয়াত দিলেন । তারা সকলেই ফিরিয়ে দিল ।
.
একজন বলে উঠল, তুমি যদি আল্লাহ্র রাসুল হও তবে কাবার পর্দা ছিড়ে দেখাও !
.
আরেজন বলে বলল , আল্লাহ্ কি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে পেলেন না?
.
.
তৃতীয়জন বলল , আমি তোমার সাথে কথা বারাতে চাই না । তুমি যদি আল্লাহ্র নবী হও তাহলে তোমার কথার বিরোধিতা করা আমার জন্য বিপদজ্জনক হবে ,আর যদি আল্লাহর নামে মিথ্যা রটাও তাও আমার জন্য বিপদজনক হবে ।
.
রাসুল (সঃ) তাদের বললেন ঠিকাছে,কিন্তু তোমরা এই ব্যাপারগুলো গোপন রাখ । রাসুল (সঃ) তায়েফে দশ দিন থাকেন গোত্রের নেতাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যায় । তারা প্রত্যকে প্রত্যাখ্যান করে এবং আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) তাদের এলাকা থেকে চলে যেতে বলে । এরা এতেই ক্ষ্যান্ত হয় না । তারা আল্লাহ্র রাসুলের পেছনে দুর্বৃত্ত বালকদের লেলিয়া দেয় । তারা আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) কে হাশি তামাশা করে এবং তার দিকে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে।
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) রক্তাক্ত অবস্থায় খুব মনঃকস্ট নিয়ে মক্কায় ফিরলেন । এমন সময় জিবরীল (আঃ) হাজির হলেন , পাহাড়ের ফেরেস্তাদের নিয়ে ।
.
তারা বলল , হে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) আপনি যদি চান তাহলে আমরা তাদের দুই পাহাড়ের মাঝে পিষে দেব । আল্লাহর রাসুল (সঃ) বললেন না । আমি আশা করি তাদের বংশধরদের মধ্য থেকে আল্লাহ্ এমন কাওকে সৃষ্টি করবে তারা আল্লাহ্র ইবাদাত করবে এবং তার সাথে কারো শরিক করবে না ।
.
দুই,।
তায়েফের প্রান্তর !
তায়েফের দূর্গকে অবরোধ করে রাখা হয়েছে ।
.
এতদিন ইসলাম এর আলো চারদিকে ছড়িয়ে গেছে । মক্কার মুশরেকরা আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) এর কাছে পরাজিত হয়েছে। বাইতুল্লাহ থেকে লাত উজ্জার মূর্তি গুলোকে উপরে ফেলা হয়েছে । আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) হুনাইয়ের যুদ্ধের পর তায়েফের দিকে অগ্রসর হন ।
.
রাসুল(স) সাহাবাদের নিয়ে তায়েফের দূর্গ অবরোধ করেন । কিন্তু তায়েফবাসী উপর থেকে বৃষ্টির মত তীর নিক্ষেপ শুরু করে। মুসলিমদের থেকে পাল্টা প্রতিউত্তর হিসেবে মিনজানিক নিক্ষেপ করা হয় । এতে করে তায়েফের দূর্গের প্রাচীর অনেকটা ভেংগে যায় । এরপরেও তায়েফবাসী তীর নিক্ষেপ করতে থাকে । রাসুল (সঃ) আংগুর গাছ পুরুয়ে ফেলার নির্দেশ দেন । এতে তায়েফবাসী বিচলিত হয়ে আল্লাহ্ ও আত্বীয়তার দোহায় দিয়ে বিরত থাকার অনুরোধ করেন । আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) তাদের অনুরোধ গ্রহন করেন এবং অবরোধ অব্যাহত রাখেন ।
.
মুসলিমদের পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হয় , যে ক্রীতদাস দূর্গ ছেড়ে চলে আসবে তাকে মুক্ত করে দেয়া হবে । এই ঘোষণার পর ৩০ জনের মত দূর্গ ছেড়ে চলে আসে। অবরোধ দীর্ঘ্য হলেও তারাও আত্বসমার্পন করল না । তারা প্রায় এক বছরের খাবার মজুদ রেখছিল । রাসুল (সঃ) নওফেল বিন বিন মাবিয়ার সাথে পরামর্শ করেন , তিনি বলেন যে শেয়াল তার গর্তে ঢুকেছে যদি অবরোধ দীর্ঘায়ীত করেন তবে তাদের পাকরাও করতে পারবেন , আর যদি ফিরে যান তারা কোন ক্ষতি করতে পারবে না। একথা শুনে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বললেন আমরা ফিরে যাব । কিন্তু সাহাবারা তায়েফ জয় করা ছাড়া ফিরে যেতে চাচ্ছিলেন না । রাসুল (সঃ) সাহাবাদের ভিন্ন মত দেখে বললেন ঠিকাছে কাল সকালে যুদ্ধ চলো । কিন্তু তাতেও বিশেষ কোন লাভ হয় না। অতপর আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) অবরোধ শেষ করে ফিরে আসেন ।
.
পর্ব ৫ঃ
মুসলিমদের সাথে ইয়াহুদিদের শান্তিচুক্তি চলছে । এরই মাঝে একদিন আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) সাহাবাদের ডেকে এক ইয়াহুদির ব্যাপারে বললেন , "কে আছে যে তাকে হত্যা করতে পারবে? "
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) এ আহভান শুনে মুহাম্মদ বিন মাসলামা দাঁড়িয়ে গেলেন ।
.
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ বলেন, তাহলে আমাকে অনুমতি দিন তার সাথে যে কোন ধরণের কথা বলার।
.
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বললেন , তুমি বল (যা তোমার বলা প্রয়োজন)।
এই ইয়াহুদির নাম ছিলো কাবা বিন আশরাফ। বিখ্যাত কবি । শাতীমের রাসুল । সে তার কবিতার মাধ্যমে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) কে গালী দিত , কুৎসা রটাতো । মুসলিম নারীদের নিয়ে অস্লিল কবিতা রচনা করত । মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য উসকে দিত ।
মুহাম্মদ বিন মাসলামা (রাঃ) আরো কয়েকজন সাহাবাকে নিয়ে কাব বিন আশরাফ কে হত্যার পরিকল্পনা করলেন। তাদের মধ্যে ছিল , আব্বাদ বিন বিশর, আল হারিস বিন আওস, আবু আবস বিন হিবর এবং কা’ব বিন আশরাফের দুধ ভাই সালকান বিন সালামাহ।
গোপন পরিকল্পনা অনুযায়ী মুহাম্মদ বিন মাসলামা (রাঃ) গিয়ে উপস্থিত হলেন কাবের বাড়িতে । গিয়ে আল্লাহ্র রসুলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন,
.
-এই ব্যক্তি দান সাদাকার নামে মানুষের অর্থ কড়ি নেয়া ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না, আর এটা আমাদেরকে আজ মারাত্নক কষ্টকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
-এ কথা শুনে কা’ব বিন আশরাফ বলে যে, সমস্যার আর দেখেছ কি, আল্লাহ্র কসম সে তোমাদেরকে আরও ভয়াবহ সমস্যায় ফেলবে।
– মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ তার উত্তরে বলেন যে, এতে কোন সন্দেহ নেই, তবে যেহেতু আমরা একবার তার অনুসারীর খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছি, অতএব তার শেষ না দেখে ছাড়ছি না। যাই হোক শোন, আমি তোমার কাছে এসেছি কিছু অর্থ ধার নেয়ার জন্য।
-সে বললো, ঠিক আছে তা দেয়া যাবে, তবে বন্ধক হিসেবে কী রাখবে?
– তিনি বললেন, তুমিই বল তুমি কী বন্ধক চাও? ,
এরপর কাব বলল , "তোমার নারী ও সন্তানদের আমার কাছে বন্ধক রাখো ।"
.
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ বললেন, আমরা কিভাবে তোমার কাছে আমাদের নারীদেরকে রাখতে পারি অথচ তুমি হলে আরবের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম সুপুরুষ, তাছাড়া এমন কাজ করলে লোকেরা আমাদেকে ছিঃ ছিঃ করবে! আমাদের সন্তানদেরকে একথা বলে লোকেরা অপমান করবে যে, আমরা সামান্য কিছু ঋণের বিনিময়ে তাকে বন্ধক রেখেছিলাম! আমরা বরং তোমার কাছে আমাদের অস্ত্র গুল বন্ধক রাখতে পারি ।
.
কাব বিন আশরাফ এতে রাজি হয়ে গেলো ।
একই ভাবে , সালকান বিন সালামাহ ও আবু নায়লা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করে এবং তার কাছে অস্ত্র বন্ধকের কথা বলে ।
.
অবশেষে , অবশেষে তৃতীয় হিজরির রবিউল আউয়াল মাসের ১৪ তারিখ রাতের বেলায় সাহাবারা অপারেশন এর জন্য বের হোন । কাবের দুধ ভাই সালকান বিন সালামাহ (রা) গিয়ে তাকে ডাকেন। কাব বেরিয়ে আসে। সাহাবারা সুকৌশলে তাকে গল্পের ছলে আস্তে আস্তে ফাকা জায়গায় নিয়ে আসেন। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) ,
-আরে তোমার মাথা থেকে তো অনেক সুন্দর ঘ্রাণ আসছ !আমি একটু শুঁকে দেখতে পারি?
কাব দম্ভভরে উত্তর দেয়ঃ আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। শুকে নাও।
এরপর তিনি তার মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন।
.
তারপর তিনি আবার বললেন, ‘আমাকে আবার শুঁকবার অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর।'
.
সাহাবারা তরবারির আঘাতে তার মাথাকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলেন । অসতর্ক ভুলবশত তাদের একজন সাথী হারিস বিন আওস তাদেরই তলোয়ারের আঘাতে আহত হন এবং তার রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তারা বাকিউল গারকাদ নামক স্থানে এসে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর ধ্বনি দেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের তাকবীর শুনেই বুঝে ফেলেন যে তারা আল্লাহ্র শত্রুকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। তারা আল্লাহ্র রসূলের কাছে এলে তিনি তাদেরকে বলেন তোমাদের চেহারা উজ্জল হোক! জবাবে তারাও বলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ আপনার মোবারক চেহারাও উজ্জ্বল হোক।
.
পর্ব ৬ঃ
এক,
বনু কায়নুকার বাজার ,
তখনো ইয়াহুদিদের সাথে মুসলিমদের শান্তিচুক্তি বহাল । হঠাত করে একজন মুসলিম বোনের আত্বচিৎকার শোনা গেলো । তার আত্বচিৎকার শুনে এক মুসলিম ভাই এগিয়ে আসলেন । সব শুনে ঝাপিয়ে পড়লেন এক ইয়াহুদির উপর ।বনু কায়নুকার ইয়াহুদিরাও ঝাপিয়ে পড়ে সেই ভাইকে শহিদ করে ফেলে ।
.
এই সংবাদ রাসুলুল্লাহ (সঃ) কানে পৌছলে, তার ধৈয্যের বাধ ভেঙ্গে গেলো । তিনি মদিনার শাষনভার আবু লোবাবা (রাদি) এর নিকট সোপার্দ করে নিজেই বেরিয়ে পড়ুলেন বনু কায়নুকা অভিমুখে । ইয়াহুদিরা মুসলিম সৈন্য বাহিনীর আগমন দেখে দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল । রাসুল (সঃ) তাদের কে অবরোধ করে রাখলেন । অবেশেষে আল্লাহ্ তাদের অন্তরে ভয় ঢেলে দেন । তারা মুসলিমদের কাছে আত্বসমার্পণ করে এই শর্তে যে , তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) যে সিদ্ধান্ত দেবেন তারা তাই মেনে নেবে । তাদের জানমাল ও স্ত্রী ,সন্তানদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সঃ) সিদ্বান্ত তারা মেনে নেবে । রাসুল (সঃ) সাহাবাদের নির্দেশ দেন ইয়াহুদিদের বেধে ফেলতে ।
.
দুই,
মুনাফেক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই রাসুল (সঃ) এর দরবারে উপস্থিত , তিনি আনুনয় বিনয়নয় করে বলেন তার মিত্র বনু কায়নুকাকে ছেড়ে দিতে । কেননা তারা তাকে রক্ষা করেছিল । রাসুল(স) তার এ কথার কোন জবাব দিলেন না । সে আবার অনুরোধ করল , রাসুল ( সঃ) তার দিকে থেক মুখ ফিরিয়ে নিলেন । এবার সে রাসুল (সঃ) এর আস্তিন ধরে ফেললো । আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) রেগে গেলে , তার মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো , বললেন " তোমার জন্য আমার আফসোস হচ্ছে , তুমি আমাকে ছেড়ে দাও । " কিন্তু মুনাফেক নেতা তার অনুরোধ অব্যাহত রাখে, সে বলে আপনি আমার অনুরোধ না রাখা পর্যন্ত আপনাকে আমি ছাড়ব না। চারশত খালী দেহের যুবক , তিনশত বর্ম পরিহিত যুবক যারা আমাকে নানা বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে , তাদের সকল কে আপনি একে একে হত্যা করবেন? আল্লাহ্র কসম সময়ের আবর্তনের ভয়ে আমি অতান্ত ভীত।
.
অবেশেষে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) মুনাফেক নেতার পীড়াপীড়ি তে বাধ্য হলেন , তাদের ছেড়ে দিতে । কিন্তু সিধান্ত দিলেন তারা মদিনার আশেপাশে থাকতে পারবেনা। ইয়াহুদিরা যতটা পারল তাদের ধন সম্পদ নিয়ে সিরিয়ার দিকে চলে গেলো । তাদের বাকি ধনসম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। রাসুল (সঃ) তার মধ্যে নিজের জন্য তিনটি কামান , তিনটি তলোয়ার, দুটি বর্ম ও তিনটি বর্শা নিজের জন্য রাখলেন এবং গনিমতের মাল সংগ্রহের দায়িত্ব কাব বিন আশরাফকে হত্যাকারী মুহাম্মদ বিন মাসলামা (রাদি) এর নিকট ন্যাস্ত করলেন ।
.
ইয়াহুদিরা সিরিয়ার দিকে নিজেদের ঘাটি গাড়ে । পরবর্তিতে উমার (রা) তাদের সেখান থেকেও বহিষ্কার করেন । তারা বলে উঠে তোমার রাসুল আমাদের এখানে থাকতে দিয়েছে আর তুমি কিনা আমাদের বহিষ্কার করছে? একথা শুনে উমার (রা) বললেন , আমি রাসুল (সঃ) এর আদেশ ই পালন করছি তিনি বলেছেন জাজিরাতুল আরব থেকে ইয়াহুদিদের বহিষ্কার করো ।
.
কি ছিলো সেই ঘটনা , কি ঘটেছিল সেদিন সেই সাহাবিয়াতের সাথে? যার জন্য বনু কায়নুকার প্রত্যেককে তাদের আবাস্থল থেকে বহিষ্কার করা হয় ?
.
বনু কায়নুকার বাজারে তিনি কিছু জিনিস বিক্রি করতে আসেন। তিনি জিনিসগুলো বিক্রি করেন। এরপর এক ইহুদি স্বর্ণকারের কাছে যান এবং তার সামনে বসেন। স্বর্ণকার তাঁর চেহারার ঘোমটা খুলে ফেলতে চায়; কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানান। স্বর্ণকার শয়তানি চতুরতার আশ্রয় নেয়। সে কৌশলে মহিলার [মাথার] কাপড়ের একটি কোণা তাঁর পিঠের কাপড়ের সঙ্গে বেঁধে দেয়। মহিলাটি যখন উঠে দাঁড়ান, তাঁর মুখের কাপড় সরে গিয়ে চেহারা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এই ছিলো সে আত্বচিৎকার , যা ইয়াহুদিদের জাজিরাতুল আরব থেকে বহিষ্কার করেছিল ।
.
পর্ব ৭ঃ
তৃতীয় হিজরি, গ্রীষ্মকাল
তখনও মদ নিষিদ্ধ হয় নি ,
.
ছালিত ইবনে নোমান এর নঈম ইবনে মাসুদের সাথে একটি মদের আড্ডার দেখা হয়ে যায় । নঈম ইবনে মাসুদ তখনও মুসলিম হন নি । ছালিত ইবনে নোমান মুসলিম । নেশার ঘোরে নঈম ইবনে মাসুদ তার কাছে কুরাইশদের বানিজ্যিক কাফেরলার টপ সিক্রেট রোড বলে দেন । মুসলিমদের ভয়ে কুরাইশরা তাদের আগের পথ দিয়ে বানিজ্যে যাবার সাহস পাচ্ছিল না। কেননা মুসলিমদের সাথে সমুদ্র উপকুলবাসীদের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো । এদিকে এভাবে বসে থাকাও তাদের পক্ষে সম্ভব না। কারন তাদের পুজি শেষ হয়ে যাবে। তাদের জীবিকা নির্ভর করত মুলত দুই কাফেরলার উপর । গ্রীষ্মকালে সিরিয়া ও শীতকালে আবিসিনিয়া । এজন্য তারা নতুন পরিকল্পনা করে , তারা সমুদ্র উপকুলের পথ বাদ দিয়ে, ইরাকের রাস্তা ধরবে। তারা সফওয়ান এর হাতে এই কাফেলার ভার তুলে দেয় । আসওয়াদ ইবনে আব্দুল মোত্তালেব সফওয়ানকে বলে ,
.
"তুমি সমুদ্র উপকুলের পথ ছেড়ে ইরাকগামী পথ ধরো । এ পথ অনেক ঘোরা । নজদ হয়ে সিরিয়ায় যেতে হবে ।"
কিন্তু এই পথ কুরাইশদের পরিচিত ছিলো না । এজন্য তারা বকর ইবনে ওয়াইল গোত্রের ফোরাত ইবনে হাইয়ান কে পথ প্রদর্শক হিসেবে নিয়োগ করে ।
.
তারা যে জন্য এত পরিকল্পনা এত সতর্কতা অবলম্বন করছিল । কিন্তু সেই খবর তারা আল্লাহ্র রাসুল থেকে চেপে রাখতে পারল না। তিনি ছালিত ইবনে নোমান এর থেকে কুরাইশদের নতুন সিক্রেট রোডের কথা শুনে , যায়েদ ইবনে হারেশা (রাদি) এর নেতৃত্বে একশত ঘোড় সাওয়াবের বাহিনী প্রেরন করেন কুরাইশদের কাফেলা আক্রমণ করতে । যায়েদ ইবনে হারেশা (রাদি) দ্রুত বেরিয়ে পড়েন । কারদাহ নামক জায়গায় কুরাইশদের কাফেলার দেখা পেয়ে যান। আকস্মিক আক্রমনে তারা হতবুদ্ধি হয়ে যায় । তারা তাদের সব জিনিস পত্র রেখে পালিয়ে যায় । ব্যাবসার বিভিন্ন মালামাল মুসলিমদের হস্তগত হয় যার পরিমান ছিলো প্রায় একলাখ দেরহামের কাছাকাছি । ফোরাত ইবনে হাইয়ান কে পথ প্রদর্শক হিসেবে নিয়োগ করা হয় । তিনি আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) এর হাতে ইসলাম গ্রহন করনে ।
.
পর্ব ৮ঃ
মক্কা ,
বদর যুদ্ধে মুসলিমদের হাতে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছে। সে-সময়টা ছিলো ভয়াবহ বেদনা ও কষ্টের। কিন্তু তারা সবার জন্যে কান্না ও শোকপ্রকাশ নিষিদ্ধ করেছিলো। তাদের কান্না ও শোকপ্রকাশ মুসলমানদের হাস্যরসের বিষয় হতে পারে ভেবেই তারা এসব নিষিদ্ধ করেছিলো। আবু সুফ্য়ান কসম খেলেন-বদর যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার পূর্বে তিনি নারী স্পর্শ করবেন না এবং গোসল করবেন না।
.
রমযান মাসে বদর যুদ্ধ হয়েছিলো। যিলহজ মাসে আবু সুফ্য়ান মদিনার দিকে গেলেন। রাতের বেলা হাইয়া বিন আখতাবের বাড়িতে গিয়ে দরজায় টোকা দিলেন। কিন্তু সে দরজা খুলতে অপারগতা জানালো। এরপর তিনি সালাম বিন মুশকামের বাড়িতে গেলেন। সালাম বিন মুশকাম ইহুদিদের নেতা এবং তাদের কোষাগারের খাজাঞ্চি ছিলো। সে আবু সুফ্য়ানের জন্যে ঘরের দরজা খুলে দিলো। তাঁকে আপ্যায়ন করলো এবং মদিনার খবরাখবর দিলো। পরের দিন আরিদ এলাকায় আবু সুফ্য়ানের দল হঠাৎ অবতীর্ণ হয় এবং মুসলমানদের কয়েকটি খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেয়। দুজন মানুষকে সেখানে পেয়ে হত্যা করে। আগুন-প্রজ্জ্বলন
.
এই অভিযানকে ‘যাতুস সাওয়িক’ বলা হয়। কিন্তু আবু সুফ্য়ানের কাছে তাদের এই হামলা প্রতিশোধ বলে বিবেচিত হয় নি।এই হামলায় তাদের অন্তরের জ্বালা মোটেও মেটে নি । তাঁর সঙ্গে যে-কাফেলা ছিলো তারা বেঁচে গিয়েছিলো। আবু সুফ্য়ান মক্কায় পৌঁছলে সাফওয়ান বিন উমাইয়া, আবদুল্লাহ বিন আবু রবিয়া ও ইকরামা বিন আবু জাহ্ল তাঁর কাছে সমবেত হলো। তারা আবু সুফ্য়ানকে বললো, ‘এই কাফেলায় যতো ব্যবসায়ী আছে সবার সম্পদ একত্র করে আপনার হাতে তুলে দেবো। এই কাফেলা সবসময় আপনার অধীন থাকবে-যাতে মুহাম্মদ ও তাঁর সঙ্গীদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারেন’। আবু সুফ্য়ান, ইকরামা, সাফ্ওয়ান পরবর্তী যুদ্ধে বিজয় বা বদর যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে সম্পদ জমা করতে লাগত ।
.
এরপর কুরাইশরা গোত্রে গোত্রে গিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য উদ্ভুধ করতে লাগল।সবাইকে এক পতাকা তলে সমবেত করল । কুফফারদের জৌট তৈরি হলো । এভাবে বছর পূর্ন হতে না হতেই কুরাইশদের প্রস্তুতিপূর্ন হলো । এভাবে তাদের তিন হাজারের মত সৈন্য সংখ্যা দাড়ালো। তারা সাথে ১৫ জন সুন্দরি মেয়ে নিলো । যাতে করে তাদের নিরাপত্বার জন্য বীরত্ব দেখনোর মনোভাব কাজ করে ।তারা তিন হাজার উট আর দুই শো ঘোড়া নিয়ে মদিনার দিকে অগ্রসর হতে লাগল। আবু সুফিয়ান ছিলো সৈন্য দলের নেতা । আর ঘৌড় সাওয়ার বাহিনীর দায়িত্ব দেয়া হলো খালিদ বিন ওয়ালিদ কে।
মদিনা,
আব্বার (রাঃ) কুরাইশদের এ অভিযানের খবর দুত মারফত প্রেরন করলেন রাসুল (সঃ) এর কাছে ।এই খবর গোপন রাখার নির্দেশ দেয়া হলো । সবাই কে নির্দেশ অস্ত্র রাখার নির্দেশ দেয়া হলো । এমনকি নামাযের সময়েও অস্ত্র কাছে রাখা হতো । কয়েকজন আনসার সাহাবিকে রাসুল (সঃ) এর নিরাপত্ত্বায় নিযুক্ত করা হলো । মদিনায় প্রবেশ পথেও কয়েকজন কে নিয়োগ করা হলো , যাতে করে শত্রুদের গতিবিধির উপর নযর রাখা যায় । যে কোন ধরনের হামলা মোকাবেলায় এরা প্রস্তুত ছিলেন । ছোট ছোট কয়েকটি বাহিনিকে মদিনার বাইরেই নিযুক্ত করা হলো ।
পর্ব ৯ঃ
একে তো বদরের হারের জ্বালা এর উপর জায়েদ ইবনে হারেসা(রাঃ) কর্তৃক বাণিজ্যিক কাফেলায় আক্রমণের ফলে কুরাইশরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয় । তাই তারা তিন হাজার সৈন্যবাহিনী নিয়ে মক্কার দিকে অগ্রসর হতে থাকে । ইতিমধ্যে দারুল ইসলাম মদিনায় এ খরব পৌছেছে এবং রাসুল (সঃ) মদিনার প্রতিরক্ষা জোরদার করেছেন এবং গোয়ান্দা বাহিনীকে নিয়োগ দিয়েছেন কুরাইশদের আগমনের খরব দেয়ার জন্য তা আমরা আগেই আলোচোনা করেছি ।
.
কুফফাররা ওহুদের পর্বতের নিকট আইনাইন নামক স্থানে ঘাটি গারে । রাসুল (সঃ) এর কাছে এই খরব পৌছাতে রাসুল (সঃ) সাহাবাদের নিয়ে পরামর্শ করতে বসলেন । প্রথমে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) তাদের সামনে একটি স্বপ্নের কথা জানালেন ,
"আল্লাহর শপথ আমি একটি ভালো জিনিস দেখছি । আমি দেখলাম কিছু সংখ্যক গাভীকে জবাই করা হচ্ছে। আমি দেখলাম তরবারির উপর পরাজয়ের কিছু চিনহ । আমি আরো দেখলাম আমার হাত একটি নিরাপদ বর্মের ভেতরে প্রবেশ করেছে ।"
অতপর, রাসুল (সঃ) স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিলেন , গাভীকে জবাই করা হচ্ছে মানে কিছু সংখ্যক সাহাবি শহিদ হবেন । তরবারির উপর পরাজয়ের কিছু চিনহ মানে হচ্ছে আমার পরিবারের কেও শহিদ হবেন। আর নিরাপদ বর্ম মানে হচ্ছে মদিনা শহর ।
এরপর রাসুল (সঃ) , অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা কৌশল এর ব্যাপারে বললেন যে , আমরা মদিনা শহর থেকে বের হবো না । আমরা মদিনার ভেতরের অবস্থান করব । কুফফাররা তাদের তাবুতেই থাকুক । তারা যদি মদিনার প্রবেশ করে তাহলে আমরা মদিনার অলিতে গলিতে যুদ্ধ করব । মহিলারা ছাদের উপর থেকে তাদের উপর আঘাত করবে।
.
রাসুল (সঃ) চেয়েছিলেন কুফফারদেরকে ডেকে এনে চোরাবালিতে ফেলতে।
.
কিন্তু বদরে অংশগ্রহণ করতে না পারা কিছু বিশিষ্ট সাহাবি চাইছিলেন ময়দানে গিয়ে কুফফারদের মোকাবেলা করতে । অনেকে বললেন হে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) আমরা তো এই দিনের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম । আল্লাহ্র কাছে দোয়া করছিলাম । আপনি কাফেরদের মোকাবেলায় এগিয়ে চলুন । ভাববেন না আমরা ভয় পাচ্ছি।
এরমধ্যে রাসুল (সঃ) চাচা হামযা (রাদি) ও ছিলেন । তিনি বললেন, "সেই পবিত্র সত্ত্বার কসম ! যিনি আপনার উপর কোরআন নাযিল করেছেন , আমি মদিনার বাইরে গিয়ে কাফেরদের মোকাবেলা না করা পর্যন্ত খাবার মুখে তুলব না। "
.
রাসুল (সঃ) সাহাবাদের মতামত গ্রহন করলেন । এরপর রাসুল (সঃ) জুমাহর নামায পড়ালেন । এরপর তিনি মুসলিমদের নসিহত করলেন , বললেন ধৈয্য এবং দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে জয় লাভ করা সম্ভব । তিনি মুসলিমদের কাফেরদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হতে বললেন । এ কথার শোনার পর মুসলিমদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো ।
.
আসরের পর আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) প্রস্তুতি গ্রহন করলেন । মাথায় পাগড়ি বাধলেন , নিচে ও উপরে বর্ম পরিধান করলেন এবং তলোয়ার নিয়ে সবার সামনে উপস্থিত হলেন । ইতিমধ্যে , হযরত সাদ ইবনে মায়া'য (রাদি) এবং উসায়েদ ইবনে খুযায়ের (রাদি) সাহাবের বললেন , আপানারা রাসুল (সঃ) কে বাধ্য করলেন ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ করতে । এটা ঠিক হয় নি । আপানরা বিষয় টা আল্লাহ্র রাসুল(স) উপর ছেড়ে দিন। সাহাবারা বুঝতে পারলেন এবং রাসুল (সঃ) কে বললেন ,
"হে আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) আমরা আপনার বিরোধিতা করেছি এটা ঠিক হয় নি । আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করুন ।"
রাসুল (সঃ) বললেন ,কোন নবীর জন্য এটা সমীচীন নয় তিনি যদি একবার অস্ত্র পরিধান করে নেন তা খুলে ফেলার । যতক্ষন না, আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার এবং তার শত্রুদের মধ্যে ফয়সালা করে দেন ।
.
এরপর রাসুল (সঃ) মুজাহিদের বাহিনিকে তিন ভাগে বিন্যাস করেন ,
১) মুহাজিরদের বাহিনীঃ এই বাহিনীর পতাকা মুস'আব ইবনে উমায়ের(রা) হাতে তুলে দেয়া হয় ।
২) আনসারদের বাহিনীঃ এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া হয় উসায়েদ ইবনে খুযায়ের (রাদি) কে।
৩) খাযরাজ গোত্রের বাহিনীঃ হাব্বান ইবনে মুনযের (রা) এই বাহিনীর নেতৃত্বী থাকেন ।
রাসুল (স) এক হাজার মুজাহিদ নিয়ে ওহুদের প্রান্তরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন..........
পর্ব ১০ঃ
এক,
মুনাফেকরা ওহুদের যুদ্ধ থেকে পালাতে দুরভিসন্ধি শুরু করল । তারা মক্কায় ফিরে যেতে চাইল । জিহাদ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে তারা নানা বাহানা দিতে শুরু করল । এমনি কি তাদের এই পিছুটান দেখে বনু হারেসা ও বনু সালামার দল দিধায় পড়ে গেল । কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানু তায়ালা তাদের অন্তরে ইমানকে জাগ্রত করে দিলেন । তারা রয়ে গেল । কিন্তু মুনাফেক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এক অদ্ভুত বাহানা দিয়ে তার দল নিয়ে ফিরে গেল । এব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানু তায়ালা বলেন ,
.
"আর তাদেরকে বলা হল এসো, আল্লাহর রাহে লড়াই কর কিংবা শত্রুদিগকে প্রতিহত কর। তারা বলেছিল, আমরা যদি জানতাম যে, লড়াই হবে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে থাকতাম। সে দিন তারা ঈমানের তুলনায় কুফরীর কাছাকাছি ছিল। যা তাদের অন্তরে নেই তারা নিজের মুখে সে কথাই বলে বস্তুতঃআল্লাহ ভালভাবে জানেন তারা যা কিছু গোপন করে থাকে।" [ সুরা ইমরান ১৬৭ ]
.
দুই,
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) এর পক্ষ থেকে সাহাবাদের প্রতি নির্দেশ এলো তোমরা কাব বিন মালিক (রা) মুরারাহ বিন রাবী আল-‘আমরী (রা) এবং হিলাল বিন উমাইয়া আল-ওয়াকেফী (রা) এর সাথে কথা বলো না। যতক্ষন না আল্লাহ্র থেকে ফয়সালা আসে। এক মুহুর্তের মধ্যে এই তিনজন সাহাবাদের জীবন পাল্টে গেলো । কাব বিন মালিক (রা) বলেন ,
.
"লোকেরা আমাদেরকে এড়িয়ে চলতে লাগল এবং আমাদের প্রতি তাদের আচরণ পরিবর্তন করে ফেলল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে লাগল যে, চিরচেনা দুনিয়া যেন অচেনা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা ৫০ রাত অতিবাহিত করলাম। আমার সাথীদ্বয় নীরব হয়ে ঘরের মধ্যে বসে গেলেন এবং কান্নাকাটি করতে লাগলেন। তবে আমি যুবক ছিলাম। তাই আমি বাইরে বের হয়ে মুসলমানদের সাথে সলাতে যোগ দিতাম এবং বাজারে ঘুরাফিরা করতাম। কিন্তু কেউ আমার সাথে কথা বলত না। আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আসতাম। তিনি যখন সলাতের পর মজলিসে বসতেন, আমি তাকে সালাম দিতাম। আমি মনে মনে বলতাম, আমার সালামের জবাবে তাঁর ঠোঁট নড়ল, কি নড়ল না? তারপর আমি তাঁর সন্নিকটে ছালাত আদায় করতাম। আমি আড়চোখে লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁকে দেখতাম। কাজেই দেখতে পেতাম যে, যখন আমি সলাতে মশগুল থাকি, তখন তিনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। আবার আমি যখন তাঁর দিকে দৃষ্টি দিতাম, তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে আমার প্রতি লোকদের কঠোরতা ও এড়িয়ে চলা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকল।
.
একদিন আমার চাচাত ভাই আবূ ক্বাতাদাহর বাগানের প্রাচীর টপকে তার কাছে আসলাম। সে ছিল আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আমি তাকে সালাম দিলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! সে আমার সালামের জবাব দিল না। আমি তাকে বললাম, হে আবূ ক্বাতাদাহ! আল্লাহর দোহায় দিয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করি, তুমি কি জান না, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-কে ভালবাসি? সে চুপ করে থাকল। আমি আবার আল্লাহর নামে কসম করে তাকে এ প্রশ্ন করলাম। এবারও সে চুপ করে থাকল। আমি তৃতীয়বার তাকে একই প্রশ্ন করলাম। এবার সে জবাব দিল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন’। এটা শুনে আমার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। অতঃপর প্রাচীর টপকে পুনরায় ফিরে এলাম।"
.
চলুন এই ঘটনার কারন আমরা কাব বিন মালিক (রা) এর থেকেই শুনি ,
.
ঘটনা তাবুক যুদ্ধের । সময় টা ছিল ভীষণ গরমের । রাসুল (সঃ) সাহাবাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলে দিলেন । যাতে করে এই বিশাল মরুভূমির পথের জন্য সহজে সাহাবাদের নিজেদের প্রস্তুত করতে পারেন ।
.
কাব বিন মালিক (রা) বলেন ,
.
"আমি যখন তাবূকের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলাম, সে সময়ের চেয়ে অন্য কোন সময়েই আমি অধিক শক্তিশালী ও সচ্ছল ছিলাম না। আল্লাহর কসম! ইতিপূর্বে আমার কাছে কখনো একসাথে দুটো সওয়ারী ছিল না। অথচ এ যুদ্ধের পূর্বেই আমি তা সংগ্রহ করেছিলাম।"
.
রাসূলুল্লাহ (স) এমন এক সময় এ অভিযান শুরু করেছিলেন, যখন ফলমূল পাকার ও গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়ার সময় ছিল। রাসূল (ছাঃ) এবং তাঁর সাথে সকল মুসলমান যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলেন। আমিও প্রত্যহ সকালে তাঁদের সাথে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে থাকি। কিন্তু ফিরে এসে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। শুধু মনে মনে বলতাম, ‘আমি তো যে কোন সময় প্রস্ত্তত হওয়ার ক্ষমতা রাখি। এভাবে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব
.
একদিন সকালে রাসূলুল্লাহ (স) মুসলমানদের নিয়ে রওয়ানা দিলেন। অথচ তখনো আমি কোন প্রকার প্রস্ত্ততি নেইনি। মনে মনে ভাবলাম, ‘দুএক দিন পরে প্রস্ত্ততি নিয়েও তাঁদের সঙ্গে মিলিত হতে পারব’। তারা চলে যাওয়ার পর একদা আমি মসজিদে গেলাম এবং প্রস্ত্ততি নেওয়ার পরিকল্পনা করলাম কিন্তু সিদ্ধান্তহীনভাব
.
অতপর তাবুক যুদ্ধ শেষ করে রাসুল (সঃ) মদিনায় আসলেন । রাসুল (সঃ) নিয়ম ছিল যখনই তিনি সফর থেকে ফিরে আসতেন, প্রথমে মসজিদে যেতেন এবং সেখানে দুই রাকাত সলাত আদায় করতেন। তারপর লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বসে যেতেন। যখন তিনি সলাত শেষ করে (মসজিদে নববীতে) বসে গেলেন, তখন তাবূক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকা লোকেরা আসতে লাগল। তাঁরা হলফ করে নিজেদের ওযর পেশ করতে লাগল। এদের সংখ্যা ছিল আশির ঊর্ধ্বে। বাহ্যিক অবস্থার বিচারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের ওযর কবুল করত তাদের কাছ থেকে পুনরায় বায়াত নিয়ে তাদের মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করলেন এবং তাদের মনের গোপন বিষয় আল্লাহর নিকট সোপর্দ করলেন।
.
কা‘ব (রাঃ) বলেন, ‘আমিও আসলাম তার কাছে। আমি সালাম দিতেই তিনি বিরাগমিশ্রিত মুচকি হেসে বললেন, ‘এস এস’। আমি গিয়ে তাঁর সামনে বসে পড়লাম। অতঃপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি কারণে তুমি পিছনে পড়ে থাকলে? তুমি কি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বাহন ক্রয় করনি’? আমি বললাম হ্যাঁ, ক্রয় করেছি’। আরো বললাম, ‘আল্লাহর কসম! যদি আমি আপনার সামনে না বসে দুনিয়ার অন্য কোন লোকের সামনে বসতাম, তাহলে আমি নিশ্চিত যে, যে কোন ওযর পেশ করে তাঁর ক্রোধকে নির্বাপিত করতে পারতাম। আর আমি তর্কে পটু। কিন্তু আল্লাহর শপথ! আমি জানি, আজ যদি আপনার কাছে মিথ্যা বলে আপনাকে খুশী করে যায়, তাহলে অচিরেই আল্লাহ আপনাকে আমার উপর ক্রুদ্ধ করে দিবেন। আর যদি আজ আপনার সাথে সত্য কথা বলে যাই, তাতে আপনি নাখোশ হলেও আল্লাহর ক্ষমা লাভের আশা করা যায়। আল্লাহর কসম! আমার কোন ওযর ছিল না। আল্লাহর কসম! আমি যখন (অর্থাৎ তাবূক যুদ্ধে) আপনাদের থেকে পিছনে থেকে যাই, তখনকার মত আর কোন সময় আমি ততটা শক্তি-সামর্থ্যে
.
এই ছিল সেই কারন যার জন্য আল্লাহ্ রাসুল (সঃ) কাব বিন মালিক সহ অন্য তিব সাহাবির সাথে অন্য মুসলিমদের কথা বলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাকতে বলেন । অতপর আল্লাহ্ সুবহানু তায়ালা তাদের তাওবা কবুল করেন । আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বলেন ,
.
‘আল্লাহ অবশ্যই অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনছারদের প্রতি যারা তার অনুসরণ করেছিল সংকটকালে- এমনকি যখন তাদের এ দলের চিত্ত-বৈকল্যের উপক্রম হয়েছিল। পরে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। তিনি তো তাদের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু। এবং তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য তা সংকুচিত হয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিল এবং তারা উপলব্ধি করেছিল যা, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নেই, তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন ব্যতীত, পরে তিনি তাদের তওবা কবুল করলেন যাতে তারা তওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও’ (তওবা ১১৭-১১৯)।
.
আর যারা মিথ্যা বাহানা দিয়ে জিহাদ থেকে বিরত থেকেছিল ।তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন,
.
‘তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে অচিরেই তারা আল্লাহর শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের উপেক্ষা কর। সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করবে। তারা অপবিত্র এবং তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ জাহান্নাম তাদের আবাসস্থল। তারা তোমাদের নিকট শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না’ (তওবা ৯৫-৯৬)।
.
#এক_টুকরো_সিরাত
.
চলবে ইনশাআল্লাহ্
- Naseehah Official
এক,
ওহুদের যুদ্ধ তখন শেষ হয়েছে । গুরুতর আহত অবস্থায় একজন ব্যাক্তিকে দেখে সাহাবা অবাক হয়ে গেলেন , তার তো এখানে থাকার কথা নয় ।তার নাম ছিল আমর ইবনে সামেত (রা) । তাকে ইতিপূর্বে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল কিন্তু সে গ্রহন করেন নি । তিনি কিভাবে বা কেনইবা এখানে এলেন?
সাহাবারা তাকে জিজ্ঞেস করলেন ,
আপনি এখানে কেনো এলেন ? রাসুল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসায় নাকি স্বজাতীর শক্তি বৃদ্ধি করতে?
তিনি জবাব দিলেন , আমি রাসুল ( সঃ) এর প্রতি ভালোবাসায় এসেছি । আমি ইমান আল্লাহ ও তার রাসুল ( সঃ) এর প্রতি ইমান এনেছি । রাসুল ( সঃ) এর সমর্থনে যুদ্ধ করতে এসেছি । বর্তমানে কি অবস্থায় আছি তাতো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন । এরপর তিনি ইন্তেকাল করলেন ।
রাসুল (সঃ) কে তার ব্যাপারে বলা হলে তিনি বললেন, সে জান্নাতি।
আবু হোরাইরা (রাদি) বলেন , অথচ তিনি আল্লাহর জন্য এক ওয়াক্ত নামায ও আদায় করেন নি ।
দুই ,
ওহুদের প্রান্তরের আরেক জন্য আহত ব্যাক্তিকে দেখা গেলো । তার নাম ছিলো কোমজান । যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের সাথে লড়াই করেছেন । সাত থেকে আটজন মুশরেক কে নিজ হাতে হত্যা করেছেন । কাফেরদের তরবারি আর তীরের আঘাতে তার দেহ ক্ষত বিক্ষত । এই অবস্থায় তাকে যোফরের মহল্লায় নিয়ে যাওয়া হলো । তাকে সুংবাদ শোনানো হলো । সে বললো , "আরে আমি তো আমার গোত্রের সুনামের জন্য লড়াই করেছি । আমার গোত্রের সুনামের ব্যাপার না থাকলে আমি লড়াই করতাম না ।"
এরপর সে , ব্যাথার যন্ত্রনায় আত্বহত্যা করে ।
রাসুল ( সঃ) কে তার কথা বলা হলে , রাসুল ( সঃ) বলেন , সে জাহান্নামি ।
রাসুল ( সঃ) বলেন ,
‘সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আসাবিয়্যাহর (জাতীয়তাবাদ) দিকে ডাক দেয়, বা আসাবিয়্যাহর কারণে লড়াই করে কিংবা আসাবিয়্যাহর কারণে মৃত্যুবরণ করে।(আবু দাউদ : ৫১২১)
#এক_টুকরো_সিরাত ১১
ইয়াহুদি ধনী ব্যাবসায়ি আবূ রাফি’ ।
.
খাইয়বারের নিকট এক উপত্যকায় তার বাস । কাব বিন আরশাফের সাথে তার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো । সেও কাবের মতই রাসুল (স) কস্ট দিত , গালি দিত । আরেক শাতীম । সে তার জবানের সাথে নিজের সম্পদ ও ব্যয় করত মুসলিমদের বিপক্ষে । মক্কার কুরাইশদের ধন সম্পদ দিয়ে সাহায্য করত ।
.
কাব বিন আশরাফ কে হত্যাকারী সাহাবারা ছিলেন আওস গোত্রের লোক । তাই খাজরাজ গোত্রের সাহাবাদের মনে এই ধারনা উদয় হলো যে , আওস গোত্র রাসুল (স) এর শত্রু কে হত্যা করে যে সোভাগ্য অর্জন করেছে । আমাদের ও এমন কিছু করা উচিত ।
.
আর এই সোভাগ্য অর্জনের জন্য তারা বেছে নিলো আবূ রাফি’ 'কে । রাসুল (স) এর দরবারে হাজির হয়ে তারা , আবূ রাফি’ কে হত্যার অনুমতি চাইল । রাসুল (স) অনুমতি প্রদান করলেন । আব্দুল্লাহ ইবন আতিক , মাসউদ ইবন সিনান , আব্দুল্লাহ ইবন উনায়স, আবু কাতাদা হারিস ইবন রিবঈ এবং খুযাঈ ইবন আসওয়াদ (রা) - কে প্রেরন করা হয় এই গুপ্ত হত্যাকান্ডকে আঞ্জাম দেয়ার জন্য । আব্দুল্লাহ ইবন আতিক (রা) কে দলেন নেতা নেতা মনোনিত করা হয় ।
.
তৃতীয় হিজরির জমাদিউস সানী মাসের মাঝামাঝি সময়ে সাহাবাগন খায়বরের দিকে যাত্রা করেন । আবূ রাফি’ যে দূর্গে থাকত । সাহাবারা সেখানে উপস্থিত হলে আব্দুল্লাহ ইবন আতিক (রা) তার সঙ্গীদের বললেন , তোমরা এখানেই অপেক্ষা করো। আমি ভিতরে প্রবেশের কোন উপায় বের করি । এরপরের বর্ননা আমরা এই সাহাবির মুখ থেকেই শুনি ,
.
যখন আমি দরজার একদম নিকটবর্তী হলাম , তখন কাপর মুড়ি দিয় এভাবে বসে পড়লাম যেমনভাবে মানুষ তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরন করতে বসে। দারোয়ান আমাকে তাদের নিজেদের লোক ভেবে বলল হে আল্লাহর বান্দা ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রবেশ কর। আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দেব।
.
আমি তখন ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে রইলাম। আবূ রাফির নিকট রাতের বেলা গল্পের আসর জমতো। গল্পের আসরে আগত লোকজন চলে গেলে, দাড়োয়ান দরজা বন্ধ করে দিল এবং একটি পেরেকের সাথে চাবিটা ঝুলিয়ে রাখল। এরপর আমি চাবিটার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং চাবিটা নিয়ে দরজা খুললাম। ভেতরে প্রবেশ করে তা বন্ধ করে দিলাম , যাতে লোকজন আমার আগমনের সংবাদ পেলেও তাকে হত্যা করার আগ পর্যন্ত আমাকে ধরতে না পারে ।
.
এ সময় সে একটি অন্ধকার কক্ষে ছেলেমেয়েদের মাঝে শুয়েছিল। কক্ষের কোন অংশে সে শুয়ে আছে আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। তাই আবূ রাফি‘ বলে ডাক দিলাম। সে বলল, কে আমাকে ডাকছ? আমি তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারী দ্বারা প্রচন্ড জোরে আঘাত করলাম।
.
আমি তখন কাঁপছিলাম এ আঘাতে আমি তাকে কিছুই করতে পারলাম না। সে চীৎকার করে উঠলে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসলাম। এরপর পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করলাম, আবূ রাফি’ এ আওয়াজ হল কিসের? সে বলল, তোমার মায়ের সর্বনাশ হোক। কিছুক্ষণ পূর্বে ঘরের ভিতর কে যেন আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে। তখন আমি আবার তাকে ভীষণ আঘাত করলাম এবং মারাত্মকভাবে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললাম। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারিনি। তাই তরবারির ধারালো দিকটি তার পেটের উপর চেপে ধরলাম এবং পিঠ পার করে দিলাম। এবার আমি নিশ্চিতরূপে অনুভব করলাম যে, এখন আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। এরপর আমি এক এক দরজা খুলে নিচে নামতে শুরু করলাম নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলাম। পূর্ণিমার চাদের আলোতে চারিদিক আলোকিত ছিলো । কিন্তু তা স্বত্বেও তাড়াহুড়াতে আমি যখন সিড়ি নামছিলাম সিড়ি শেষ হয়েছে মনে করে নপা রাখতে গিয়ে আমি মাটিতে পড়ে গেলাম । এতা আমার পা ভেংগে গেল । আমি আমার মাথার পাগড়ী দিয়ে পা বেঁধে নিলাম এবং একটু হেঁটে গিয়ে দরজা সোজা বসে রইলাম মনে মনে সিদ্ধান্ত করলাম, তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত না হ আমি এখান থেকে যাব না। ভোর রাতে মোরগের ডাক আরম্ভ হলে মৃত্যু ঘোষণাকারী প্রাচীরে উপর উঠে ঘোষণা করল, হিজায অধিবাসীদের অন্যতম ব্যবসায়ী আবূ রাফীর মৃত্যু সংবাদ গ্রহণ কর। তখন আমি আমার সাথীদের নিকট গিয়ে বললাম, দ্রুত চল, আল্লাহ আবূ রাফিকে হত্যা করেছেন।
.
এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, তোমার পা টি লম্বা করে দাও। আমি আমার পা টি লম্বা করে দিলে তিনি উহার উপর স্বীয় হাত বুলিয়ে দিলেন। এতে আমার পা এমন সুস্থ হয়ে গেল, যেন তাতে কোন আঘাতই পায়নি।