খেলাফত ও গণতন্ত্র এর পার্থক্য খলীফা বনাম প্রেসিডেন্ট বা প্রাইম মিনিস্টার। গণতন্ত্র সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
খলীফা বনাম প্রেসিডেন্ট বা প্রাইম মিনিস্টার। ইসলাম বনাম কুফরি সিস্টেম
খলীফা বনাম প্রেসিডেন্ট বা প্রাইম মিনিস্টার।
•আ'ম্মুর রামাদাহ। মহা দুর্ভিক্ষের বছর। হিজরি ১৮ সালের হজ্জ্বের পরের ঘটনা। তখন খলীফা হযরত ওমর রাদি.-এর শাসনামল।
আকাশে মেঘবিন্দু নেই। সূর্যতাপে আগুন ছড়াচ্ছে। ইতিহাসের ভয়ানক অনাবৃষ্টির ফলে গাছগাছালি মরে সাফ। জমির ফসল পুড়ে ছাই। মাঠে ঘাস নেই। গবাদি পশুগুলো না খেতেখেতে কঙ্কালসার।
বাজারে খাবার নেই। আটা, জবের জন্য মানুষ পাগলপ্রায়। ক্ষুধার যন্ত্রণা সইতে না পেরে দেশের জনগণ অখাদ্যকে খাদ্য হিসাবে খেতে থাকে।
বিষাক্ত বস্তুর বিষক্রিয়ায় জ্যামিতিক হারে মারা যেতে লাগল। এভাবে চলে নয়-নয়টি মাস।
এমন অবর্ণনীয় দুরাবস্থা দেখে খলীফা হযরত ওমর রাদি. পেরেশান। রাজভাণ্ডারে যা ছিল সেগুলো গ্রামাঞ্চলে পাঠাতে লাগলেন।
- গণতন্ত্র বনাম ইসলাম
- ইসলামী গণতন্ত্র কি
- ইসলামী গণতন্ত্রের স্বরূপ কি
উট, গম, জব, তেল প্রভৃতি ত্রাণ হিসাবে বিতরণ করতে থাকলেন। না, বন্টিত ত্রাণের তুলনায় চাহিদা ব্যাপক। আরও প্রচুর সাহায্য দরকার। রাজকোষেও তেমন কিছু নেই।
তিনি সাহায্য চেয়ে তাঁর গভর্নদের কাছে পত্র লিখলেন। মিশরের গভর্নর হযরত আমর বিন আ'স রাদি., কুফার শাসক সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি., বাসরার গভর্নর আবি মুসা আশ'আরী রাদি. এবং শামের গভর্নর মু'আবিয়া বিন আবি সুফিয়ান রাদি.-এর প্রতি রাষ্ট্রীয় নোটিশের মাধ্যমে মাদীনায় সাহায্য পাঠাতে বললেন।
নোটিশ পেয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পাঠিয়ে দেন। মিশর থেকে নদী পথে আসে ত্রাণের বিশাল এক চালান। হযরত ওমর রাদি. সেগুলো পরিবার ভিত্তিক বণ্টন করে বিতরণের ব্যবস্থা করলেন।
ইতোমধ্যে যারা মরুভূমি অঞ্চল ছেড়ে শহরে চলে এসেছেন তাঁদের জন্য খাবার তৈরি করার আদেশ দিলেন। প্রতিদিন চল্লিশ হাজার মানুষের খাবার রান্না হত পাকশালায়।
ইতোমধ্যে যারা মরুভূমি অঞ্চল ছেড়ে শহরে চলে এসেছেন তাঁদের জন্য খাবার তৈরি করার আদেশ দিলেন। প্রতিদিন চল্লিশ হাজার মানুষের খাবার রান্না হত পাকশালায়।
খলীফা হযরত ওমর রাদি. দুর্ভিক্ষ চলাকালীন নিজে শুধুমাত্র জয়তুন তেল দিয়ে তৈরি একধরনের খাবার খেতেন। বাকিসব মুখরোচক খাবার—গোশত, ঘি, বাটার—ত্যাগ করলেন।
তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার ফলে খলীফার পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিত। পেটটা সারাক্ষণ গুড়গুড় করত। তিনি পেটে আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে বলতেন, “যতো পারো গুড়গুড় করো। আমি কিন্তু দুর্ভিক্ষ দূর হওয়ার আগ পর্যন্ত তোমাকে এরচেয়ে উন্নত খাবার দিবো না।"
তিনি দুর্ভিক্ষ চলাকালীন স্ত্রীদের কাছেও যেতেন না। অর্থাৎ তিনি দেশের জনগণের দুর্দশার সমান একটি অংশ নিজে নিজেই ভোগ করেছিলেন। তিনি চাইলে উন্নত খাবার খেতে পারতেন। খান নি।
নিজেকে প্রান্তিক জনগণের কাতারে নিয়ে এসেছিলেন। কারণ কষ্টে না পড়লে কষ্টের কাঠিন্য বোঝা কঠিন।
নিজেকে প্রান্তিক জনগণের কাতারে নিয়ে এসেছিলেন। কারণ কষ্টে না পড়লে কষ্টের কাঠিন্য বোঝা কঠিন।
রাতের বেলায় ছদ্মবেশে বেরিয়ে পড়তেন। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে জনগণের অবস্থা নিজ চোখে দেখতেন। কোথাও কেউ অনাহারে থাকলে নিজে কাঁধে করে খাবার এনে সেখানে পৌঁছিয়ে দিতেন।
কেউ খলীফাকে দোষারোপ করলে তিনি কেঁদে ফেলতেন। সঙ্গেসঙ্গে ঐ ব্যক্তির কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিতেন।
আর বলতেন, "আমার আল্লাহর কাছে খলীফার বিপক্ষে নালিশ দিয়ো না।"
কেউ খলীফাকে দোষারোপ করলে তিনি কেঁদে ফেলতেন। সঙ্গেসঙ্গে ঐ ব্যক্তির কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিতেন।
আর বলতেন, "আমার আল্লাহর কাছে খলীফার বিপক্ষে নালিশ দিয়ো না।"
রাত গভীর হওয়া শুরু করলে তিনি তাঁর কামরায় চলে যেতেন। সেখানে গিয়েই সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। লম্বা সময় ধরে তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন। হুহু করে কাঁদতেন। তারপর একটু ঘুমাতেন। রাতের এক ভাগ বাকি থাকতেই উঠে যেতেন।
তাহাজ্জুদে হারিয়ে যেতেন। দুয়াতে অনেক বেশি কাঁদতেন। ফজরের আজান হলে মাসজিদে চলে আসতেন। জামাতের ইমামতি করে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলতেন,
তাহাজ্জুদে হারিয়ে যেতেন। দুয়াতে অনেক বেশি কাঁদতেন। ফজরের আজান হলে মাসজিদে চলে আসতেন। জামাতের ইমামতি করে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলতেন,
"এই দুর্ভিক্ষ কি খলীফার ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য, নাকি জনগণের পাপের জন্য শুরু হয়ে হয়েছে তা আমরা কেউ জানিনা। চলুন আমরা সবাই আল্লাহর নিকট তওবা করি। দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে দুয়া করি।"
মদীনার উন্মুক্ত মাঠে ইসতিসকা সালাতের আয়োজন করলেন। একদিন-দুদিন-তিনদিন, এভাবে চলতে থাকে সাতদিন। দুয়াতে বলতেন, হে আল্লাহ, তাঁদের রিজিক বাড়িয়ে বাড়িয়ে পর্বত চূড়া পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন। (اللهم اجعل رزقهم على رؤوس الجبال)
তারপর আল্লাহ এমন বৃষ্টিই দিলেন, মুহূর্তেই বৃষ্টি পানিতে সব চুবুচুবু হয়ে যায়। মরা গাছে প্রাণ ফিরে আসে। পোড়া মাটি সবুজ ঘাসের চাদরে ঢেকে যেতে থাকে। পশুগুলো এখন আবার উঠানে দৌড়াতে শুরু করে। শিশুরা চাঞ্চল্য ফিরে পায়। এ এক নতুন পরিবেশ ফিরে আসে মদীনায়। তখন সবার মুখে ছিল, "আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ"
•
মদীনা সনদে দেশ চালানো কি এতো সহজ?
- Nazrul Islam
- গণতন্ত্র কি হারাম
- খেলাফত ও গণতন্ত্র
করোনা ভাইরাস ও লকডাউন | তাওয়াক্কালতু আল্লাহ
গত সপ্তাহে লেবাননে লকডাউন ভেঙে প্রচণ্ডরকম বিক্ষোভ করেছে অভাবী মানুষেরা। কয়েকটি ব্যাংকে আগুনও ধরিয়ে দেয়।
তাদের সাফ দাবি, "আগে খাবার তারপর করোনার চিন্তা।" সে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ৯৫ শতাংশ। অর্থনীতি যা ছিল তাও ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ অভাব সইতে না পেরে লকডাউন ভেঙে রাস্তায় আসতে বাধ্য হয়।
করোনার ভয়ের চেয়ে পেটে প্রতিনিয়ত আঘাত হানা ক্ষুধার মিসাইলের যন্ত্রণা আরও তীব্র। মানুষ তো করোনাভীতি থেকে বাঁচতে গিয়ে অভাবের বিষক্রিয়ায় মরতে চাইবে না।
তাদের সাফ দাবি, "আগে খাবার তারপর করোনার চিন্তা।" সে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ৯৫ শতাংশ। অর্থনীতি যা ছিল তাও ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ অভাব সইতে না পেরে লকডাউন ভেঙে রাস্তায় আসতে বাধ্য হয়।
করোনার ভয়ের চেয়ে পেটে প্রতিনিয়ত আঘাত হানা ক্ষুধার মিসাইলের যন্ত্রণা আরও তীব্র। মানুষ তো করোনাভীতি থেকে বাঁচতে গিয়ে অভাবের বিষক্রিয়ায় মরতে চাইবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে তো কয়েকদিন ধরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে। প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে লকডাউনের বিরুদ্ধে। সরকারের প্রতি আল্টিমেটাম, "লকডাউন তুলে নাও, নতুবা আমাদের চাহিদা পূরণ করো।"
ফ্রান্স, জার্মানি এবং স্পেনেও লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। চিলিতেও আন্দোলন বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। কোন যুক্তিতে তাদের আটকিয়ে রাখা যাবে?
অথচ যারা আজকে বিক্ষোভ শরিক হচ্ছে তারা প্রথমদিকে টিস্যু পেপারের জন্য যুদ্ধ করেছিল। মাস্ক কেনার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছিল। তাহলে আজ কেন লকডাউন ভাঙতে রাস্তায় নামছে? কারণ তাদের কাছে করোনার ভয়ের চেয়ে নিশ্চিত অভাবের যন্ত্রণা অনেকগুণ বেশি।
এভাবে আর কতদিন? আগামী অমুক দিন থেকে করোনা থাকবে না—এমন কথা কেউ কি বলতে পারছে? পারবে? করোনা কি কোনো ব্যক্তির কথায় চলছে?
তাহলে কীসের ভিত্তিতে মাসের পর মাস কর্মজীবী মানুষদেরকে কর্মহীন করে রাখা হচ্ছে? করোনা থেকে বাঁচিয়ে অভাবের তাড়নায় মারতে? যারা সাচ্চা মুসলিম তারাই বা কোন ভিত্তিতে এমন অদ্ভুত লকডাউন নীতিকে সমর্থন করছেন?
করোনা হলেই মারা যায়, যাবে বা যাচ্ছে এমন কোনো রেকর্ড নেই। রেকর্ড আছে, আক্রান্তের মাত্র ২ ভাগ লোক মারা গেছে। যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশ আবার নানাবিধ স্বাস্থ্য জটিলতায় আগে থেকে ভোগছিলেন।
প্রচলিত লকডাউন পৃথিবীর সব দেশে একই পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত করার সুযোগ নেই। জোর করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে অনেক দেশের অর্থনীতিতে এমন ক্ষত তৈরি হবে যা ভালো হওয়ার মতো নয়। আজ সেটাই হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজকোষের চাবি যার হাতে তিনিই বুঝছেন, কতো ধানে কতো চাল। প্রতিদিন দাতাদের কাছে ফোন করে ঋণ চাওয়া হচ্ছে। কেউ দিচ্ছে না।
এই আঁচড়টা কি আপনার আমার গায়ে পড়বে না? অবশ্যই পড়বে। সেই আঁচড়ের যায়গায় গা হয়ে ইনফেকশন হয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে চামড়া ফেঁটে রক্ত পড়া শুরু হয়ে গেছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের। যাদের এখনো শুরু হয়নি তারা সিরিয়ালে আছেন। মানুষের হাতের কামাই মানুষ ভোগ করবেই।
এই অভাব নিশ্চিত মানুষের কামাইয়ের ফল।
ইতোমধ্যে চামড়া ফেঁটে রক্ত পড়া শুরু হয়ে গেছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের। যাদের এখনো শুরু হয়নি তারা সিরিয়ালে আছেন। মানুষের হাতের কামাই মানুষ ভোগ করবেই।
এই অভাব নিশ্চিত মানুষের কামাইয়ের ফল।
মানুষ বা চিকিৎসা বিজ্ঞান যেখানে অসহায় সেখানে ওষুধ একটাই— ।
আর এই তাওয়াক্কুলকে মেডিক্যালি ভাষায় বলে, হার্ড ইমিউনিটি। এছাড়া আর কোনো অপশন আপাতত নেই। ভ্যাক্সিন? সেই আশা বাদ দিন। অনেক চাল চলছে আঁধার ঘরে। সেদিকে না যাওয়াই উত্তম।
Nazrul Islam
আর এই তাওয়াক্কুলকে মেডিক্যালি ভাষায় বলে, হার্ড ইমিউনিটি। এছাড়া আর কোনো অপশন আপাতত নেই। ভ্যাক্সিন? সেই আশা বাদ দিন। অনেক চাল চলছে আঁধার ঘরে। সেদিকে না যাওয়াই উত্তম।
Nazrul Islam