মাহে রমজান | রমজান ও তারাবির গল্প "বুকভাঙা তারাবীহ "

মাহে রমজান |  রমজান ও তারাবির গল্প "বুকভাঙা তারাবীহ "

See More: Ramadan Mubarak Pictures 

রমজান ও তারাবির গল্প - Shamsul Arefin Shakti বুকভাঙা তারাবীহ 

গরম গরম সফর করে এসেছি। জীবন পরিবর্তনের পর পয়লা তারাবীহ। তখন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের হোস্টেল মসজিদে তারাবীহ পড়াতে আসতেন মারকাজুল ইসলামীর ভাইস প্রেসিডেন্ট হযরতের ছেলে। 

প্রথমেই বলে দিয়েছে একটা পয়সা সম্মানী নেবেনা, আমাদের হোস্টেলে কোন ইফতার করবে না, এমনকি এক ঢোক পানিও খাবে না। নিজে এক বোতল পানি সাথে করে নিয়ে আসত আল্লাহর বান্দা। ধীরে ধীরে পড়তো। 

আরেকজন হাফেজ ছিল আমাদের মেডিকেলের এক ছাত্রের ছোট ভাই। বড়ভাই বলে দিয়েছে যে ছোট ভাই কিচ্ছুটি নেবে না। 

আমার জীবনে পড়া সর্বশ্রেষ্ঠ তারাবীহ ছিল। প্রতি দু'রাকাতে হাউমাউ করে কান্না আসত। ইয়া আল্লাহ, জীবনের অর্ধেকটা শেষ, তুমি ভালোবেসে -ধমকে কত আদর করে কত কথা বলেছো, আর আমি একবর্ণও বুঝি না তোমার কথা। 

চিক্কুর দিয়ে কানলে যদি নামায না ভাঙতো, তাহলে মনে হয় চিৎকার দিয়ে কান্দন আসতো।

এরপর বিল্ডিংয়ে পড়েছি, এখন আমাদের বাসায়ই তারাবীহ হয় (দুই ফ্ল্যাটে পুরুষ, আর মহিলা), আল্লাহর রহমতে কুরআনের ৫০% বুঝা যায়, আর ৩০% আঁচ করা যায় কীসের আলোচনা হচ্ছে, রহমতের আয়াতে কহরের আয়াতে কান্নাও আসে। কিন্তু সেই স্বাদ আর আসে না, সেই হাহাকার আর শূন্যতা আসে না। ইমামের একটা প্রভাব (তাছীর) মনে হয় আছে। 

কোনো মসজিদে তো আগেই মিটিয়ে নেয়া হয়। আর কোনো মসজিদে না মিটালেও হাফেজ সাহেবরা জানেনই যে আমাকে কিছু না কিছু তো দেবেই, একটা আশা থাকে।

 কিন্তু আমাদের মসজিদে সেবার দুজনের কেউই কুটোটাও নেবেনা বলে দিয়েছিল। আরও অনেক ছাত্রেররই সেবার অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল।

গত বছর আমার বাসায় আমরা তিনজন পুরুষ, পাশের রুমে তিনজন মহিলা পড়েছিলাম। আমি, খাদিজার মা, আমার কলিগ আর তার বিবি, একজন কোম্পানির লোক, আর আমার বাড়িওয়ালী (আমি যার ভাড়াটিয়া)। একটা ১৫-১৬ বছরের ছেলে পড়ালো, হাফেজ নীরব। শুরুতেই বলেছিল, আমার জিহ্বায় একটু সমস্যা তো, তাড়াতাড়ি পড়তে পারি না। 

আমরা বললাম, তুমি তোমার মত পড়, আমরা আমরাই। দরকার হলে প্রতি ৪ রাকাতে কুরআন খুলে দেখে নাও, দরকার হলে ১৫ মিনিট রেস্ট নিয়ে নাও। খুব আরামে ১৫ দিনে খতম হলো। ২ বা আড়াই ঘণ্টা ধরে, খুব টেশ। আলহামদুলিল্লাহ।

এখনও স্বপ্ন দেখি হাফেজ হবার। সাহাবীরা সব পৌঢ় বয়সেই হাফেজ হয়েছিলেন। সাতক্ষীরার মুফতি আব্দুল্লাহ হুজুর আমার বাসায় এসেছিলেন মাস্তুরাতসহ সফরে। উনি ২ মাসে কুরআন হিফজ করেছেন। মুফতি হবার পর।

 কলেজগেট মসজিদে এক সাথী ছিল, সন্তানদের সাথে একসাথে হিফজ করতেন। আমি কেন পারব না? আমিও পারব ইনশাআল্লাহ। কবুলটা হওয়াটাই কাজ, কেঁদে কেটে চেয়ে নিতে পারলেই কেল্লা ফতে। দুআ হরিয়েন আন্নেরা।

বাসায় আমি, আমার ছেলে হামযা (আসে নাই), আমার ভাতিজা মুহাম্মাদ মিলে তারাবীহ পড়াবো, কেঁদে কেঁদে পড়াব, আর পিছনে পুরো পরিবার কেঁদে কেঁদে পড়বে। 

চার রাকাতের তারবীহায় পরের চার রাকাতে কী আলোচনা আসছে বলে দোব, কী কী শব্দ খেয়াল করতে হবে বলে দোব। মাওলানা যাইনুল আবিদীন সাহেব হাফি: বনশ্রীতে কোথায় যেন তারাবীহ পড়তেন। প্রতি চার রাকআতে কিছু নাস্তা-শরবত-চায়ের সাথে তিলওয়াতকৃত অংশের সংক্ষিপ্ত আলোচনা হতো।


আমাদের অনেকেরই এই রমাদানের পরের রমাদান নসীব হবে না।

 আসুন নিয়ত করি: "এই রমাদানে দেখব তো শুধু কুরআন, শুনবো তো শুধু কুরআন, পড়বো তো শুধু কুরআন, ভাববো তো শুধু কুরআন। " 

হয় নামাযে, নয়তো দেখে দেখে (ওযুসহ), নয়তো মুখস্থ (ওযু ছাড়া), নয়তো অডিও তিলওয়াত, নয়তো কুরআন শিখার পিছনে কাটাবো এবারের রমাদানের প্রতিটি সেকেন্ড ইনশাআল্লাহ। 

আর কিছু না পারলে ওযু করে কুরআনটা খুলে আফসোস করব, চোখের পানি টপ টপ করে পড়বে পৃষ্ঠায়, চোখেমুখে লাগাব, টেনে গন্ধ নেব, বুকের মধ্যে চেপে জড়িয়ে ধরব আমার আপনজনের চিঠি, আমার মনিবের ফরমান।

আমার এবং আপনাদের রমাদান কাটুক কুরআনে কুরআনে। হয়তো এই শেষ সুযোগ।
Next Post Previous Post