বাঁচতে হলে মাফ চাওয়ার ক্ষেত্রে লজ্জা ছাড়তে হবে। | Bangla Islamic Story About Mother and Father

বাঁচতে হলে মাফ চাওয়ার ক্ষেত্রে লজ্জা ছাড়তে হবে।


- মাহ্দী ফয়সাল

mosque

অনেকদিন যাবৎ ভাবছিলাম সারাজীবনে আব্বু-আম্মুর সাথে করা এমন আচরণগুলোর জন্য মাফ চাইব, আমার যে আচরণগুলোতে ওনারা কষ্ট পেয়েছেন।
.
কখনো বদমেজাজ দেখিয়েছি,কখনো ধমক মেরেছি,অসদাচরণ করেছি,কথা শুনিনি, কোন কিছু আদায়ের জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেছি ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাছাড়া আরো কত রকমের অবাধ্যতা তো আছেই।
.
কিন্তু মাফ আর চাওয়া হয়ে উঠছিল না।
দিন-সপ্তাহ-মাস-বছর বয়ে যায়,মাফ আর চাওয়া হয়ে উঠেনা।
কয়েকবার নিয়্যত করে উঠেছি যে এবার মাফ চাইবই। কাছে গিয়েছি
কিন্তু চাওয়া আর হয়ে উঠেনি।
.
কি বলব?কিভাবে বলব??
ইশ আব্বু-আব্বুকে সালাম দিতেই লজ্জাহ্!!
তার উপর হাত ধরে মাফ চাইবো!!
ভাবাই যায়না।
.
আবার মনোপীড়ায়ও ভুগছিলাম।
নবী মুহাম্মাদ (সঃ)-এর সাহাবী আলকামার কথা মনে হত।
সাহাবী থাকা সত্ত্বেও মুমূর্ষাবস্থায় শাহাদাহ্ পাঠে যার জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল স্রেফ মায়ের অসন্তুষ্টির কারণে।
.
না জানি কখন মৃত্যু এসে যায় আর বাবা-মায়ের অসন্তোষের দরূন আমি চির ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাই।
বরবাদ হয়ে যায় আমার সকল আ'মালে সলেহ্।
.
বাঁচতে হলে মাফ চাওয়ার ক্ষেত্রে লজ্জা ছাড়তে হবে।
আমার বাবাই তো, আমার মা'ই তো।





.
তবুও লজ্জা ছাড়ছিল না।
ছাড়ছিলই না।
.
এমন মুমেন্ট খুঁজতে লাগলাম যখন নরমাল্লিই বাবার হাত ধরে কিছু বলা হয়।
যেমন- কোথাও যাওয়ার আগে বিদায় নেওয়ার সময়টা; বিশেষ কোন কাজ শুরু করার আগে দোয়া নেওয়ার সময়টা;
ঈদের দিন মোলাকাত করার সময়টা;
ছুটি কাটিয়ে মাদরাসায় যাওয়ার সময় আব্বু যখন ট্রেনে তুলে দিতে যান তখন।
.
তো একদিন সুযোগ এল। ট্রেন প্লাটফর্মে ডুকছে, এমতাবস্থায় ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে আব্বুর হাত ধরলাম,ভিতরে আমার ধুকধুক বেড়ে গিয়েছে।
কোন কিছু আসতে চাইছেনা মুখে।
মাটির দিকে তাকিয়ে দম বন্ধ করে আল্লাহর নাম নিয়ে শুধু এটুকু বললাম-
"আব্বু!
সারাজীবনে আমার আচরণে আপনাকে অনেকসময় অনেক কষ্ট দিয়েছি।
আমাকে মাফ করে দিন।"
.
এটুকুতেই আব্বুর গলার স্বর চেঞ্জ হয়ে গেল।আমি তো নীচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।কি জানি কি বলে আব্বু।কোন কালক্ষেপণ না করেই আব্বু বললেন,
"সন্তান বাবা-মায়ের অতি প্রিয়।কোন বাবা-মা কখনো সন্তানের অমঙ্গল চায়না।আমিও চাইনা আমার কোন কষ্ট তোমার জীবন সফলতার পথে বাঁধা হোক।আর কোন বাবা এমন হতে পারেনা যে ছেলে তার কাছে মাফ চাইবে আর বাবা মাফ করবেনা।আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি তুমি বলার সাথে সাথেই।"
.
খুব করে মন চাইছিল বাবাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদবো।কিন্তু স্টেশনের ভিড় আর ট্রেনের আগমন আমাকে তখন সে সুযোগ দেয়নি।
.
ট্রেনে বসে বিষয়টা ভাবছিলাম। তখন সেই হাদীসটার কথা মনে পড়লো। যেখানে বলা হয়েছে-
حدثنا الحكم بن نافع، أخبرنا شعيب، عن الزهري، أخبرنا سعيد بن المسيب، أن أبا هريرة، قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ‏ "‏ جعل الله الرحمة مائة جزء، فأمسك عنده تسعة وتسعين جزءا، وأنزل في الأرض جزءا واحدا، فمن ذلك الجزء يتراحم الخلق، حتى ترفع الفرس حافرها عن ولدها خشية أن تصيبه ‏"‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ রাহমাতকে একশ’ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন। আর পৃথিবীতে একভাগ পাঠিয়েছেন। ঐ এক ভাগ পাওয়ার কারণেই সৃষ্ট জগত পরস্পরের প্রতি দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার উপর থেকে পা উঠিয়ে নেয় এই আশঙ্কায় যে, সে ব্যথা পাবে।" [১]
.
দুনিয়ার কোটি কোটি মাখলুককে মাত্র একভাগ রহমত দেয়া হয়েছে।সে ভাগের
কোটি কোটি ভাগের একটু পাওয়ার কারণে আমার বাবা আমার প্রতি এত দয়াদ্র যে, ক্ষমা চাওয়ার পর আর না করতে পারলেন না।শুধু ক্ষমাটা চেয়েছি মাত্র। তাহলে চিন্তা করা যায় আমার আপনার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ'লামীনের দয়া কতো?তিনি কতটা মুখিয়ে আছেন আপন বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য??
নাহ্, আমার মাথায় ধরেনা সেটা।
.
আর বাবা আমাকে এমন কিছু বলে রাখেননি যে,
"আমি দয়া নিয়ে প্রস্তুত! দয়া প্রার্থনা করো দয়া করবো ; ক্ষমা চাও ক্ষমা করবো।"
.
কিন্তু আল্লাহ্ পাক কুরআনে আমাদের বলে রেখেছেন,
"غَافِرِ ٱلذَّنۢبِ وَقَابِلِ ٱلتَّوْبِ"
তিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবাহ্ কবুলকারী।[২]
.
তিনি জানেন আমরা মানুষ ভুল করব।তাই তিনি ঘোষণা দিয়ে ৯৯ভাগ দয়া নিয়ে মুখিয়ে আছেন আমার-আপনার ভুলগুলো ক্ষমা করার জন্য; তাওবাহ্ কবুল করার জন্য।
.
আর এই আয়াতে এটুকুর পরেই রয়েছে-
شَدِيدِ ٱلْعِقَابِ ذِى ٱلطَّوْل
.
অর্থাৎ তিনি কঠোর শাস্তিদানে সামর্থবান।
.
যারা উদ্ধত হবে,অবাধ্যতা করবে,দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিবে,ক্ষমা প্রার্থনা করবেনা তাদের জন্য তিনি কঠোর শাস্তিদাতা।
আল্লাহ্ পাক আমাদের সব্বাইকে ওনার শাস্তি থেকে হিফাজত করুন।(আমিন)
.
আমি আপনাকেই বলছি,
জায়নামাজে বসুন, হাতজোড় করে এভাবে বলুন-
আজকে একটা লিখাতে একটা কুরআনের আয়াত দেখলাম।যেখানে আপনি বলেছেন,আপনি পাপ ক্ষমাকারী ;
আপনি তাওবাহ্ কবুলকারী।সেটা দেখে আপনার কাছে আসলাম।কুরআনে তো কোন সন্দেহ নেই, মিথ্যার লেশমাত্র নেই।
আর আপনি ওয়াদা ভঙ্গকারীও নন।
.
সূতরাং আমি আমার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি আপনার নিকট।
হে পাপ ক্ষমাকারী দয়ার সাগর!
আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।
আমি তাওবাহ্ করছি আপনার নিকট।
হে তাওবাহ্ কবুলকারী বাদশাহ্!
আপনি তাওবাহ্ কবুল করুন।
.
ফুটনোট:-
১.বুখারী:৬০০০
২.সূরাতুল মু'মিন:(৪০:০৩)
Next Post Previous Post